ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি ক্ষতি হয়
| |

ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি ক্ষতি হয় | ফ্রী ফায়ার কি হারাম?

ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি ক্ষতি হয়: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফ্রি ফায়ার। যে খেলাটি মানব জীবনের জন্য অভিশাপ স্বরূপ হয়ে উঠেছে। কেননা বর্তমানে ছোট থেকে বড় প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ এই গেমে আসক্ত। বলতে পারেন– নেশায় পরিণত হয়েছে গেম খেলা।

আর যে কোন নেশা আমাদের জন্য ক্ষতিকর, তা আমরা সবাই জানি। তাই ফ্রী ফায়ার গেম খেললে আমাদের চরম ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই নিয়ে বর্তমান সময়ে আলোচনারও কোন শেষ নেই। অনেকেই জানতে আগ্রহী ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি ক্ষতি হয়? এর মূলত সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি?

সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ সবাইকে ওয়েলকাম জানাচ্ছি আমাদের আজকের আলোচনা পর্বে। আজ আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাদেরকে ফ্রি ফায়ার গেমের ক্ষতিকর ও হারাম দিকগুলো অবগত করব। তাহলে আসুন কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনা পর্ব শুরু করি।

ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি ক্ষতি হয়?

ফ্রী ফায়ার গেম খেললে একটা মানুষের শারীরিক ও মানসিক দুই রকমেরই ক্ষতি হয়ে থাকে। অনেকের এই কথাটি শোনার পর স্বাভাবিকভাবে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, যে- ফ্রী ফায়ার তো একটি অনলাইন ভিত্তিক গেম। তাহলে এই গেম খেলার ক্ষেত্রে কিভাবে আমাদের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে? হয়তো মানসিক ক্ষতির ব্যাপারটা মেনে নেওয়া যায় কিন্তু শারীরিক ক্ষতি আমাদের কিভাবে করবে ফ্রী ফায়ার গেম!

তারা যদি একটু ভালোভাবে চিন্তা করেন তাহলেই বুঝতে পারবেন, ফ্রী ফায়ার আমাদের শরীর ও মনের ওপর খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কেননা  আমাদের শরীর এবং মন একে অপরের পরিপূরক। তাই কোন কিছু যদি আমাদের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাহলে তা শরীরেরও অবনতি ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক।

তাই ফ্রী ফায়ার গেম শারীরিক এবং মানসিক দুই রকমেরই ক্ষতি করতে সক্ষম। যা আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত আপনাদেরকে জানাবো। তাই স্টেপ বাই স্টেপ আমাদের ইনস্ট্রাকশন গুলোর ফলো করুন এবং জেনে নিন ফ্রী ফায়ার গেমের ক্ষতিকর দিক ও তার প্রতিকার সম্পর্কে।

ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি হয়?

ফ্রী ফায়ার বর্তমানে মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে। আর নেশায় আসক্ত ব্যক্তিরা কখনোই সমাজে স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করে না এবং তারা সাধারণ জনগণের মত সমাজের কোন কাজেই নিজেকে নিয়োজিত করে না। তাই ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি হবে সেটা আন্দাজ করলেই বুঝতে পারছেন।

এক কথায়– যারা ফ্রী ফায়ার গেম খেলে এবং ফ্রী ফায়ার গেম এর প্রতি অধিক বেশি আসক্ত তারা মূলত বিভিন্ন অন্যায় ও অনৈতিক মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ফলে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়। পাশাপাশি অতি আসক্তির কারণে একজন মানুষের মেধা শক্তি লোক পায়, পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়াও গেম খেলা নিয়ে পরিবারের অশান্তির সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর সময় নষ্ট হয়, পাশাপাশি ব্রেনের চরম ক্ষতিও হয়ে থাকে। 

ফ্রী ফায়ার গেম এর ক্ষতিকর দিক

এবার আমরা জানবো ফ্রী ফায়ার গেম এর ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে। সুতরাং আপনি যদি ফ্রী ফায়ার গেমে অতি আসক্তিতে লিপ্ত হন তাহলে আপনার কি কি ক্ষতি হতে পারে! 

