বাংলাদেশে শীতকালে কম বৃষ্টিপাত হয় কেন
|

বাংলাদেশে শীতকালে কম বৃষ্টিপাত হয় কেন

বাংলাদেশ ছয়টি ঋতুর দেশ তা আমাদের সকলের জানা। এই ছয়টি ঋতু হল গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, হেমন্তকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল। বাংলাদেশের ঋতু দুইমাস পর পর পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশে দুই ঋতু অন্যতম গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল। শীতকাল শুরু হয় নভেম্বর থেকে আর শেষ হয় ফেব্রুয়ারি থেকে। শীতকালে সূর্যের অবস্থান দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে। তখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। 

আমরা জানি যে শীতকালের আবহাওয়া শুষ্ক থাকে বৃষ্টি হয়না বললেই চলে। আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশে শীতকালে কম বৃষ্টিপাত হয় কেন?  কারণ বাংলাদেশের শীতকালের আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। শীতকালে মৌসুমি বায়ু সাধারণত স্থল ভাগের উপর দিয়ে আসে বলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম থাকে যার ফলে শীতকালে কম বৃষ্টিপাত হয়। 

আবহাওয়ার বিভিন্ন নিয়ামক রয়েছে। জলীয়বাষ্প হলো এই নিয়ামকগুলোর একটি। জলীয়বাষ্প বৃষ্টিপাতের জন্য দায়ী। বায়ুতে আর্দ্রতা বেশি থাকলে। অর্থাৎ জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে বৃষ্টি হয়। আর বায়ুতে আদ্রতা কম থাকলে অথবা জলীয়বাষ্পের কম থাকলে বৃষ্টিপাত হয় না। 

শীতকালে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারনঃ  

বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার প্রধান কারণ সূর্যের অবস্থানের জন্যই শীতকাল ও গরমকালে বৃষ্টি পাতের এই পার্থক্য। বাংলাদেশে শীতকালে কম বৃষ্টিপাত হয় উত্তর-পূর্ব শুষ্ক মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে। 

শীতকালে বায়ু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। শীতকালে সূর্য বাংলাদেশের দক্ষিণে খাড়াভাবে কিরণ দেয়। তাই সেখানে বায়ুচাপ কম থাকে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের উত্তরে বেশ শীত এবং বায়ুচাপ বেশি। তাই শীতকালে বাংলাদেশের উত্তর দিক থেকে বায়ু দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে এতে জলীয়বাষ্প কম থাকে। এ জন্য শীতকালে বায়ু শুষ্ক থাকে, তাই বৃষ্টিপাত কম হয়।

শীতকালে উত্তর গোলার্ধে সূর্য তিযর্কভাবে কিরণ দেয় বলে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা কম থাকে। তাপমাত্রা কম থাকায় এখানে বায়ুচাপও বেশি থাকে। যেহেতু এই অঞ্চলে উচ্চচাপ বিরাজ করে সেহেতু এই অঞ্চল থেকে বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে যেতে থাকে আর উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি থাকায় বায়ু বেশি জল গ্রহণ করতে পারে না ফলে বৃষ্টি কম হয়।

বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। শীতকালে উত্তর গোলার্ধে সূর্য তীর্যকভাবে কিরণ দেয় বলে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা কম থাকে। তাপমাত্রা কম থাকায় এখানে বায়ুচাপও বেশি থাকে। পক্ষান্তরে, শীতকালে সূর্য বাংলাদেশের দক্ষিণে খাড়াভাবে কিরণ দেয়। তাই সেখানে তাপমাত্রা বেশি থাকে বলে বায়ুচাপ কম থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশের উত্তরে বেশ শীত এবং বায়ুচাপ বেশি থাকায় বায়ু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে এতে জলীয়বাষ্প কম থাকে। এ জন্য বাংলাদেশে শীতকালে বায়ু শুষ্ক থাকে। তাই শীতকালে বাংলাদেশে কম বৃষ্টি হয়।

শীতকালে এশিয়ার অভ্যন্তর ভাগ প্রচণ্ড ঠান্ডা থাকে এবং উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। স্থলভাগের এ উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মহাসাগরের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয়। স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে না। এ কারণে শীতকাল বাংলাদেশে কম বৃষ্টিপাত হয়।

শীতকালে উত্তর গোলার্ধে সূর্য তিযর্কভাবে কিরণ দেয় বলে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা কম থাকে। তাপমাত্রা কম থাকায় এখানে বায়ুচাপও বেশি থাকে। যেহেতু এই অঞ্চলে উচ্চচাপ বিরাজ করে সেহেতু এই অঞ্চল থেকে বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে যেতে থাকে আর উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি থাকায় বায়ু বেশি জল গ্রহণ করতে পারে না ফলে বৃষ্টি কম হয়।

পক্ষান্তরে গরমকালে সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দেয়। তাই সেই সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে বলে বায়ুচাপ কম থাকে। আর সেই কম বায়ু চাপ যুক্ত অঞ্চলটিকে পূরণ করার জন্য আশেপাশের( দক্ষিণ গোলার্ধ) অঞ্চল থেকে বাতাস আসতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ও সমুদ্রের উপর দিয়ে আসতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে এবং এই সৃষ্ট নিম্ন চাপ যুক্ত অঞ্চলে প্রবেশ করে ও মুষল ধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

শীতকালে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারন

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতঃ 

গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। মৌসুমি জলবায়ুর বিশেষ বৈশিষ্ট্যর কারণে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান অত্যাধিক। বাংলাদেশে গড়ে বছরে প্রায় ২১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ দিক থেকে আগত মৌসুমি বায়ুই এ বৃষ্টিপাতের প্রধান কারণ।

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়- সিলেট জেলার লালখানে। আর সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয়- নাটোর জেলার লালপুরে।

বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমানঃ 

বাংলাদেশে শীতকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমান কম থাকার কারণে বৃষ্টি কম হয়। শীতকাল প্রায় বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকে। শীতকালে মোট বৃষ্টিপাতের ২ শতাংশের বেশি বৃষ্টি হয় না। বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ১০ সেন্টিমিটার। 

উত্তর ভারতে অবস্থিত উচ্চচাপ প্রবাহিত স্থল থেকে সমুদ্রমুখী বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বাংলাদেশের সব জায়গায় অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘমুক্ত থাকে এবং আবহাওয়া শুষ্ক বিরাজ করে। শীতকালে সাধারণত উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে এ ঋতুতে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০ মিলিমিটারের ও কম। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম থাকে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা সর্বনিম্ন প্রায় ৩৬ শতাংশ। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *