শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ
|

শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার

 বর্তমান সময়ে সবাই স্বাস্থ্য সচেতন এজন্য অতিরিক্ত ওজন কমাতে ডায়েট, জিম, ওয়ার্কআউট, ইয়োগা নিয়ে কমবেশি সবাই ব্যস্ত। এরমধ্যে অনেকেই শরীর শুকিয়ে যাওয়া কিংবা অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া নিয়ে ও অনেকেই চিন্তিত রয়েছে। হঠাৎ আপনি যদি লক্ষ্য করেন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন। কোন ডায়েট কিংবা ব্যয়াম ছাড়া শরীর শুকিয়ে যাওয়া মোটেও ভালো লক্ষণ না। এরজন্য অবশ্যই  আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যাওয়া বা ওজন হ্রাস পাওয়া  অত্যন্ত কষ্টদায়ক হতে পারে।

 আপনি হয়ত ওজন বাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু ওজন কিছুতেই বেশি হচ্ছে না আরও দিন দিন ওজন কমে যাচ্ছে। এজন্য প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন কি? কেন শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে? বিভিন্ন কারণে শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সাধারণত অবসাদ, কাম, শারীরিক পরিশ্রম, রোগ এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে। যদি বিনা কারণে ছয় মাসের মধ্যে ৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণে ওজন কমে যায় তাহলে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আপনার স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, তা লক্ষ করুন। কোনো কারণ ছাড়া শরীর শুকিয়ে যাওয়া খুবই উদ্বেগের বিষয়।

শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণঃ 

অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যাওয়া অসুস্থতা কিংবা গুরুতর কোন রোগের চিহ্ন হতে পারে। শারীরিক কিংবা মানসিক অসুস্থতা শরীর শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারন হতে পারে। তাছাড়া বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, হজমের সমস্যা, থায়রয়েড, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হার্ট ফেইলর শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন হতে পারে। এছাড়া আপনার শরীরে হরমোন সমস্যা ,যক্ষ্মা, বা আরো জটিল কোন সমস্যার কারণে শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। তাই বিষয়টিকে অবহেলা না করে দ্রুত কোন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। নিচে শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ আলোচনা করা হলোঃ

১। ডায়াবেটিসঃ   

 ডায়াবেটিস শরীর শুকিয়ে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। সাধারণত টাইপ- ১ ডায়াবেটিস এটি হয়ে থাকে। শরীর গ্লুকোজ এবং অন্যান্য পুষ্টি শোষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । এইভাবে, খাদ্য থেকে সমস্ত পুষ্টি নির্গত হয়, যার ফলে আপনার ওজন হঠাৎ কমে যায়। তবে ইমিউনিটি সিস্টেম অগ্ন্যাশয়ের কোষ গুলিকে আক্রমণ করে যা ইনসুলিন তৈরি করে। ইনসুলিন ছাড়া, আপনার শরীর শক্তির জন্য গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না। এটি উচ্চ রক্তে গ্লুকোজ সৃষ্টি করে। আপনার কিডনি প্রস্রাব এর মাধ্যমে অব্যবহৃত গ্লুকোজ অপসারণ করে। চিনি যেমন আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তখন ক্যালোরি ও চলে যায়। তাই আপনার শরীর দিন দিন শুকিয়ে যায়। 

সুগার বা ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

২। বিষণ্ণতাঃ 

শরীর শুকিয়ে যাওয়ার আর একটি  অন্যতম কারন হচ্ছে বিষন্নতা। 

গ্লুকোজের মাত্রা, রক্তচাপ, বিপাক ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায়  বিষণ্ণতার সাথে লড়াই করা লোকেরা তাদের ক্ষুধা হারিয়ে ফেলে। এজন্য অনেকের শরীর শুকিয়ে যায়। অনেকেই বিভিন্ন কারণে বিষন্ন অনুভব করে। এর কারনে শরীরে অনেক সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিষণ্নতা মস্তিষ্ক এর একই অংশ গুলিকে প্রভাবিত করে যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ক্ষুধা কমাতে পারে, এবং খাওয়ার হারিয়ে যাওয়ার ফলে শরীর শুকিয়ে যেতে থাকে। বিষন্নতা কিছু লোকের মধ্যে, ক্ষুধা বাড়াতে পারে। বিষণ্নতার অনেক লক্ষণ রয়েছে:

  •  বিরক্তি
  • কোন কিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
  • রাত জাগা 
  • অতিরিক্ত ঘুমানো 
  •  মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা
  • অবিরাম দুঃখ 
  • কম শক্তি দুর্বল মনোযোগ

৩। থাইরয়েডঃ 

আপনার থাইরয়েড গ্রন্থি যখন খুব বেশি থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে। তখন এটি অত্যধিক সক্রিয় থাইরয়েড এ বিকাশিত হয়। এই হরমোনগুলি বিপাক সহ শরীর এর অনেক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। যদি আপনার থাইরয়েড অত্যধিক সক্রিয় হয়, তবে আপনার ক্ষুধা থাকলেও আপনি দ্রুত ক্যালোরি কমতে থাকবে। সাধারণত, এই অবস্থা ঘুমের সমস্যা , হৃদস্পন্দন এবং সব সময় গরম অনুভব করে। থাইরয়েড আপনার শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এইভাবে, একটি অত্যধিক সক্রিয় থাইরয়েড বেশি ক্যালোরি পোড়াতে পারে, যার ফলে ওজন হ্রাস পায়।

  • হৃদস্পন্দন 
  • উদ্বেগ
  •  ক্লান্তি
  •  তাপ অসহনশীল
  •  ঘুমের সমস্যা
  • হাত কাঁপুনি
  •  মহিলাদের মধ্যে হালকা পিরিয়ড
  • অত্যধিক আয়োডিন খাওয়া 
  • অত্যধিক থাইরয়েড ঔষধ গ্রহণ  

৪। প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগঃ 

শরীর শুকিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারন হচ্ছে প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ। ক্রোনের রোগ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো জিআই রোগগুলি জিআই ট্র্যাক্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা হজম করার ক্ষমতা হ্রাস করে, যার ফলে ডায়রিয়া হয় এবং ওজন হ্রাস পায়।

৫। পেশী অ্যাট্রোফি বা ক্ষয়ঃ 

একে পেশী ক্ষয়ও বলা হয়, এমন একটি অবস্থা যেখানে পেশী নষ্ট হয়ে যায় বা সঙ্কুচিত হয়। এটি সাধারণত ঘটে যদি একজন ব্যক্তি অপুষ্ট বা শয্যাশায়ী হন। এটি পেশি হ্রাস থেকে অত্যাধিক পরিমানে শরীর শুকিয়ে যাওয়া। সাধারণত যারা কিছু সময়ের জন্য পেশি ব্যবহার করে না যারা ব্যয়াম করে না তাদের এই সমস্যা দেখা দেয়। যাদের পেশির ক্ষয় হয় তাদের ধীরে ধীরে  শরীর শুকিয়ে যায়।  

৬। যক্ষ্মা বা টিবিঃ 

এই সংক্রামক রোগ সাধারণত ফুসফুস কে প্রভাবিত করে। যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ ক্ষুধা কমে যাওয়া। ক্ষুধা হ্রাস পাওয়ার কারণে অতিরিক্ত শরীর শুকিয়ে যায়। 

৭। এইচআইভিঃ 

এই ভাইরাস টি ইমিউন কোষ কে আক্রমন করে যার ফলে সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় প্রায়ই পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় যার ফলে শরীর অনেক শুকিয়ে যায়। 