  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়
  • মেধা শক্তি কমে যায়
  • খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়
  • চোখের সমস্যা তৈরি করে
  • অনৈতিক আচরণের সৃষ্টি হয়
  • অতিরিক্ত রাগ হয়
  • ক্লাসে অমনোযোগী হবার প্রবণতা বেড়ে যায়
  • শরীরে প্রচন্ড ক্লান্তি আসে
  • স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হয়।

বাচ্চাদের ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি কি ক্ষতি হতে পারে?

ফ্রী ফায়ার গেম এর প্রতি সবচেয়ে বেশি আসক্ত বর্তমান তরুণ সমাজ। এমনকি খুবই ছোট বাচ্চারাও এই খেলাতে অনেক বেশি বিমোহিত। যে কারণে সবচেয়ে বাজে ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে বাচ্চাদের উপর। বাচ্চাদের ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি কি ক্ষতি হবে, এ নিয়ে অনেকেই জানতে আগ্রহী। 

আর এটা যদি আপনি জানতে চান তাহলে আপনার আশেপাশে যে বাচ্চাগুলো ফ্রী ফায়ার খেলছে তাদের দিকে দৃষ্টি রাখতে পারেন। কেননা খুব সহজেই আপনি প্র্যাকটিক্যালি তা বুঝতে পারবেন। 

বাচ্চারা ফ্রী ফায়ার খেলে ক্ষতিস্বরূপ যে সকল বিষয় সচরাচর সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হলো:

  • যেকোনো কথাতে না উত্তর দেওয়া। অর্থাৎ তাদের গেম খেলার সময় আপনি যদি তাদেরকে কোন কাজ করার হুকুম প্রদান করেন তাহলে তারা কখনো সেটা করবে না বরং আপনার মুখের উপর সরাসরি না উত্তর দিবে। 
  • বাবা মায়ের সাথে বাজে ব্যবহার করা। একটা বাচ্চা সন্তান যদি ফ্রী ফায়ার গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে বাবা মায়ের সাথেও খারাপ আচরণ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তার মানসিক আচার-আচরণের অবক্ষয় সৃষ্টি হয় এমনকি অনেক বাচ্চারা রয়েছে যারা বাজে ভাষায় কথা পর্যন্ত বলে ফেলে।
  • ফ্রী ফায়ার গেম অতিরিক্ত খেলার ফলে শিশুরা বড়দের প্রতি অধিক বেশি বিরক্ত প্রকাশ করে। তাদেরকে সম্মান করার কথা ভুলে পর্যন্ত যায়। কেননা তারা বড়দেরকে মনে করে যে ফ্রী ফায়ার গেম খেলার পথে তারাই একমাত্র বাধা। এই নিয়ে মূলত পরিবারের অশান্তিও সৃষ্টি হয়।

ফ্রী ফায়ার কিভাবে আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি করে

ফ্রী ফায়ার আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি করে এটা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কেননা ফ্রি ফায়ার খেলার ক্ষেত্রে যে সরঞ্জাম গুলো ব্যবহার করতে হয় সেগুলো পেইড। আপনি নিশ্চয়ই ফ্রী ফায়ার গেম খেললে ডায়মন্ড টপ আপ এর বিষয়টা জানবেন। আর এগুলো যে ফ্রিতে পাওয়া যায় না সেটা সম্পর্কেও আপনি নিশ্চয়ই জানবেন। আর ছোট ছোট বাচ্চারা যারা ইনকাম করতে পারে না তারা কিন্তু সেই টাকা পরিবারের কাছ থেকেই নিয়ে থাকে। আর যারা বড় রয়েছেন তারা তো ফ্রি ফায়ার খেলেনই। 

সেই সাথে দামি স্মার্টফোন হলে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতে অনেক বেশি সুবিধা হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ভালো ভালো দামে ফোন কেনার আগ্রহ জাগে শুধুমাত্র এই গেম খেলার জন্য। আর এগুলো অবশ্যই আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে কোন গেম খেলে টাকা আয় করা যায়

আপনি জানলে অবাক হবেন শুধুমাত্র গেম খেলার জন্য ডায়মন্ড কিনতে এই ফ্রী ফায়ার গেমাররা হাজার থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করছে। আপনি যদি একটু রিচার্জ করেন তাহলে এটাও জানতে পারবেন এক একজনের আইডিতে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছে এমনটাও রেকর্ড আছে। তাহলে ভাবুন এই বিষয়গুলো কিভাবে আর্থিক সচ্ছলতাকে কেড়ে নিচ্ছে আর জাগিয়ে দিচ্ছে চরম দুর্ভোগের সম্ভাবনাকে। 

ফ্রী ফায়ার গেমের বাছাইকৃত ক্ষতিকর দিক

এ পর্যায়ে আমরা জানবো ফ্রী ফায়ার গেমের বাছাইকৃত সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে। যেগুলো সম্পর্কে জেনে রাখাটা আমাদের খুবই জরুরী।

  • ফ্রী ফায়ার খেলার কারণে ঝগড়া বিবাদ লাগার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • দৈনন্দিন জীবনে বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা খুবই কমে যায়।
  • সমাজ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কার্যক্রম সংঘটিত হয়।
  • পারিবারিক বন্টন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
  • বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • মানসিক ক্ষতি হয়ে থাকে।

তাছাড়াও যে বা যারা ফ্রী ফায়ার গেম খেলে তাদের বাইরের জগত নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রবণতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বাচ্চাদের। আপনি এটা নিশ্চয়ই জানেন যে ফ্রী ফায়ার গেমটি সম্পূর্ণ গ্রাফিক্স ডিজাইন হিসেবে দেখানো হয়েছে। 

আর খেলতে গিয়ে যখন গুলি করা হয় তখন কেউ মারা গেলে রক্তপাত হয় চিৎকার দিয়ে ওঠে। এই সমস্ত বিষয় ছোট ছোট শিশুরা খুব অল্প বয়স থেকেই আয়ত্ত করে ফেলে এবং তাদের ভেতরে এই ধরনের কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও যে বা যারা এ খেলাটি খেলে তারা যে কোন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে গ্লোবালি চ্যাট করতে পারে। আর এতেও নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তা কারোরই অজানা নয়। 

ফ্রী ফায়ার গেম কি হারাম?

অনেকেই হর-হামেশা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন ফ্রী ফায়ার গেমটি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? ফ্রী ফায়ার গেম এর কি কোন হারাম দিক রয়েছে? সত্যি বলতে পবিত্র কোরানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, হাতের আঙুল দিয়ে খেলা যায় এমন খেলা নাজায়েজ। 

সেই সাথে মানুষিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন ধরনের খেলা সম্পূর্ণভাবে হারাম। আর যেহেতু ফ্রী ফায়ার গেম আমাদের শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে তাই এই খেলাটি অবশ্যই হারাম।

ফ্রী ফায়ার খেলে মৃত্যু

যারা পত্রিকা পড়েন নিয়মিত টেলিভিশনে নিউজ দেখে থাকেন তারা ফ্রী ফায়ার খেলে কতজন মৃত্যুবরণ করছে প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে অবশ্যই জানবেন। কেননা এই খেলা তে মানুষ এতটাই আসক্ত যে নিজের মৃত্যুটাও তাদের কাছে খেলনা মাত্র। 

এ পর্যন্ত শুধুমাত্র বাংলাদেশ এই অসংখ্য ছেলেমেয়ে শুধুমাত্র ফ্রী ফায়ার গেম খেলার কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। আর তাদের কেউ ই প্রকৃতির নিয়মে মৃত্যুবরণ করেনি বরং আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর একটা মানুষ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত তখনই নিয়ে থাকে যখন সে মানসিকভাবে পুরোপুরি বিকৃত হয়ে যায়। 

তাই আসুন এখন থেকে সতর্ক হই। আমাদের পরিবারের ছোট বড় সবাইকে এ বিষয়ে জানাই এবং সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করি। সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *