শীতকালে নারকেল তেল জমে যায় কেন

শীতকালে নারকেল তেল জমে যায় কেন

রূপচর্চায়  ত্বক কিংবা চুলের যত্নে নারকেল তেলের ব্যবহার করে না এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। কারণ নারকেল তেলের উপকারিতা সম্পর্কে মোটামুটি আমরা সবাই অবগত রয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা ভারত এসব দেশে চুলের যত্নে নারকেল তেল বেশি প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু শীতকালে নারকেল তেল ব্যবহার করতে একটু ঝামেলা পোহাতে হয় কারণ শীতকালে নারকেল তেল জমে যায়। 

আর তখন নারকেল তেল ব্যবহার করতে হলে জমিয়ে যাওয়া তেল গলিয়ে নিতে হয়। 

এই নারকেল তেল গলানোর জন্য কেউ রোদে দেয় অথবা কেউ আবার চুলায় দিয়ে গলিয়ে নেয়। এজন্য শীতকালে নারকেল তেল চুলে দিতে হলে একটু বেশি ঝক্কি পোহাতে হয়। তখন অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগে শীতকালে নারকেল তেল জমে যায় কেন? শীতকালে নারকেল তেল জমে আর অন্য তেল জমে না কেন? এরকম অনেক প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে। তাহলে আজকে প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাক 

নারকেল তেল জমে যায় কারণঃ  

নারকেল তেল জমে যাওয়ার প্রধান কারন তাপমাত্রা। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কমে যায়। নারকেল তেল জমে যাওয়ার সাথে তাপমাত্রার আর একটি বিষয়ের সম্পর্ক রয়েছে  সেটি হল স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তাপমাত্রার সঙ্গে তেল জমে যাওয়ার বিষয়টি স্যাটুরেটেড ফ্যাটের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। স্যাচুরেটেড ফ্যাট হচ্ছে এমন ফ্যাট বা চর্বি যার রাসায়নিক উপাদান স্বাভাবিক কক্ষ তাপমাত্রায় কঠিন বা জমাট আকারে থাকে। নারিকেল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি বলে ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নারকেল তেল জমে যায়।  স্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রাণীজ খাবারে সাধারনত বেশি থাকে যেমন ,গরুর মাংস, খাসির মাংস, দুধ বা পনির ইত্যাদি। তবে উদ্ভিজ্জ খাবারেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার নমুনা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম নারকেল তেল , পাম ওয়েল বা তেল। নারকেল তেল ,পাম তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি বলে উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে এ  দুইটি তেল এমন কাছাকাছি তাপমাত্রায় জমে যায়। তাছাড়া নারকেল তেলে  lauric acid থাকে যা সাধারন তাপমাত্রায় উদ্বায়ী। কিন্তু এর অনুগুলো উচ্চ আনবিক শক্তির কারণে তাপমাত্রা কমে গেলে নারকেল তেল জমে যায়। 

অন্য যেসব তেল জমে যায় নাঃ 

বাংলাদেশে বিভিন্ন তেল যেমন সরিষা, সয়াবিন, সূর্যমুখী বা জলপাই তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা কম থাকে। এসব তেল্র আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি বলে সেসব তেল শীতকালে জমে যায় না।

আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট কক্ষ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এজন্য এসব তেল শীতকালে জমে যায় না। নারিকেল তেলেও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে কিন্তু খুবই  কম মাত্রায়। 

নারকেল কি তেল খাওয়া যায়ঃ

বাংলাদেশে নারিকেল তেল তেমন খাওয়া না হলেও শ্রীলংকায় বেশ প্রচলিত। বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য যে নারিকেল তেল বিক্রি করা হয় তাতে সুগন্ধি বা রাসায়নিক উপাদান যুক্ত করা হয় তাই সেগুলো না খাওয়াই ভালো। খাবারের জন্য নারকেল তেল বাড়িতে তৈরি করতে হবে অথবা যারা খাঁটি নারকেল তেল বিক্রি করে তাদের থেকে নেওয়া উত্তম। বাংলাদেশে সাধারণত নারিকেল তেল চুলে বা ত্বকে ব্যবহারের জন্য বেশি বিক্রি হয়। খাওয়ার তেল হিসেবে আনস্যাচুরেটেড তেলকে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে এগিয়ে রাখা হয়, অর্থাৎ যেগুলো তরল অবস্থায় পাওয়া যায়। কারণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। নারিকেল তেল যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে সেটা উদ্ভিজ্জ হওয়ায় সেগুলো উপকারি হিসেবেই দেখছেন অনেক পুষ্টিবিদ। এজন্য আমাদের দেশে যারা ডায়েট করেন তাদের তালিকায় এখন নারকেল তেল খাবারে ব্যবহার করা হয়। তবে বেশি মাত্রায় খেলে পরিশ্রম না হলে সেটা স্বাস্থ্যকর না।  স্যাচুরেটেড বা আনস্যাচুরেটেড, দুই ধরনের ফ্যাটেরই শরীরে প্রয়োজন আছে। তবে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও বেশি গ্রহন করলে বা দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক পরিশ্রম না করলে তখন সেটা ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। প্রাণীজ উৎস থেকে আসা ঘি বা মাখনের  স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে বলে জমাট বেধে থাকে, কিন্তু সেগুলো একটা মাত্রার মধ্যে খুবই স্বাস্থ্যকর।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *