শেয়ার বাজার
|

বাংলাদেশের শেয়ার বাজার সমস্যা এবং শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায়

শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারার মাধ্যম অর্থ্যাৎ শেয়ার বাজার সম্পর্কে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তাদের এই আগ্রহকে মুহুর্তেই নাশ করে ফেলার ক্ষমতা রাখে। যার ফলে শেয়ার বাজারে একজন নতুন ব্যবসায়ী একেবারেই অপ্রস্তুত হওয়ায় লসের মুখে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সমস্যা এবং শেয়ার বাজার থেকে লাভ করার উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে পারলে আশা করি নিরাশ হতে হবে না। চলুন আজ বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সমস্যা এবং শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা যাক এবং জেনে নেওয়া যাক শেয়ার বাজারে সফল হতে পারার সিক্রেট টিপসগুলি কি কি হতে পারে সে-সম্পর্কে।

বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সমস্যা

সমস্যা খুঁজে বের করতে পারলে সমাধান খুঁজে পেতে খুব একটা সময় লাগে না। আপনি যদি সমস্যাটাকেই খুঁজে না পান তবে কিভাবে সেই সমস্যার সমাধান করে সামনে আগাবেন?

চলুন আর্টিকেল শুরুতেই বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সমস্যা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক। এতে করে পরবর্তী সমস্যাগুলি সমাধানে খুব একটা বিপাকে পড়ার চান্স থাকবে না।

অনিরাপদ ব্যবস্থা

বাংলাদেশ এখনো উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে রয়েছে। ফলে শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে অনিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি থেকেই গেছে। যেহেতু এই প্রসেসটিতে মুলধন বিনিয়োগ করার ব্যাপার-স্যাপার রয়েছে সেহেতু নিরাপত্তার দিকটাকে খুব বেশি গুরুত্বের সাথে নিতে হবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। 

তীব্র প্রতিযোগিতা 

শেয়ার বাজারে বর্তমানে তীব্র প্রতিযোগিতার আয়োজন চলছে। যে পারছে সেই হুট হুটহাট এই সেক্টরে প্রবেশ করছে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন প্রতিযোগিতা বাড়ছে, অন্যদিকে তেমন জানার অভাবের কারণে লসের সম্ভাবনা এবং পরিমাণটাও বাড়ছে। বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, গত জানুয়ারি মাসেই এক লক্ষ পনের হাজার নতুন বিও একাউন্ট (শেয়ার লেন-দেনের জন্য একাউন্ট) খোলার ইস্যুটি। 

আপনি জেনে অবাক হবেন শেয়ার বাজারের মতো সেক্টরে বর্তমানে মোট বিও একাউন্ট এর সংখ্যা ২৮ লক্ষ। এতে নিজেদের যুক্ত করছে রাজধানীর চাকুরীজীবি ও ছাত্র থেকে শুরু করে মফ:স্বল শহরের ব্যবসায়ী, উকিল এমনকি গ্রামের অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরাও। বিশেষ করে ইন্টারনেটের বিস্তৃতি, ব্যাংক সুদের হার কমে যাওয়ার মতো ঘটনারগুলির কারণে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। 

আবার তার উপর সবচেয়ে বড় ইস্যু হলো এই সকল বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগই শেয়ার বাজারে টাকা ঢালছেন একেবারে কিছু না জেনেই। অর্থ্যাৎ অনেকেই এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে তাদের এই সেক্টরে প্রবেশের কারণ হিসেবে কাজ করছে শুধুমাত্র তাদের পরিচিত কেউ অল্প সময়ে প্রচুর লাভ করেছেন এই ধরণের কথা শোনার ব্যাপারটি। 

বলা চলে শোনা কথায় কান দিয়েই ঢুকে পড়েছে শেয়ার বাজারের মতো জটিল প্রসেসে। এমনকি তারা লেনদেনও করছেন কোম্পানীগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর না নিয়ে এবং শুধুমাত্র পরিচিত কোন ব্যক্তির পরামর্শে। বলে রাখা ভালো এই ধরণের বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ লাভবান হলেও, অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাও আবার শুধুমাত্র অজ্ঞতার কারণে। 

ভ্রান্ত ধারণা

অনেকেই মনে করেন সব সময় কেনা বেচা হয় না এমন শেয়ার না কেনাই ভালো। যা একটি পুরোপুরি ভুল ধারণার মাঝে পড়ে। এক্ষেত্রে আপনি মাত্র ২/১টি কোম্পানির শেয়ার কেনা বেচাতে সীমাবদ্ধ না থাকার ট্রিকসটি কাজে লাগাতে পারেন। ফলে শেয়ার কেনা-বেচা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হবে না। 

জেনে অবাক হবেন ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জে প্রতি ট্রেডিং দিবসেই নিয়মিতভাবে শতাধিক কোম্পানির শেয়ার কেনা বেচা হয়। প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম ষ্টক এক্সচেঞ্জে নিয়মিতভাবে লেনদেন হওয়া শেয়ারের সংখ্যাও খুব একটা কম নয়। 

একটু টেকনিক্যালি কাজ করে আপনি আপনার বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত বেশি সংখ্যক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র থেকে লাভ অর্জন করতে পারেন এবং এভাবে ঝুঁকিও হ্রাস করা সম্ভব। মনে রাখবেন অতিরিক্ত বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি। ফলে বেশি লেনদেন হয় এমন অতি অল্প সংখ্যক কোম্পানির বাহিরে অতি সস্তায় বেশ কিছু শেয়ার ক্রয় করার সুযোগ প্রায়ই সৃষ্টি হলে সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই টেকনিকটি ফলো করে অনেকেই ঝুঁকিমুক্তভাবে অপেক্ষাকৃত বেশি মাত্রায় লাভবান হতে পারছে। 

অযৌক্তিক তুলনা

আমরা বাঙালিরা যৌক্তিক তুলনার চাইতে অযৌক্তিক তুলনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম হয়ই না বলা চলে। বাংলাদেশী অনেক শেয়ার ব্যবসায়ী খামোকাই ভাবে দুটি কোম্পানি একই পণ্য তৈরি করছে অথচ একটির দাম বেশি অন্যটির দাম কম! এই কমের পেছনের কারণটা কিন্তু এসব ব্যবসায়ীরা খুব একটা জানতে চায় না। জানতে চাইলে হয়তো এই অযৌক্তিক তুলনা করার মন-মানসিকতার পরিবর্তন হতো। 

কোনো কোম্পানি যদি দীর্ঘ দিন যাবত ব্যবসা করে এবং সন্তোষজনক লভ্যাংশ প্রদানের পরেও ঐ কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ এবং লাভের পরিমাণ বেশিও রাখে সমস্যা নেই। কেননা এতে তাদের কোনো ক্ষতিই হচ্ছে না। কিন্তু নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে সেলিংয়ের ব্যাপারটিকেও মাথায় রাখতে হবে। হুট করে অতিরিক্ত মূলধনের প্রজেক্ট এবং অতিরিক্ত লাভের আশা নিয়ে কাজ করতে চাইলে দিনশেষে লসের পরিমাণটাই বাড়তি থাকে এবং বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটছে। 

শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায়

শুধুমাত্র সমস্যার কথা শুনে পালালেন! ঝুঁকি নিলেন না! চেষ্টা করলেন না! কিন্তু দিনশেষে লাভবান হওয়ার স্বপ্নটাই তাড়া করছে! এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না চাইলে জেনে নিন শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায়গুলি কি কি হতে পারে সে-সম্পর্কে। 

কোম্পানি সম্পর্কে জানুন

কোম্পানি সম্পর্কে না জেনে কখনোই শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করতে দৌঁড় দিবেন না। এতে করে লসের মূখে পড়তেই হবে। মনে রাখবেন ভালো কোম্পানী মানেই ভালো শেয়ার না এবং খারাপ কোম্পানী মানেই খারাপ শেয়ার না। এক্ষেত্রে আপনাকে যথেষ্ট সময় নিয়ে কোম্পানির রিসার্চ করতে হবে। তাদের সাথে যুক্ত আছে এমন ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে রিভিউ জানতে হবে। কে কতটুকু কিভাবে লাভ বা লস করলো তা টুকে নিতে হবে। পজেটিভ রিভিউ এর চাইতে যদি নেগেটিভ রিভিউ এর পরিমাণ বেশি থাকে তবে কোম্পানিটিকে অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। 

অতিরিক্ত আশা

আমরা বাঙালিরা লোভের প্রতি বেশ আগ্রহী। ফলে যারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে বা করতে চাইবে তারা সবাই চাইবে লাভ করতে। লাভ করার আশা রাখলেও একই সাথে লাভের নামে অবাস্তব প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। কেননা যখনই আপনি অবাস্তব প্রত্যাশা করবেন তখনই আপনার মধ্যে এই লোভ চলে আসতে পারে। ফলে এই লোভ আপনাকে নিজের অজান্তেই আরও অনেক বড় ঝুঁকি নিতে বাধ্য করবে। সুতরাং যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চান এবং ঝুঁকি কমাতে চান তারা সকল ধরণের উচ্চাশা থেকে বাঁচুন এবং আরো শিখুন। 

বিনিয়োগ করুন অল্প

বেশি বিনিয়োগে বেশি লাভ” এমন বাক্যে বিশ্বাস করে কেউ ফাঁদে নিজেকে আটকাবেন না। কোম্পানি যদি এসম্পর্কিত বিষয়ে আপনাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে তবে সেই কোম্পানি থেকে কেটে পড়ার চেষ্টা করবেন। প্রথমত আপনি নতুন দ্বিতীয়ত মারাত্মক ঝুঁকি! সবমিলিয়ে কোনোভাবেই প্রথম বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি রাখবেন না। এতে করে যদি লসও হয় তবে খুব একটা গায়ে লাগবে না আশা করি৷

শেষ কথা

মনে রাখবেন শেয়ার বাজার এমন একটি জায়গা যেখানে কিছু লোক প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয় আবার কিছু ব্যবসায়ী তাদের সমস্ত অর্থ হারায়। কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনা মানে সেই কোম্পানির শেয়ার-হোল্ডার হওয়া এবং যে শেয়ার করছে তার ঘাঁড়ে বন্দুক রেখে শিকার করা। সুতরাং সাবধান! লোভ না করে জানুন, বুঝুন, শিখুন এবং ঠিক জায়গামতো বিনিয়োগ করুন। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *