ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা
|

ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি কি?

ইসবগুলের ভুসি এর ইংরেজি নাম হচ্ছে Psyllium Husk বা সাইলিয়াম হাস্ক নামে পরিচিত। এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা প্রধানত ভারতে জন্মে। ইসবগুলের ভুসি হল উদ্ভিদের বীজের ভুসি থেকে উৎপন্ন এক ধরণের ফাইবার যাকে Plantago Ovata বলা হয়। এটি সাধারণত ইসবগুলের ভুসি নামে পরিচিত। ইসবগুলের ভুসি চিনে না একরম মানুষ হয়ত খুব কম আছে। কারণ ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা অনেক আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। ইসবগুলের ভুসি সব দেশেই উৎপাদন হয় তবুও ঐতিহ্যগত ভাবে ভারতীয়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য প্রাকৃতিক ভেষজ প্রতিকার হিসেবে পরিচিত রয়েছে।

ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য পুরনো চিকিৎসা কারন এটি ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস। ইসবগুলের ভুসি বেশিরভাগ রেচক হিসেবে ব্যবহার হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ইসবগুলের ভুসির অনেক রকম সুবিধা রয়েছে যা পেট ফাঁপা, বদহজম দূর করে মলত্যাগ সহজ করে, গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করে , হৃদরোগের সমস্যা দূর করে। ইসবগুলের ভুসি এখন বাজারে ভুসি, দানা, ক্যাপসুল বা পাউডার হিসেবে পাওয়া যায়।

 

ইসবগুলের ভুসি উপকারিতাঃ

ইসবগুলের ভুসি বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়। এবং ইসবগুলের ভুসির প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ফাইবার পাচক স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ । ইসবগুলের ভুসি ডায়ারিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, গ্লুকোজ সহ নানা সমস্যার প্রতিকার করে। নিচে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা দেয়া হলো। ইসবগুলের উপকারিতা জানতে হলে আমাদের এই টিপসগুলো ফলো করতে পারেন।

 

১। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে। কারণ ইসবগুলের ভুসিতে প্রচুর পরিমান ফাইবার রয়েছে যা মলকে নরম করে এবং সহজেই বের করতে সাহায্য করে। আপনার দ্রবণীয় ফাইবার গ্রহণে ফলে নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুসি ১গ্লাস পানিতে ১চামচ দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে সকালে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। অথবা দুধের সাথে ১ চামচ ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।

 

২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে

বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১০ জনের মধ্যে ১ জন ডায়াবেটিস আক্রান্ত । চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন এবং রক্তে শর্করা মাত্রা স্বাস্থ্যকর ভাবে বজায় রাখার জন্য তাদের খাদ্যের দিকে নজর রাখেন। আর গবেষণায় দেখা গেছে, ইসবগুলের ভুসি যারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রেখেছেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন রাখতে সাহায্য করে। দিনে ২ বার ইসবগুলের ভুসি পান করলে রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। ইসবগুলের ভুসি সারারাত ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন কিংবা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।এখন বাজারে ক্যাপসুল ও পাওয়া যায় সেটি খেতে পারেন।

 

৩। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রন করে

গবেষণায় দেখা গেছে , ইসবগুলের ভুসি ডায়রিয়া উপশম করতে পারে। ইসবগুলের ভুসি পানি শোষণ কারি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ইসবগুলের ভুসিতে ফাইবার থাকার কারণে হালকা থেকে মাঝারি ডায়রিয়ার জন্য একটি কার্যকর চিকিৎসা। ইসবগুলের ভুসি পানির সংস্পর্শে যখন আসে তখন পানি শোষণ করে এবং ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রন করে। ইসবগুলের ভুসি পান করলে মলত্যাগের তাগিদ কমানো, পানিযুক্ত মলের ধারাবাহিকতা উন্নত করা এবং মলের ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাস করা। এজন্য ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রন করতে অবশ্যই ইসবগুলের ভুসি পান করতে পারেন।

 

৪। ওজন কম করে

ইসবগুলের ভুসিতে প্রচুর পরিমান দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে । খাদ্যতালিকায় ইসবগুলের ভুসি ব্যবহারে মল এবং চর্বি নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। ইসবগুলের ভুসি খারাপ চর্বি কমিয়ে ভালো চর্বির মাত্রা বাড়াতে পারে। ইসবগুলের ভুসিতে ফাইবার থাকার কারণে অতিরিক্ত ক্ষুধা কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারন ইসবগুলের ভুসি পেটের মধ্যে খাবার গুলোকে ধীরগতিতে হজম করতে সাহায্য করে। এতে ক্ষুধার প্রবণতা অনেক কম করে এবং ওজন অনেক দ্রুতগতিতে হ্রাস পায়। আপনি চাইলে ইসবগুলের ভুসি যেকোনো ভাবে খেতে পারেন।

 

৫। কোলেস্টোরেল মাত্রা কম করে

আপনার খাদ্য তালিকায় ইসবগুলের ভুসি যোগ করলে আপনার কোলেস্টোরেল কমাতে সাহায্য করতে পারে। ইসবগুলের ভুসিতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টোরেল এর মাত্রা কম করে রক্তচাপকে উন্নত করতে সাহায্য করে। কোলেস্টোরেল এর মাত্রা কমাতে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় ইসবগুলের ভুসি রাখতে পারেন এতে আপনার উচ্চ রক্তচাপ ও কম হবে। ইসবগুলের ভুসি আপনি যেকোনোভাবে খেতে পারেন।

 

৬। হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে

ইসবগুলের ভুসি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুসিতে ফাইবার থাকার কারনে এটি পানি শোষণ করে। এতে খারাপ কোলেস্টোরেলের মাত্রা কম হয় এবং ভালো কোলেস্টোরেল মাত্রা বৃদ্ধি পায় । এভাবে ইসবগুলের ভুসি হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এভাবে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব যেমন স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ইসবগুলের ভুসি রাখতে পারেন।

 

৭। হজমে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে

ইসবগুলের ভুসিতে থাকা ফাইবার হজম নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। ফাইবার শরীর দ্বারা শোষিত হতে পারে না তাই এটি যখন পানির সাথে মিশ্রিত হয় তখন এটি জেল এর মত তৈরি হয়ে পাচনতন্তের সাথে চলে যায়। এটি শরীরের বর্জ্য কে আরো সহজে বের করতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুসি গ্যাস তৈরি করা রোধ করে, মল নরম করে এবং সমস্যা থেকে দূরে রাখে। এজন্য ভালো হজমের জন্য অবশ্যই ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।

 

৮। পাইলস বা অশ্বরোগ কম করে

কম ফাইবারযুক্ত খাবার থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পাইলস বা অশ্বরোগের সৃষ্টি হয়। এজন্য ইসবগুলের ভুসিতে থাকা ফাইবার পাইলস বা অশ্বরোগ কমাতে সাহায্য করে। যাদের পাইলসের সমস্যা রয়েছে তারা দিনে ২ বার ইসবগুলের ভুসি পান করতে পারেন। এতে পাইলসের সমস্যা একেবারে কমে যাবে।

 

ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ইসবগুলের ভুসি অতিরিক্ত খেলে কিছু মানুষের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে, শ্বাসকষ্ট ,ফুসকুড়ি হতে পারে। আবার অতিরিক্ত ইসবগুলের ভুসি পান করলে বদহজম, পেটফাঁপা এমনকি ডায়রিয়া ও হতে পারে। এইজন্য অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো নয়। যাদের ইসবগুলের ভুসি পান করলে সমস্যা দেখা দিবে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।আমাদের এই টিপস ভালো লাগলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *