এশার নামাজ কত রাকাত এবং কিভাবে পড়তে হয়?
আমরা অনেকেই এশার নামাজ কত রাকাত পরতে হয় সেটা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজ হচ্ছে দিনের শেষভাগের নামাজ। মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হলে এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় তা মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে। তারপরেও এশার নামাজ পড়া যাবে কিন্তু সেটি মাক্রুহ হবে। এশার নামাজ নিয়ে আমাদের অনেকেরই কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। কিংবা আমরা অনেকেই জানিনা এশার নামাজ কত রাকাত এবং কি কি? আর জানলেও বেশির ভাগ মানুষ ভুল জানি যে এশার নামাজ ১৩/ ১৫/ ১৭ রাকাত। কিন্তু হাদিস শরীফে এরকম কোন তথ্য নেই। এসব এক হাদিসে পাওয়া যায় না। রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন আমল দেখে এসব মিলানো হয়েছে। এছাড়া ছোট থেকেই নামাজ শিক্ষার বই গুলোতে ও আমরা দেখেছি ১৫/ ১৩ রাকাত এশার নামাজ দেওয়া রয়েছে। আসুন এসব ভুল তথ্য থেকে বেরিয়ে আসি এবং হাদিসে কি বলা হয়েছে জেনে নিই।
এশার নামাজ কত রাকাত পরতে হয় ও কি কি?
এশার মুল নামাজ হচ্ছে ৪ রাকাত। কারণ হাদিসে শুধু ফরজ নামাজ কে মুল বা বেসিক নামাজ হিসেবে ধরা হয়। যেমনঃ ফজরের নামাজ ২ রাকাত, যোহরের নামাজ ৪ রাকাত ,আছরের নামাজ ৪ রাকাত, মাগরিবের নামাজ ৩ রাকাত।
তবে এশার মোট ৯ রাকাত নামাজ পড়লেই হবে । এখন বলি মোট ৯ রাকাত নামাজ সেগুলো কি কি?
- ৪ রাকাত ফরজ
- ২ রাকাত সুন্নাত
- ৩ রাকাত বিতির
কিন্তু আপনে যদি তাহাজ্জুত নামাজ পড়েন তাহলে তাহাজ্জুত নামাজের পরে ও বিতির নামাজ পড়তে পারেন। অনেক সময় রাসুল (সাঃ) ২ রাকাত নফল নামাজ ও আদায় করতেন।
কিভাবে এশার নামাজ পড়তে হয়
প্রথমে অজু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া পরতে হবে।
জায়নামাজের দোয়াঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাসসামা ওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা মিনাল মুশরিকীন।
এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়তঃ
আমি কিবলামুখী হয়ে এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতেছি।আমি বাংলায় বলেছি বাংলাতে পড়ায় ভাল।আরবিতে ভুল হতে পারে।আপনি চাইলে আরবিতে ও নিয়ত করতে পারেন। তারপর আল্লাহু আকবর বলে
সানাঃ
ছোবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারকাসমুকা ওয়া তা’ আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা- ইলাহা গইরুকা। এরপর হাত বেঁধে
তাআও’উযঃ
আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত-নির রজীম।
তাসমিয়াহঃ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
সুরা ফাতিহাঃ
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ’লামিন আর রহমানির রহিম মালিকি ইয়াওমিদ্দীন,ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইন ইহদিনাস সিরতাল মোস্তাকীম। সিরতাল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম, গইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দল্লীন । আমিন।
এরপর বিসমিল্লাহি রহমানির রহিম বলে অন্য যে কোন একটা সুরা বলতে হবে। সুরা বলা শেষ হলে রুকুতে যেতে হবে। আল্লাহু আকবর বলে
রুকুর তাসবীহঃ
সুবহা-না রব্বিয়াল আজীম। (৩ বার বলতে হবে) এরপর এভাবেই তাসমী পড়তে হবে।
তাসমীঃ
সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। এখন রুকু করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়বেন।
তাহমীদঃ
রব্বানা লাকাল হামদ। এরপর আল্লাহু আকবর বলে সিজদায় যেতে হবে।
সিজদার তাসবীহঃ
সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা। ৩ বার বলে আল্লাহু আকবর বলে উঠে বসতে হবে। এবং আবার আল্লাহু আকবর বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা (৩ বার) বলে উঠে দাড়াতে হবে।
আপনি চাইলে দুই সিজদার মাঝখানে একটি দোয়া আছে।
দোয়াঃ
আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি,ওয়াহদিনি,ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি।
এরপর ১ম রাকাত শেষ ২য় রাকাত শুরু হল । বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম থেকে শুরু করে সিজদাহ পর্যন্ত ঐভাবেই পরে ১ম বৈঠকের জন্য বসবেন ও তাশাহহুদ পাঠ করবেন।
তাশাহহুদঃ
আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াসসালা ওয়াতু ওয়াত তায়্যিবা-তু আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা-তুহু আসসালা-মু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লা-হিসস-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু।
এখন শুধু তাশহহুদ পড়ে ৩য় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবেন। ২য় রাকাত শেষ ৩য় রাকাত শুরু হল।এরপর আবার বিসমিল্লাহ বলে সুরা ফাতিহা বলার পর আর অন্য সুরা পরতে হয় না। (এটা শুধু ফরজ নামাজের সময় ৩য় ও ৪র্থ রাকাতে) এরপর আবার রুকু এবং সিজদাহ করার পর ৪র্থ রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যেতে হবে। ৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতিহা বলার পর রুকু ও সিজদাহ করার পর শেষ বৈঠকের জন্য বসে হাঁটুতে হাত রেখে শাহাদত আঙুল উঠে তাশাহহুদ পরে দরুদ শরীফ ও দোয়া মাছুরা পরবেন। দোয়া মাছুরা শেষ করে আঙুল নামাবেন। এরপর সালাম ফিরাবেন এবং নামাজ শেষ করবেন।
দরুদ শরীফঃ
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ।
দোয়া মাছুরাঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাছীরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুজ যুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী, ইন্নাকা আনতাল গফুরুর রহীম।
সালামঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এরপর হাত তুলে মোনাজাত করতে পারেন।
মোনাজাতঃ
রব্বানা যলামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তার হামলানা কুনান্না মিনাল খসিরীন।
এশার ২ রাকাত সুন্নাত নামাজের নিয়তঃ
আমি কিবলামুখী হয়ে এশার ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতেছি।
এরপর, বিসমিল্লাহি রহমানির রহীম থেকে শুরু করে এশার ২ রাকাত ফরজ যেভাবে পরেছেন সেভাবেই সুন্নাত পরতে হবে। কিন্তু এশার ২ রাকাত ফরজ নামাজ পরে হাঁটুতে হাত রেখে তাশাহহুদ পড়ে উঠে ৩য় রাকাত নামাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু এখানে এশার ২ রাকাত সুন্নাত ৩য় রাকাত নেই। তাই তাশাহহুদ পড়ে দরুদ, দোয়া মাছুরা শেষ করে সালাম ফিরে নামাজ শেষ করতে হয়।
এশার ৩ রাকাত বিতির নামাজের নিয়ত
আমি কিবলামুখী হয়ে এশার ৩ রাকাত বিতির নামাজ আদায় করতেছি।
আল্লাহু আকবর বলে, বিসমিল্লাহ থেকে শুরু করে এশার ২ রাকাত ফরজ নামাজ যেভাবে পরেছেন। সেভাবেই এশার ২ রাকাত বিতির নামাজ পড়তে হবে। তাশাহহুদ পড়ে ওঠে ৩য় রাকাত নামাজের জন্য দাড়াতে হবে। এবং বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে সুরা ফাতিহা তারপর বিসমিল্লাহ বলে আবার অন্য একটা সুরা বলতে হবে। এরপর আবার আল্লাহু আকবর বলে হাত উঠে হাত বেঁধে বিসমিল্লাহ বলে দোয়া কুনুত পাঠ করতে হবে এবং সালাম ফিরে মোনাজাত করে নামাজ শেষ করতে হবে।
দোয়া কুনুতঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নি নাস্তাঈ’নুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা, ওয়া নু’মিনুবিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনী আলাইকাল খইর। ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকা নুসল্লী ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস’আ ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রহমাতাকা ওয়া নাখশা আযাবাকা ইন্না আযাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক।
Tags: eshar namaz rakat, eshar namaz, eshar namaz time