জেনে নিন গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
প্রত্যেক বাবা-মায়েরই স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তান যেন সুস্থ, বুদ্ধিমান ও মেধাবী হয়। গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাসের উপর এটি নির্ভর করে যে বাচ্চা বুদ্ধিমান হবে কিনা। কারন আমাদের পরিবেশ ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের কারণে বাবা মা প্রায়ই তাদের বাচ্চাদের নিয়ে উদিগ্ন থাকেন কীভাবে বাচ্চা ব্রেনি হবে। বর্তমান সময়ে সব মায়েদের একটি কমন প্রশ্ন হচ্ছে গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়? সবকিছু বেশিবেশি না খেয়ে কি খেলে বাচ্চার ব্রেইন বিকশিত হবে সেটা খেতে হবে। সাধারণত মায়ের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ২৫% Brain Development ঘটে। প্রথমত চিন্তা করতে হবে গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যতালিকা কেমন থাকবে কারণ গর্ভের সময় ভ্রণের মস্তিষ্কের ২৫ ভাগ ডেভেলপ হয়ে যায়, এটা শিশু জন্মের আগেই হয়।
ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ সাধারণত গর্ভধারণের 28 দিন পরে শুরু হয়, যখন নিউরাল টিউব গঠিত হয়। এই সময়ে, মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ করতে হবে কারণ একজন মা গর্ভাবস্থায় যা খান তা গর্ভের অভ্যন্তরে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে শিশুর জ্ঞানীয় প্রতিক্রিয়ার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলে। শিশু জন্মের পর যখন মায়ের দুধ খায় তখন মায়ের খাদ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কারণ এ সময় মস্তিষ্কের বাকি ৭৫ ভাগ অংশ ডেভেলপ হয়ে যায়। বাবা-মায়েরা যেহেতু বুদ্ধিমান ও মেধাবী সন্তান চান, কাজেই তার মস্তিষ্ক গঠনের ওপর জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। জন্মের প্রথম দুই বছর সন্তানের জন্য দরকার মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ। এর জন্য গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো খেতে হবে তা জেনে নিন।
শিশুকে বুদ্ধিমান করতে গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খেতে হবে
দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হল ফোলেট এবং কোলিন। তারা নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির মধ্যে রয়েছে আয়োডিন, আয়রন, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি। বিজ্ঞানীদের মতে, আপনার গর্ভাবস্থার খাদ্য সত্যিই আপনার শিশুর বুদ্ধিমত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভিটামিন ডি, ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রন আপনার সন্তানের জ্ঞানীয় বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। যেমন, ডিম, মাংস, মাছ, বিনস, পাঁচমিশালি ডাল, সিড নিয়মিত খেলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়। কলা, শুকনো ফল, পুদিনাপাতা, সবুজ শাকসবজিতে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড আছে, যা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে, বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে। সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ মায়ের গর্ভাবস্থায়ই শুরু হয়। সে জন্য এ সময় দরকার মায়ের একটি বালান্স ও মডিফাইড ডায়েট। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন না বাড়িয়ে, কি কি খাবেন কিভাবে খাবেন সেই বিষয় এ একজন ডায়াটিশিয়ান এর পরামর্শ নিতে পারেন। সন্তান যেন বুদ্ধিমান ও মেধাবী হয়- এ প্রত্যাশা সব বাবা-মায়েরই থাকে। এ কারণেই গর্ভবতী মা এবং শিশুর কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চলেন। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার জন্ম নেওয়া শিশু পরর্তিতে নানা সমস্যায় ভুগতে পারে।
গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জীবনের সবচেয়ে সুখী পর্যায়গুলির মধ্যে একটি কিন্তু, এটির নিজস্ব মানসিক এবং শারীরিক চাপ থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মা এবং শিশু উভয়কেই সুস্থ থাকতে সাহায্য করে! এই সময়ে, আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আপনার শরীরের অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে, ২য় এবং ৩য় ত্রৈমাসিকের সময় আপনার ডায়েটে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করতে হবে। দরিদ্র খাদ্যতালিকাগত পছন্দ আপনাকে মোটা করে তুলতে পারে এবং জন্মগত জটিলতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। শিশুর বিশেষ পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় তারা কী খায় তার অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সংক্ষেপে, স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন করা নিশ্চিত করবে যে আপনি এবং আপনার ভ্রূণ উভয়ই সুস্থ থাকবেন। এটি আপনার জন্ম দেওয়ার পরে সহজেই ওজন কমাতে সহায়তা করে। তাই, শুধু আপনার জন্য, আমরা খাবারের একটি তালিকা তৈরি করেছি যা আপনি গর্ভবতী হওয়ার সময় খেতে পারেন!
শিশুকে স্মার্ট ও বুদ্ধিমান করে তুলতে গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খেতে হবে তার মধ্যে কিছু জনপ্রিয় খাবার নিচে দেওয়া হল।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারঃ
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় রয়েছে, ডিম, মাংস, মাছ, বিনস, পাঁচমিশালি ডাল, সিড গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়।
১. ডিমঃ
গর্ভাবস্থায় বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ডিম খাওয়া মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে, শিশুকে আর স্মার্ট ও বুদ্ধিমান করে তোলে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে ডিমে এমন পুষ্টি রয়েছে যা শরীর সহজেই শোষণ করতে পারে। ডিম হল কোলিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ এবং বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস যা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশকে উন্নত করে। ডিম অ্যামিনো এসিড কোলিন সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয় ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী মহিলারা প্রতিদিন 2টি সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। যারা সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন না তারা ডিমের তৈরি অন্য খাবার খাবেন। যেমন, পুডিং, হালুয়া,মাফিন খেতে পারেন কারণ ডিমে থাকা প্রোটিন ও আয়রন জন্মের সময় শিশুর ওজন বাড়িয়ে দেয়।
২. মাংসঃ
গর্ভাবস্থায় মাংস খাওয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি 12 রয়েছে, যা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি। জিঙ্ক ডিএনএর একটি অংশ গঠন করে এবং নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। এর অভাব শিশুদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে। ভিটামিন বি 12 শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। মাংসে নিয়াসিনও রয়েছে, একটি যৌগ যা জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করে।মাংসে প্রাণীজ প্রোটিন রয়েছে সেটি চিকেন অথবা লাল মাংস। আপনি যদি মাংস খেতে না পারেন তাহলে কাটলেট অথবা কাবাব করে খেতে পারেন।
৩. মাছঃ
স্যামন এবং টুনা মাছ খাওয়া শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যও ভাল কারণ এগুলি কোলিনের সমৃদ্ধ উৎস। মাছেও ভালো পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। গবেষণা অনুসারে , এক ধরনের ওমেগা-৩ অ্যাসিড, ভ্রূণের নিউরোডেভেলপমেন্টের জন্য অপরিহার্য। DHA ভ্রূণের মস্তিষ্কের গঠনগত এবং কার্যকরী বিকাশের জন্যও দায়ী। গর্ভবতী মহিলাদের শুধুমাত্র সঠিকভাবে রান্না করা মাছ খাওয়া উচিত।স্যামন, টুনা, ম্যাকারেল সামুদ্রিক মাছ যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য মাছ খুবই জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে দুইবারের বেশি মাছ খায় তাদের সন্তানের বুদ্ধি বা আইকিউ বেশি হয়। এজন্য অবশ্যই খাবার তালিকায় মাছ রাখতে হবে। যদি মাছ না খেতে পারেন তাহলে কাটলেট কিংবা কাবাব করে খেতে পারেন।
৪. সবুজ শাক সবজিঃ
ব্রকলি, বাঁধাকপি, লেটুস এবং পালং শাক এর মতো সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সক্রিয় যৌগ রয়েছে যা জ্ঞানীয় ক্ষমতাকে উন্নত করে। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই সবুজ শাক-সবজি যোগ করুন।
সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রনের পাশাপাশি ফলিক অ্যাসিড থাকে। যা আপনার শিশুর স্নায়বিক ত্রুটি যেমন ঠোঁট ফাটা এবং হার্টের ত্রুটির ঝুঁকি কমায়। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারগুলিও মায়ের জন্য প্রচুর উপকার করে,যা গর্ভাবস্থায় জটিলতার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
৫. ব্লুবেরিঃ
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি এবং রাস্পবেরিগুলিকে সুপারফুড হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এগুলি প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফোলেট এবং ভিটামিন বি 6 এর মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। তাই এগুলো শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যা শিশুদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৬. দুগ্ধজাত পণ্যঃ
দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দই এবং পনির গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় খাবার। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় আয়োডিন এবং প্রোটিন উত্স সমৃদ্ধ। দুধে কোলিনও থাকে যা আপনার শিশুকে আরও স্মার্ট করতে সাহায্য করে। গবেষণা দেখা যায় যে গর্ভাবস্থায় আয়োডিনের ঘাটতি ভ্রূণের মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। যেসব মায়েদের গর্ভাবস্থায় আয়োডিনের ঘাটতি ছিল তাদের শিশুরা স্নায়বিক অক্ষমতার ঝুঁকিতে থাকে। দুধ আয়রনের একটি বড় উৎস। দুধ স্বাস্থ্যকর জ্ঞানীয় ফাংশনগুলির বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জন্মের আগে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকেও সমর্থন করে। তাই গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যতালিকায় দুধ যোগ করা প্রয়োজন। আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার স্বাস্থ্যকর স্নায়ু কোষ গঠনে সাহায্য করে। দই কেবল প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস নয়, এটি প্রোবায়োটিক এবং আয়োডিনেও সমৃদ্ধ। তাই এই অলৌকিক খাদ্য শুধুমাত্র জ্ঞানীয় বিকাশে সাহায্য করে না, এটি আপনার সন্তানের হাড়কে মজবুত করে এবং জন্মের সময় শিশুর কম ওজনের সম্ভাবনা কমায়।
আয়রন ও ফলিক এসিডঃ
আয়রন ও ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ করে এবং জন্মগত ত্রুটির সম্ভবনা কমায়। কলা, শুকনো ফল, পুদিনাপাতা, সবুজ শাকসবজিতে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড আছে, যা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে, বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গর্ভধারণের আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড সেবন করা অনাগত সন্তানের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১. কলাঃ
কলা গর্ভাবস্থায় পায়ের মস্তিষ্কের বিকাশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। কলা তে প্রচুর আয়রন ও আছে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন খাবার তালিকায় কলা রাখতে পারেন। কলা ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন B6 এর একটি বড় উৎস। এগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং তারা শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতরাং, তারা আপনার জন্য একটি ভাল সংযোজন হতে পারে
২. বাদামঃ
স্বাস্থ্যকর স্নেহপদার্থ, (ফ্যাট)ম্যাগনেশিয়াম,ভিটামিন-E এবং প্রোটিনে পরিপূর্ণ হল আমন্ড। মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ওমেগা– 3 ফ্যাটি অ্যাসিড আমন্ডে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। প্রতিদিন একমুঠো করে আমন্ড খেলে আপনি জন্মমুহূর্ত থেকে বুদ্ধিমান একটি সন্তান পাবেন। গর্ভাবস্থায় মটরশুটি সন্তানের বুদ্ধি বিকাশের সহায়ক। আখরোটও ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। একটি উচ্চতর বাদাম, বাদাম পুষ্টির আধিক্যের সাথে প্যাক করা হয়। ম্যাগনেসিয়াম থেকে ভিটামিন ই, এগুলিতে ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে। আপনার গর্ভাবস্থায় এক মুঠো বাদাম দিয়ে আপনার দিন শুরু করুন। বাদাম শিশুদের উচ্চ বুদ্ধিমত্তার স্তরে অবদান রাখতে পাওয়া গেছে। আখরোট, পেস্তা, সূর্যমুখী, শণ, চিয়া এবং কুমড়ার বীজ সবই প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য উপকারী।
৩. সম্পূর্ণ শস্য খাদ্যঃ
মটরশুটি, মসুর ডাল এবং সাধারণভাবে লেগুতেও উচ্চ মাত্রার আয়রন থাকে। আপনার খাদ্যতালিকায় লেবু অন্তর্ভুক্ত করা প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উত্স হিসাবে প্রমাণিত হবে। আয়রন এবং প্রোটিনের অন্যান্য উত্স যেমন কিশমিশ,ওটস, বাদামী চাল, পুরো গম এবং অন্যান্য গোটা শস্য জাতীয় খাবার প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন বি 6 সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ভাল। শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য শরীরে আয়রনের প্রয়োজন হয়। মটরশুটিগুলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, এই কারণেই গর্ভবতী মায়েদের তাদের ডায়েটে এই খাবারটি গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিডনি বিন, সয়াবিন, ছোলা এবং চিনাবাদামের মতো শিমগুলিও আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফোলেটের সমৃদ্ধ উৎস যা আপনার শিশুকে আরও স্মার্ট করতে সাহায্য করে। লেগুমগুলিও প্রচুর প্রোটিনের উত্স, যা আবার আপনার শিশুর মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় মায়ের কম প্রোটিন খাবার শিশুর স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারঃ
সবুজ শাকসবজি বিশেষ করে পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, গাজর, টমেটো, বিনস দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখতে হবে। এগুলোয় লুটেইন নামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বাদাম, কালোজামও খেতে পারেন গর্ভাবস্থায়। এগুলোয় বিদ্যমান ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আপনার বিকাশমান শিশুর মস্তিষ্কের টিস্যু এবং সেলুলার মেমব্রেনকে ক্ষতি এবং ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল হল অস্থির পরমাণু যা কোষের ক্ষতি করতে পারে। উত্পাদনে সর্বাধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য ভাল।
১. কমলালেবুঃ
কমলার রস আপনাকে ফোলেট, পটাসিয়াম এবং অবশ্যই ভিটামিন সি দিয়ে পূরণ করতে পারে। এটি আপনার শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে যা বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করবে। কমলার রসে থাকা ভিটামিন সি আপনার শিশুর শরীরে আয়রন শোষণ করার ক্ষমতা বাড়াবে। তাই সকালের নাস্তায় প্রতিদিন এক গ্লাস কমলার রস খান।
২. টমেটোঃ
টমেটো, ভিটামিন সি এবং ই, কোলিন, ফোলেট এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ভাল। অতএব, এটি আপনার শিশুকে স্মার্ট হতে সাহায্য করে।
কপার ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার
খাদ্যতালিকায় কপারসমৃদ্ধ খাবার যেমন কাজুবাদাম, অ্যাভোকেডো, মটরশুঁটি, বিনস, বিট ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার যেমন শস্যজাতীয় খাবার, ছোলা, গরুর মাংস পরিমাণমতো রাখতে হবে। এতে শিশুর মস্তিষ্কের কোষ সঠিকভাবে বাড়ে।
১.অ্যাভোকাডোঃ
এটি আরেকটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা আপনি আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন। অ্যাভোকাডো ভিটামিন বি এবং সি এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। এগুলিতে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেটের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিও রয়েছে।
২. ডার্ক চকোলেটঃ
গবেষণা অনুসারে , ডার্ক চকোলেট হল আয়রন, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের একটি চমৎকার উৎস যা গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশকে উৎসাহিত করে। আপনি প্রতিদিন 1-2 টুকরা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এতে ক্যাফেইন থাকে যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ভিটামিন ডিযুক্ত খাবারঃ
গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পনির, গরুর মাংস, কলিজা—এই জাতীয় খাবারে প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে হয় না। এ জন্য গর্ভবতী মাকে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন সূর্যের আলোয়ও কিছু সময় করে থাকতে হবে। ভিটামিন ডি বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব দরকার। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মায়ের ভিটামিন ডি প্রয়োজনের চেয়ে কম থাকে তাদের বাচ্চার ব্রেইন দুর্বল হয়। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। ডিম, চীজ, বিফ, লিভার ইত্যাদি ভিটামিন ডি রয়েছে।
আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবারঃ
গর্ভাবস্থায় আপনার খাবার তালিকায় অবশ্যই আয়োডিনযুক্ত খাবার রাখতে হবে কারন আয়োডিনের অভাবে শিশুর অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আয়োডিনের অভাব, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে সন্তানের আই.কিউ কম করে দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়োডিন যুক্ত লবণ খান। এছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দই ইত্যাদি খান আয়োডিনের জন্য।
সন্তানের বুদ্ধি বিকাশে আয়োডিনযুক্ত খাবার খুবই জরুরি । এ জন্য খাবারের তালিকায় প্রতিদিন আয়োডিনযুক্ত লবণ রাখতে হবে। সামুদ্রিক মাছ, ডিম, কলিজা, গলদা চিংড়ি, ভুট্টা খেতে পারেন।
সতর্কতাঃ
- ঘন ঘন আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
- সুষম খাবার খান এবং প্রচুর বিশ্রাম নিন।
- নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন।
- যোগব্যায়াম, হালকা ব্যায়াম নিরাপদ হলে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথেও পরামর্শ করতে পারেন।
- ধূমপান সিগারেট এড়ানো উচিত।
- অ্যালকোহল পান করা এড়ানো উচিত কারণ এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
আমাদের এই টিপস যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং অন্য কোন টিপস জানতে তাহলে অবশ্যই পেইজে লাইক এবং কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