টিউমার ও ক্যান্সার এর মধ্যে পার্থক্য কি? (স্বাস্থ্য পরামর্শ)
টিউমার ও ক্যান্সার” দুটিই অতি পরিচিত এবং ভয়ংকর স্বাস্থ্য অবনতির অংশ। আমাদের মাঝে কিছু মানুষ রয়েছে যারা টিউমার শব্দটি শুনলে মনে করেন ক্যান্সার হয়েছে, আবার কিছু মানুষ রয়েছে যারা ক্যান্সার নাম শুনলেই ভাবে যে টিউমার হয়েছে। এই ধারণাটা মূলত বিশাল সংখ্যক মানুষের মাঝেই লক্ষ্য করা যায়।
আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে টিউমার এবং ক্যান্সার সম্পর্কে পুরোপুরি না জানা। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কি এ বিষয়ে আলোচনা করব। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি- টিউমার সম্পর্কে এ টু জেড জানতে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। আর্টিকেল লিংক: টিউমার কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি। সেই সাথে আরো দেখতে পারেন- ক্যান্সার কত প্রকার এবং ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণের উপায় সমূহ।
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, তাহলে আসুন আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে খুব স্পষ্টভাবে জেনে নেই টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কি কি এ সম্পর্কে। অনুরোধ থাকবে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বার। সো লেটস স্টার্টেড।
আরো পড়ুনঃ টিউমার চেনার উপায় এবং টিউমার প্রতিরোধে করণীয়
টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য
টিউমার হলো- শরীরের অস্বাভাবিক টিস্যু পিণ্ড, যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বৃদ্ধি করে। টিস্যু মানে হচ্ছে, একই ধরনের কিছু কোষ যখন শরীরের কোথাও এক হয়ে একই ধরনের কাজ করে তখন সেখানে টিউমার আকৃতির একটা গোল্লা তৈরি হয়।
আর আপনি নিশ্চয়ই এটা জানেন– আমাদের শরীরে মিলিয়ন নয়, বরং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে। অপরদিকে ক্যান্সার হল একটি প্রাণঘাতী রোগ, যা শরীরের মধ্যে অস্বাভাবিক কোষগুলি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিভক্ত করে এবং নিকটবর্তী টিস্যুগুলোকে আক্রমণ করে। ক্যান্সার কোষ গুলো রক্ত এবং লিম্ফ সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে খুব সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যে কারণে শরীরে অস্বাভাবিক অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং একজন মানুষ শারীরিকভাবে অধিক বেশি ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মূলত ক্যান্সার এবং টিউমার দুটি আলাদা শারীরিক সমস্যা। তাই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে টিউমারে আক্রান্ত রোগী ভাবা উচিত নয় এবং টিউমারে আক্রান্ত রোগীকে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ভাবাও ঠিক নয়। কেননা টিউমার ও ক্যান্সার একেবারেই ভিন্ন দুটি রোগ তবে এদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কেননা কখনো কখনো টিউমার থেকে নানা ইনফেকশন এর মাধ্যমে সেখানে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। তবে যেহেতু আপনি টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য জানতে আমাদের আজকের এই প্রবন্ধটি পড়ছেন তাই আমরা শুধুমাত্র আলোচনা করব টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কি কি রয়েছে সে সম্পর্কে।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী কত বছর বাঁচে
ক্যান্সার এবং টিউমার নিয়ে বিস্তারিত
আপনি জানলে অবাক হবেন, আমাদের শরীরে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যান্সার জাতীয় সমস্যা রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে শরীরের অনেক জায়গায় বিভিন্ন সমস্যার একটি সমষ্টি হচ্ছে ক্যান্সার। মূলত ক্যান্সারের উৎপত্তি ঘটে শরীরের কোন নির্দিষ্ট একটি অংশ থেকে এবং পরবর্তীতে তা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন একই অংশ থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে পড়ে তখনই তাকে ক্যান্সার বলে সম্বোধন করা হয়। টিউমারের মধ্যে থাকা অস্বাভাবিক কোষ গুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে গিয়ে কখনো নতুন টিউমার তৈরি করে আবার কখনো কেবল সেখানকার অন্য কোষ গুলোর কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।
আর ইতোমধ্যে আমরা বলেছি আমাদের শরীর নানা ধরনের কোষ বা সেল দিয়ে তৈরি একটি স্থান। যে কোষ গুলো একটি নিয়ম বা নিয়ন্ত্রণের মধ্য থেকে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে শরীরের বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু যদি কোনো কারণে এই বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে বাঁধন ছেঁড়া নিজেদের মতো চলতে থাকে তাহলে শরীরে নানারকম পরিবর্তন ঘটে এবং বাজে প্রভাব সৃষ্টি করে। আর সেটি এক পর্যায়ে অস্বাভাবিক আকৃতির বৃদ্ধির কারণে টিউমার বলে আখ্যায়িত হয়। মানুষের শরীরের মূলত টিউমার দুই ধরনের হয়ে থাকে।
এক ধরনের টিউমার শরীরের যেখানে প্রথম উৎপত্তি হয় ঠিক সেখানেই অবস্থান করে আবার এমন কিছু টিউমার রয়েছে যারা স্থান পরিবর্তন করে। আর যে টিউমার শরীরে স্থান পরিবর্তন করে সেটাই মূলত শরীরের অন্যান্য অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়ে ক্যান্সারের রূপান্তরিত হয়। সুতরাং কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং সেখান থেকে টিউমার অথবা আলসার হওয়া এবং তার দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়াকে ক্যান্সার বলে সম্বোধন করা হয়।
টিউমার এবং ক্যান্সার সম্পর্কে অল্প বিস্তর আলোচনা আমরা করেছি। তাহলে চলুন এবার নিজের ছকের সাহায্যে জেনে নেই ক্যান্সার এবং টিউমারের মধ্যে আসলে মূল পার্থক্য কি? টিউমার এবং ক্যান্সারের মধ্যে কি আদৌ বৈসাদৃশ্য রয়েছে নাকি সাদৃশ্যতা রয়েছে!
ক্যান্সার এবং টিউমারের মধ্যে পার্থক্য
ক্যান্সার এবং টিউমারের মধ্যে পার্থক্য জানতে নিচের ছকটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
টিউমার | ক্যান্সার |
১. টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বৃদ্ধি করে। টিস্যু মানে একই ধরনের কিছু কোষ, যখন কোথাও এক হয়ে একই ধরনের কাজ করে। | ১. মানব দেহ অনেকগুলি কোষ দ্বারা গঠিত এবং এই কোষগুলিতে সর্বদা বিভাজন থাকে। এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া যেখানে শরীর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা কোষের রোগটিকে ক্যান্সার বলে। |
২. টিউমার একটি শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন, যার ফলে মানব দেহে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। টিউমার কোন মারাত্মক রোগ নয়। | ২. ক্যান্সার হচ্ছে একটি মারাত্মক রোগ, যা একজন ব্যক্তির শরীরে মারাত্মক টিউমার তৈরি করেছে। |
৩. টিউমার এমন একটি সমস্যা যা আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়, এর জন্য কোন গুরুতর চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। | ৩. ক্যান্সার হচ্ছে একটি প্রাণঘাতী অসুখ। তাই মেলিগন্যান্ট টিউমার অপসারণের জন্য ব্যবহার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। |
৪. টিউমারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সাধারণত সৌম্য এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি প্রাপ্ত একটি প্রক্রিয়া। যার বৃদ্ধি কার্যক্রম হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। | ৪. ক্যান্সারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর সাথে যুক্ত ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সব সময় দ্রুত বর্ধনশীল। আর এর বৃদ্ধি পাওয়া কখনো থেমে থাকে না মূলত সময়ের সাথে সাথে আরো বড় আকার ধারণ করে। |
৫. টিউমার কখনো ক্যান্সার নয়। | ৫. সব ক্যান্সার টিউমার। |
৬. টিউমারের চিকিৎসা স্বল্প মেয়াদি | ৬. ক্যান্সারের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদী |
ক্যান্সার প্রতিরোধ চিকিৎসা
ক্যান্সার এবং টিউমারের মধ্যে কি পার্থক্য রয়েছে তা আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। এখন এটা জানার পর স্বাভাবিকভাবেই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসবে কিভাবে ক্যান্সার থেকে প্রতিরোধ মিলবে! আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু উপায়।
মূলত আপনি যদি প্রাণঘাতী অসুখ ক্যান্সার থেকে নিজেকে বাঁচাতে চান বা দূরে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই নিজের বিষয়গুলো মাথায় রেখে জীবন অতিবাহিত করা উচিত। যথা:
- তামাক গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন
- নেশা জাতীয় খাবার নাগালের বাইরের রাখুন
- প্রতিদিন শরীর চর্চা করুন
- অতিরিক্ত প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন
- পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান
- নিজের ওজন সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- প্রতি বছরে ক্যান্সার পরীক্ষা করান
- রান্নায় সব সময় কম তেল ব্যবহার করুন
- ক্যান্সারের টিকা গ্রহণ করুন
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
- লাল মাংস পরিমানে কম খাওয়ার চেষ্টা করুন
- স্বাস্থ্যকর জীবন অতিবাহিত করুন।
টিউমার প্রতিরোধ চিকিৎসা
আপনি যদি টিউমার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চান তাহলে টিউমার প্রতিরোধ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেগুলো হলো:
- তামাক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
- সর্বদা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন এবং সর্বদা কর্মঠ থাকার চেষ্টা করুন
- সূর্যের ক্ষতিকর রোশনী টিউমার সৃষ্টির কারণ তাই অতিরিক্ত সূর্যালোক থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
- নিরাপদ যৌন অভ্যাস বজায় রাখুন
মূলত যে কেউ এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে চলাফেরা করলে টিউমার এবং ক্যান্সার উভয় সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সক্ষম। তাই চেষ্টা করুন নিজেদের শারীরিক সুস্থতার কথা চিন্তা করে এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবার।
পরিশেষে: সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, ট্রিমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কি এ সম্পর্কিত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি মূলত এখানেই শেষ করছি। অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আপনাদের মতামত এবং নিয়মিত যেকোনো আর্টিকেলের নোটিফিকেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।