শীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ কেন
|

শীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ কেন

বিশ্বব্যাপী দই একটি জনপ্রিয় খাবার। আর বাঙালিদের কাছে দই একটি বিশেষ আকর্ষণ। দই ছাড়া যেন খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ হয় না। বাঙালিদের যেন এই দই শেষ পাতে লাগেই। তাছাড়া যেকোন অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় দই থাকবেই। এছাড়া অনেক মানুষ রয়েছেন যারা সকালে দই চিড়া খেয়ে থাকেন। এবং ডায়েট করেন তারা  খাবারের তালিকায় অনেকেই দই রাখেন। কারণ দই ওজন কমাতে সাহায্য করে।

দই রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। হাইড্রোলিক অ্যাসিড, পেপসিন ও রেনিন নিঃসরন করে দই পেটের হজমের সমস্যা দূর করে ও গ্যাস কমায়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের সমস্যা দূর হয়।  সালাড, স্যান্ডউইচে মেনোনিজের বদলে দই ব্যবহার করুন।  দইয়ে ক্যালোরি, কোলেরস্টরল কম এবংদইয়ে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের মতো উপকারী উপাদান রয়েছে।

শীতকাল কিংবা গরমকাল দুই সময়ে মানুষ দই খায়। আমরা অনেকেই হয়ত বাসায় দই বানাতে ও পারি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা শীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ কেন হয়? এটা আমরা সবাই জানি দুধ থেকে দই তৈরি হয় কিন্তু শীতকালে জমতে চায় না অনেক বেশি সময় লাগে। কিন্তু গরমকালে খুব সহজেই দই তৈরি করা যায়। 

জেনে নিন গরমকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার ১০ টি টিপস

শীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ কেন

দুধ থেকে দই তৈরি করতে ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োজন হয়। শীতের কারণে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। আর গরমে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই গরমকালে দুধ থেকে দই তৈরি করা হয় খুবই কম সময়ে এবং সহজে করা যায়। আর শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারনে ব্যাকটেরিয়া স্থায়ীভাবে থাকতে পারে না ফলে ব্যাকটেরিয়া অস্থায়ী হয় অথবা দই তৈরির আগে নিঃশেষ হয়ে যায়। কিন্তু গরমকালে তাপমাএা বেশি থাকে এজন্য দই তৈরির ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই গরম কালে দই তৈরি করতে কম সময় লাগে। এবংশীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ হয়। 

দুধ একটি আদর্শ ও পুষ্টিকর খাবার। আর এই দুধ থেকেই দই তৈরি হয়ে থাকে। এই দই তৈরিতে ল্যাকটোব্যাসিলাস (Lactobacillus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিশেষ ভুমিকা পালন করে। ব্যাকটেরিয়া যত বেশি উৎপন্ন হবে তত তাড়াতাড়ি দই তৈরি হবে। গরমকালে এই ব্যাকটেরিয়া অনূকালে থাকার কারনে তারা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে এর ফলে সহজেই দই তৈরি হয়। 

অপরদিকে শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি কম হয় এতে শীতকালে দই তৈরি হতে সময় অনেক বেশি লাগে। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার কারণে শীতের তুলনায় গ্রীষ্মকালে দই দ্রুত সেট হয়। এই উষ্ণতায় দইতে উপস্থিত অণুজীবগুলি দ্রুত পুনরুৎপাদন করতে শুরু করে যার ফলে এটি আরও বেশি করে। যেখানে শীতকালে ঠাণ্ডা পরিবেশ ল্যাকটোব্যাসিলাসের প্রজনন কমিয়ে দেয় তাই গ্রীষ্মের তুলনায় দই শীতকালে বসতে সময় নেয়।

চিপসের প্যাকেটে কোন গ্যাস থাকে ?

দুধ থেকে দই তৈরির পদ্ধতির নামঃ

দুধ থেকে দই তৈরির পদ্ধতিট নাম হলো গাঁজন। দই তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দুধের গাঁজন জড়িত থাকে। 

দই এ কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকেঃ 

দই এ সাধারণত ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাস থার্মোফিলাস থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটোজ, দুধের প্রাকৃতিক চিনিকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে, যার ফলে দুধ ঘন হয় এবং স্বাদে পরিবর্তন হয়ে যায়।

 দই তৈরির আদর্শ তাপমাত্রাঃ 

দই তৈরি করার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাপমাত্রা। আর এই দই উৎপাদন করার জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াস থেকে ৪৫° সেলসিয়াস। দই গাঁজন করার জন্য আদর্শ তাপমাত্রার পরিসর হল 105°F এবং 115°F (40°C থেকে 46°C)।এই তাপমাত্রা শীতকালে সাধারণত থাকে না সেহেতু গ্রীষ্মকালে এই তাপমাত্রা থাকার কারনে ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও দই তৈরি সহজ হয়ে যায়। এই জন্য আদর্শ তাপমাত্রা কথা মাথায় রেখে দই তৈরি করা উচিত। 

দই জমতে কত সময় লাগেঃ 

দই অনেক ভাবে জমানো যায় সনাতন পদ্ধতিতে যদি দই জমাতে চান তাহলে গরম কোন জায়গায় ঢেকে রাখলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। আর যদি চুলায় দিয়ে দই জমায় তাহলে ২ ঘণ্টার মত সময় লাগে। ওভেনে দই জমতে দিলে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মত সময় লাগে। আপনি এই তিনটি পদ্ধতির যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। 

দই না জমলে কি করতে হবেঃ  

দই যদি না জমে তাহলে যেই বাটিতে দই তৈরি করবেন প্রথমে সেই বাটিতে সামান্য পরিমান দই নিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে এরপর দুধ ঢেলে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে এরপর দই জমতে দিলে দেখবেন দই জমে যাবে। 

দই এর উপকারিতাঃ 

  •   দই ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  • দই রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।  
  • হজমে উপকার করতে সাহায্য করে।  
  • দই হাড় মজবুত করে।
  •  রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 
  • দেহের ছত্রাক প্রতিরোধ করে।
  •  ত্বকের জন্য দই অনেক উপকারি।  
  • চুলের জন্য ও দই অনেক উপকারি। 

মন্তব্যঃ 

দুধকে দইতে পরিণত করার জন্য ব্যাকটেরিয়াগুলির উষ্ণতা প্রয়োজন। তাই গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। এটি ব্যাকটেরিয়াকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে যা তাদের দুধকে দইতে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। … এই কারণেই শীতকালের থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ হয়। আপনাদের এই পোস্তটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন এবং অন্য কিছু জানতে হলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।   আল্লাহ্‌ হাফেজ। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *