কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না (স্বাস্থ্য পরীক্ষা)
কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না, কোন কোন রোগ সরকারি চাকরির পথে বাধা সৃষ্টি করে, আদৌ কি এমন বিশেষ কিছু রোগ রয়েছে– যে রোগ থাকলে সরকারি চাকরি একদমই হয় না! জানতে হলে পড়তে থাকুন আমাদের আজকের নিবন্ধনটি।
সত্যি বলতে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরির জন্য প্রার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যসম্পন্ন হতে হয়। মূলত কিছু নির্দিষ্ট রোগ বা শারীরিক অসুস্থতা থাকলে সরকারি চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যেমন– দৃষ্টিশক্তির গুরুতর সমস্যা, শ্রবণশক্তির গুরুতর সমস্যা, প্রধান শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, মানসিক রোগ, সংক্রামক জনিত রোগ বা গুরুতর হৃদযন্ত্রের ত্রুটি। এর পাশাপাশি আরও বিশেষ কিছু রোগ রয়েছে যেগুলো থাকলে সরকারি চাকরি একদমই হয় না।
তো কি সমস্যা হলে চাকরি হবে না, সরকারি নিয়োগের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে মূলত কোন কোন বিষয়গুলো দেখা হয়, কি কি রোগ কে চিহ্নিত করে চাকরি দেওয়া হয় না, মাদকাসক্তরা সরকারি চাকরি পায় কিনা, মানে কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না তার সবটাই জেনে নিন আজকের আলোচনার মাধ্যমে।
আরো দেখুন – কি কি কারণে সরকারি চাকরি চলে যায়.
কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না | সরকারি চাকরির স্বাস্থ্য পরীক্ষা
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত যোগ্যতার গুরুত্ব কতটুকু, নিশ্চয় আপনি এ ব্যাপারে জানবেন। কেননা স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন কর্মীর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য শুধু তার ব্যক্তিগত কল্যাণের জন্য নয়, বরং কর্মক্ষেত্রের কর্মক্ষমতা এবং সুরক্ষার জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আর এই কারণেই সরকারি চাকরির প্রায় প্রত্যেকটি সার্কুলারেই সুনির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলির বিষয় উল্লেখ থাকে, যেখানে শারীরিক ফিটনেসের বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়। এমনকি সরকারি চাকরিতে নিয়োগের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক এমনটাই উল্লেখ করা থাকে।
কারণ এই পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয়, যে প্রার্থীকে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে সে আসলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ কি না এবং যে কাজটি তাকে দেওয়া হবে সেটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সক্ষমতা রয়েছে কিনা। কেননা চাকরি অর্থাৎ কর্ম ক্ষেত্রে ভালো স্বাস্থ্যের বিষয়টি অনেকটাই বেশি নির্ভর করে।
তো যাই হোক– মূল বিষয় হচ্ছে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে হলে আপনাকে অবশ্যই মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ঠিকঠাক থাকতে হবে। কেননা বিশেষ কিছু রোগ, যথা —
- ডায়াবেটিস
- হৃদরোগ
- মানসিক অস্থিরতা
- কম দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদি
এ জাতীয় সমস্যাগুলো সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আশা করছি কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না এই বিষয়টি আপনাদের কাছে সুস্পষ্ট। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি সরকারি চাকরির সাথে সম্পর্কিত রোগ গুলোর বিষয়ে আরবি বিস্তারিতভাবে জানতে চান এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের অ্যানসার পেতে চান, তাহলে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশটুকু পড়ুন।
আরো দেখুন– দ্রুত চাকরি পাওয়ার উপায়.
সরকারি চাকরির জন্য সাধারণ শারীরিক মানদণ্ড
সরকারি চাকরির জন্য সাধারণ শারীরিক মানদন্ড সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা জরুরী। কেননা তবে আপনি বুঝতে পারবেন কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না এবং সরকারি নিয়োগে স্বাস্থ্য পরীক্ষাতে মূলত কি কি করা হয় এবং কোন বিষয়কে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
উচ্চতা ও ওজন
সরকারি চাকরির বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা ও ওজনের মানদণ্ড নির্ধারিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বিভাগে উচ্চতা এবং ওজনের একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এখন আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, আপনি কিভাবে জানবেন সরকারি কোন কোন চাকরিতে কোন কোন পদে আবেদনের জন্য কতটুকু উচ্চতা বা ওজনের প্রয়োজন পড়বে বা কতটুকু মানদণ্ডের বিষয় উল্লেখ থাকে!
এ বিষয়ে জানার জন্য আমরা পরামর্শ দিব পুরনো কোন সার্কুলার ঘাটাঘাটি করার। কেননা আপনি যদি সার্কুলার দেখেন তাহলে খুব সহজেই এটা জেনে নিতে পারবেন যে সরকারি চাকরির কোন পদে কোন প্রতিষ্ঠানের কোন চাকরিতে আবেদনের জন্য কতটুকু উচ্চতা ও কতটুকু ওজনের প্রয়োজন পড়ে। কারণ প্রায় প্রত্যেকটি চাকরির সার্কুলারে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়।
শারীরিক সক্ষমতা
শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষাও সরকারি চাকরিতে গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র আপনার ওজন এবং উচ্চতা যদি ঠিকঠাক থাকে তাতেও চলবে না যদি না আপনি শারীরিকভাবে কর্মঠ হয়ে থাকেন। বিশেষ করে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এই বিষয়টিকে। আর তাইতো শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষায় প্রার্থীর সহনশীলতা, শক্তি ইত্যাদি এগুলো যাচাই করা হয়ে থাকে।
সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা ও জটিল রোগ
শারীরিক সুস্থতা সকল সুখের মূল। কেননা একজন ব্যক্তি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে তাহলে সে খুব সহজেই তার কাজ করতে পারবে এবং সুন্দর কর্মঠ সময় জীবন কাটাতে সক্ষম হবে। আরে জন্যই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের পূর্বে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা এবং জটিল রোগের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
কেননা রোগে আক্রান্ত থাকলে কর্ম ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি অবশ্যই তার কাজ বা তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন না। এজন্যই এই বিষয়গুলোকে শুরুতেই যাচাই-বাছাই করা হয়ে থাকে। যেমন ধরুন—
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে এটা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছে যায় এবং জরুরি সমস্যার সৃষ্টি করে তাহলে অনেক সময় সরকারি চাকরি নিয়োগে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয় চাকরিপ্রার্থীকে।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস খুবই পরিচিত এবং জটিল একটি সমস্যা। আর এজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে বিধায় পূর্বে নিয়োগের সময় এ বিষয়টি নজরদারি করা হয়। অতএব বলতে পারেন ডায়াবেটিস রোগ সরকারি চাকরিতে যোগ্যতার একটি বড় বাধা হিসেবে দেখা দেয়।
জটিল রোগ বা সাধারণ শারীরিক মানদন্ড ঠিকঠাক না থাকলে করণীয়
সরকারি চাকরি মানুষের জীবনে একটি অন্যতম আকাঙ্ক্ষাময় স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন যদি শুধুমাত্র শারীরিক কিছু ত্রুটির কারণে থেমে যায় তাহলে তো অনেক বেশি দুঃখজনক। এজন্যই কেউ কেউ আবার এমনটা প্রশ্ন করে থাকেন আমি সরকারি চাকরিজীবী হতে চাই বা সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে চাই, যদি আমার শরীরে জটিল কোন রোগ বা সাধারণ শারীরিক মানদন্ড ঠিকঠাক না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে কি করতে পারি?
এজন্য আপনি মূলত নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন। আপনার সমস্যা গুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন। যেমন যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অতিরিক্ত পরিমাণে থেকে থাকে তাহলে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো অবলম্বন করুন। কেননা ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে– উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ওষুধ গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিজের রোগ এবং নিজস্ব প্রতি যত্নশীল হোন।
নিয়মিত চেকআপ করুন। কারণ নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অন্যান্য যেকোনো জটিল রোগের ক্ষেত্রে এই একই কৌশল অবলম্বন করুন। মানে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তাদের নির্দেশনা গুলি মেনে সুস্থতা লাভ করুন আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন অতঃপর নিজের দক্ষতা যোগ্যতা ও ভালো লাগার উপর নির্ভর করে সরকারি চাকরির সঠিক পদে আবেদন করুন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া | সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কেন্দ্র সমূহ
সরকারি নিয়োগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া হচ্ছে মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান। মূলত প্রার্থীদের নিয়োগের পূর্বে তাদের আওতাধীন হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে চেকআপ করে এটার সুনিশ্চিত করা হয় যে উক্ত চাকরিপ্রার্থী স্বাস্থ্য যোগ্যতার দিক থেকে উত্তম কি না। এমনকি কিছু কিছু চাকরির ক্ষেত্রে বা কখনো কখনো স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য পুনঃপরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে।
তো যাই হোক, আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা উল্লেখ করব বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা নিয়ন্ত্রণাধীন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বা নিয়োগের পূর্বে নির্বাচিত প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মূলত কোন কোন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়! মানে কোথায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়? সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র অনেকগুলো। যেমন—
- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
- সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাভার ঢাকা
- স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
- জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
- মেডিকেল সেন্টার বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, ঢাকা
- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ট্রামাটোলজি এন্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটিশন, শেরেবাংলা নগর ঢাকা
- জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট অফ হাসপাতাল, মহাকালী ঢাকা
আর হ্যাঁ, মূলত উল্লেখিত হাসপাতালে যে সকল বিভাগের বাজে সকল অধিদপ্তরের কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো–
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ
- ভূমি সংস্কার বোর্ড
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
- অর্থ মন্ত্রণালয়
- বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রণালয়
- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়
- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং
- পরিবেশবান ও বন জলবায়ু অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়
অতএব আপনি যদি এই বিভাগের কোন একটি পদে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন অথবা সিলেক্টেড হয়ে থাকেন তাহলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আপনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যেতে হবে এবং সেখানেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরবর্তীতে আপনাকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।
সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ঢাকা
- বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড
- বিসিএস প্রশাসন একাডেমি অর্থাৎ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
- রাষ্ট্রপতির কার্যালয়
যারা এ সকল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী অথবা নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ঢাকাতে। মূলত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পূর্বে এটা জানানো হয়ে থাকে যে আপনাকে কোথায় পৌঁছাতে হবে। আমরা মূলত বোঝার সুবিধার্থে এবং পূর্ববর্তী বিষয়গুলো অনুসন্ধান করে উক্ত হাসপাতালের নাম সাজেস্ট করছি।
একইভাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শেরেবাংলা নগর ঢাকাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় নিম্ন বর্ণিত বিভাগের বা কার্যালয়ের নিয়োগকৃত কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের। যথা—
- প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়
- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ
- বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
- বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়
- নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহ অন্যান্য আরো বিভাগ।
তো যাই হোক, সুপ্রিয় অডিয়েন্স বন্ধুরা– এখন আসুন আরো জেনে নেই কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না এই সম্পর্কিত বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আরো কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর। যেগুলো মাঝেমধ্যেই সার্চ করে থাকেন অনেকেই।
আরো দেখুন: এইচএসসি পাশ মহিলাদের জন্য সরকারি চাকরি
১. কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না | সরকারি চাকরিতে অযোগ্য করে এমন কিছু রোগের নাম কি কি?
সরকারি চাকরিতে অযোগ্য করে এমন কিছু সাধারণ রোগ হলো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, মানসিক সমস্যা, হাঁপানি, কিডনি সমস্যা, স্নায়বিক রোগ, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, সংক্রামক রোগ (যক্ষ্মা, এইচআইভি) এবং হেপাটাইটিস।
২. কেন কিছু রোগ সরকারি চাকরি পেতে বাধা দেয়?
একজন ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নির্দিষ্ট কিছু কাজ হাসিল করে নেওয়া এবং তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেওয়া। স্বাভাবিকভাবে যদি কোন ব্যক্তি জটিল কোন রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে সে তার কর্মক্ষেত্রে সঠিকভাবে পারফরম্যান্স করতে পারবেন না মানে তার দায়িত্ব গুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। আরে জন্যই কিছু রোগ সরকারি চাকরি পেতে বাধা দেয়। আর সরকারি চাকরির প্রদানের পূর্বে শারীরিক ফিটনেস ও স্বাস্থ্য সতর্কতা বেঁধে দেওয়া হয়।
৩. গাড়ি চালকদেরও কি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়?
হ্যাঁ অবশ্যই, গাড়ি চালকদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। সরকারি যেকোনো চাকরিতেই আপনি জয়েন করলে বা আবেদন করলে সবার প্রথমে আপনার যোগ্যতার বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে অতঃপর আপনি উক্ত পদের জন্য ফিটনেস রয়েছেন কিনা মানে শারীরিকভাবে ফিট রয়েছেন কিনা সে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হবে।
৪. হেপাটাইটিস বি থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়?
যে রোগ গুলো কখনোই সাড়বেনা বা কর্মক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে এমন কিছু রোগ থাকলে সরকারি চাকরি দেওয়া হয় না। হেপাটাইটিস বি অনেকটাই জটিল রোগ, তবে বর্তমানে এর বেশ ভালো চিকিৎসা বেরিয়েছে। তো আপনি যদি আপনার এই রোগ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন বা সারিয়ে তুলতে পারেন তাহলে সরকারি চাকরি হওয়া সম্ভব।
৫. কি কি কারণে সরকারি চাকরি চলে যায়?
সরকারি চাকরি চলে যাওয়ার অসংখ্য কারণ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো–
- ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইন সংগত আদেশ অমান্য করা
- প্রতিনিয়ত নিজ কর্তব্য পালনে অবহেলা প্রদর্শন
- আইন সংগত কারণ ছাড়া সরকারের কোন আদেশ, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকরণ
- দুর্নীতি দায়ে অভিযুক্ত
- দপ্তরের অর্থ কেলেঙ্কারি অথবা নারী কেলেঙ্কারিতে সংযুক্ত
- নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত
- দন্ডপ্রাপ্ত অর্থাৎ ফৌজদারী মামলায় কারাগারে পাঠানোর দায়
- অন্য কোন আইন বা বিধি-বিধানে যে সমস্ত কার্য-অসাচরণ হিসেবে গণ্য ওই কাজগুলো সম্পাদন এবং পলায়ন।
৬. ডায়াবেটিস থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি চাকরি পাওয়া যায়। তবে কিছু ক্ষেত্র বিশেষে এটি একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৭. চোখের সমস্যা থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়?
চোখের সমস্যা যেমন মাইওপিয়া বা হাইপারমেট্রোপিয়া থাকলে কিছু ক্ষেত্রে চাকরিতে অযোগ্য বলে গণনা করা হয়। তবে সঠিক চিকিৎসা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এর সমাধান করা যায়। এক কথায় যদি চোখের সমস্যা গুরুতর না হয় তাহলে সরকারি চাকরি হয়।
৮. মানসিক সমস্যা থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়?
হ্যাঁ যদি মানসিক সমস্যা স্বাভাবিক হয় তাহলে সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব হয়। তবে মানসিক সমস্যা যেমন ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটি থাকলে সরকারি চাকরিতে যোগ্যতা প্রভাবিত হতে পারে কখনো কখনো। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার মাধ্যমে এর সমাধান করা সম্ভবপর। তাই এই বিষয়টি অতটাও গুরুতর চিন্তার বিষয় নয়।
৯. কোন মানসিক রোগে চাকরি ধরে রাখা যায় না?
সাধারণত বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া অর্থাৎ গুরুতর উদ্বেগের মতো সমস্যা মানসিক চাপ জনিত রোগে চাকরি ধরে রাখা যায় না।
১০. বউ তালাক দিলে কি সরকারি চাকরি চলে যায়?
না, ডিভোর্সের সাথে মূলত চাকরি চলে যাওয়ার কোন বিষয়ে জড়িত নেই।
১১. ক্যান্সার থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়?
ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি। আর ক্যান্সার নামক এই জটিল রোগে আক্রান্ত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে চাকরির যোগ্যতা প্রভাবিত হতে পারে। চিকিৎসা ও পুনরুদ্ধারের পর কর্মক্ষমতা অনুযায়ী চাকরিতে পুনরায় যোগ দেওয়া সম্ভব। তবে এমনটা নয় যে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে আপনার চাকরি চলে যাবে অথবা কোন চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন না।
তো অডিয়েন্স বন্ধুরা, কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না এই সম্পর্কিত আলোচনা আজ এ পর্যন্তই। যেহেতু সরকারি চাকরির জন্য স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। অবশ্যই অবশ্যই মনে রাখুন যেকোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যা কর্মক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা এবং সুরক্ষা প্রভাবিত করতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা বজায় রাখা অতীব জরুরী।