৮। ক্যান্সারঃ 

মানব কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয় এবং দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি করে এবং এই অবস্থায় সুস্থ টিস্যু এবং অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ক্যান্সার যে আকার এবং পর্যায়ে হয় তার উপর নির্ভর করে এটি ওজন হ্রাস করে। ক্যান্সার অস্বাভাবিক কোষ গুলিকে দ্রুত বিভাজিত করার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, প্রথম লক্ষণ গুলির মধ্যে একটি হতে পারে যা ১০ পাউন্ড পরিমাণ বা তার ও বেশি পরিমানে ওজন হ্রাস অর্থাৎ শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। এটি অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস, পাকস্থলী এবং খাদ্য নালীর ক্যান্সার এর সাথে সাধারণ। ক্যান্সার প্রদাহ বাড়ায়, এটি পেশী ক্ষয় করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রক হরমোন গুলিকে ব্যাহত করে। যার ফলে শরীর একদম শুকিয়ে যায়। 

  • ব্যথা 
  • ত্বকের পরিবর্তন
  • জ্বর 
  • ক্লান্তি

৯।  কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলরঃ 

যখন হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত ​​​​পূর্ণ করতে পারে না, হৃদপিণ্ড যথেষ্ট শক্তি দিয়ে রক্ত ​​পাম্প করতে পারে না, বা উভয়ই। এটি হৃদয়ের এক বা উভয় দিকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনার যদি CHF থাকে তবে আপনার পাচনতন্ত্র পর্যাপ্ত রক্ত ​​গ্রহণ করতে পারে না। এটি বমি বমি ভাব এবং তাড়াতাড়ি পূর্ণতা হতে পারে। উপরন্তু, খাওয়ার সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হার্ট টিস্যুতে প্রদাহ বিপাককে তরান্বিত করে। যার ফলে শরীর অনেক শুকিয়ে যায়। 

  • নিঃশ্বাস এর দুর্বলতা 
  • অবিরাম কাশি
  •  ফোলা 
  • ক্লান্তি 
  • দ্রুত হার্ট রেট

১০। প্যানক্রিয়াটাইটিসঃ

 অগ্ন্যাশয় বিভিন্ন এনজাইম নিঃসরণ করে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ এর ক্ষমতা হ্রাস করে, যার ফলে ওজন হ্রাস পায়।

cause of skinniness

শরীর শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিকারঃ 

১। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুনঃ

আপনার খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন। প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাদ্য আপনার ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । যা শরীর শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। 

২। ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুনঃ 

আপনার খাবারে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করুন। যেমন ক্যাসারোল এবংডিম, পনির এবং স্যুপ  এবং ক্যালোরি আপনার ওজন বৃদ্ধি করে।  ক্যালোরিছাড়াও পুষ্টি সরবরাহ করা উচিত। 

৩। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিনঃ 

সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর ডায়েট এর অংশ হিসাবে, পুরো শস্যের রুটি, পাস্তা এবং সিরিয়াল বেছে নিন; ফল এবং শাকসবজি; দুগ্ধজাত পণ্য; চর্বিহীন প্রোটিন উত্স; এবং বাদাম এবং বীজ। এ সকল পোষ্টের সম্মৃদ্ধ খাবারগুলো আপনার শরীর শুকিয়ে যাওয়া থেকে প্রতিকার পেতে সাহায্য করবে।

৪। ব্যায়াম করাঃ 

ব্যায়াম, বিশেষ করে শক্তি প্রশিক্ষণ, আপনার পেশী তৈরি করে ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ব্যায়াম আপনার ক্ষুধাও উদ্দীপিত করতে পারে।

৫। পর্যাপ্ত ঘুমানোঃ 

আপনার শরীরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুমালে শরীরে রোগ বাসা বাধতে পারে না। পর্যাপ্ত ঘুমালে শরীরের অনেক ব্রিশাম হয়। এতে শরীরের ওজন ঠিক থাকে। 

৬। মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকাঃ  

মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ কমিয়ে ফেলে। যা শরীরের ওজনের উপর প্রভাব পড়ে। মানসিক চাপ আপনার স্বাস্থ্য কে প্রভাবিত করে আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম এর উপর প্রভাব ফেলে। এজন্য মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।

আমাদের শরীর বিভিন্ন কারনে শুকিয়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে অবহেলা করা উচিত নয় । বিভিন্ন বড় কোন সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনারা অন্য কোন টিপস জানতে অবশ্যই কমেন্ট করতে পারেন।  ধন্যবাদ 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *