সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
|

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

স্বামী-স্ত্রীর জন্য আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত হচ্ছে দাম্পত্যজীবন। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক।কারণ পারিবারিক জীবনে সুখ, শান্তি পেতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালোবাসার খুব প্রয়োজন।আসলে সংসার সুখী করার জন্য় এবং সুখ-শান্তি বজায় রাখতে দুজনের ভূমিকাই যথেষ্ট  গুরুত্বপূর্ণ। সংসারে দুজন মানুষের সমান ভূমিকা এবং সমান গুরুত্ব থাকা উচিত। কিন্তু সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেকাংশে বেশি।

 একজন ভালো স্ত্রীর যেমন প্রয়োজন, একইভাবে একজন ভালো স্বামীরও ভূমিকা অনেক! বিয়ের পর নারী পুরুষ উভয়ের জীবনে পরিবর্তন আসে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিবর্তন আসে। সংসারকে সুখী করে তুলতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই কিছু গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার! তবে একটি সংসার বাঁচিয়ে রাখার জন্য বা পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় রাখার জন্য নারীরই ভূমিকা বেশি থাকে। এজন্য আমাদের সমাজে একটা প্রবাদ আছে তা হল সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে,  যদি থাকে গুণবাণপতি তার সঙ্গে। যদিও স্বামীরা তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, স্ত্রীরাই সেই পরিবারগুলিকে গড়ে তোলে। এই দিকটি বিবেচনা করলে একজন স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীর চেয়ে অনেক গুণ বেশি।

 নারীরা জাতির অগ্রদূত। নারীরা পরিবারে টেকসই উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মানের চাবিকাঠি। পরিবারে নারীরা যে ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করেন তা হল স্ত্রী, নেতা, প্রশাসক, পারিবারিক আয়ের ব্যবস্থাপক এবং সর্বশেষ কিন্তু মা, মা এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। বৈবাহিক জীবন হল দুই স্বামীস্ত্রীর মধ্যে একটি পারস্পরিক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক, যা এই জীবনে এবং পরের জীবনে শান্তি ও সুখ অর্জনের জন্য। উভয় স্বামী/স্ত্রীর একে অপরের প্রতি অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ, কুরআনে বলেছেন তাদের নারীদের অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর।

আরো পড়ুনঃ রোজা রেখে রক্ত দিলে কি হয়

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ 

দাম্পত্য সুখের জন্য বিয়ের পর স্ত্রীর একটি কর্তব্য হলো স্বামীর বৈধ নির্দেশ পালন করা। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসে রোজা রাখে, শালীনতা বজায় রেখে চলে এবং স্বামীর আনুগত্য করে। সমস্ত স্ত্রীদের অবশ্যই তাদের পরিবারের প্রতি তাদের কর্তব্য সম্পর্কে জানতে হবে। যাতে তারা জ্ঞানের অভাবের কারণে কোনও কিছুকে উপেক্ষা না করে।

ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা বিয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। এটা আমাদের শেখায় যে বিয়ে হল দুই ব্যক্তির মধ্যে একটি পবিত্র বন্ধন এবং এটাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। অতএব, উভয় স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করতে হবে।

স্ত্রীদের জন্য, ইসলাম তাদের স্বামীদের সাথে একটি সুস্থ ও সফল সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বেশ কিছু কর্তব্যের রূপরেখা দিয়েছে।  যারা বিবাহিত নন বা এখনও তাদের সঙ্গী খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি মনে রাখা অপরিহার্য, যে বিয়েকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যার জন্য জীবনের সমস্ত দিক চিন্তাভাবনা এবং বিবেচনার প্রয়োজন। তাই, ইসলামে স্ত্রীর কর্তব্য বোঝার জন্য সকল মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ – পুরুষ বা মহিলা – যাতে তারা জীবনের জন্য তাদের সঙ্গী নির্বাচন করার সময় একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারে ৷সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ

স্বামীর নির্দেশ মেনে চলাঃ  

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে অবশ্যই  স্বামীর নির্দেশ মেনে চলা। স্ত্রীর কখনোই স্বামীর কথা অমান্য করা উচিত নয়। স্বামী যদি আপনাকে ডাকে কিংবা কোন কাজ করতে বলে আপনি যতই ব্যস্ত থাকেন না কেন আপনাকে সেটা রেখে অবশ্যই আপনার স্বামীর কথা আগে শুনতে হবে। কারন ইসলামে এটাই বলা হয়েছে , স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত। এজন্য কখনই স্বামীর কথার অবাধ্য হওয়া যাবে না সবসময় স্বামীর আদেশ মেনে চলতে হবে।

স্বামীর সাথে ভাল ব্যবহার করাঃ 

স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে অবশ্যই স্বামীর সাথে ভাল ব্যবহার করা। স্বামীর সাথে অযথা খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। স্বামীর সাথে জোরে বা উচ্চ স্বরে কথা না বলা, ঝগড়া না করা ,তর্ক না করা। সংসারে শান্তি বজায় রাখতে অবশ্যই স্ত্রীকে বিনয়ী হতে হবে।হাদিসে বলা হয়েছে স্বামীর সাথে অবশ্যই  ভাল ব্যবহার করতে হবে।

স্বামীকে সম্মান করাঃ 

একজন স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে স্বামীকে সম্মান করা। স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে স্বামীর আনুগত্য করা।নবী করিম (সা.) বলেন, আমি যদি কোনো মানুষকে অপর কাউকে সিজদা করার জন্য অনুমতি দিতাম, তবে নারীকে তার স্বামীকে সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম।এ কথা থেকেই বুঝা যায় যে স্বামীকে  ঠিক কতটুকু সন্মান  করা উচিত।

স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করাঃ 

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে  স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। আমার মনে হয় দাম্পত্যজীবন সুখী করতে স্ত্রীর প্রধান কর্তব্য হচ্ছে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। কারণ স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি  সন্তুষ্ট থাকে তাহলে প্রত্যেকটি সংসারে শান্তি বজায় থাকে। স্বামীর সন্তুষ্টিতে রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ কোনো স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট হলে পরকালে সে জান্নাতি। হাদিসে রয়েছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোনো স্ত্রী মারা যায় যে তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

স্বামীর মনে কষ্ট না দেওয়াঃ 

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর কর্তব্য অবশ্যই স্বামীর মনে কোনরকম ভাবেই কষ্ট দেওয়া যাবে না। কারণ যদি কোন স্বামী যদি স্ত্রীর আচরণে মনে কষ্ট পায় তাহলে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে নারী তার স্বামীকে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তাকে জান্নাতের হুররা বলে, হে হতভাগা! তাকে কষ্ট দিও না। কারণ জান্নাতে গেলে স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে থাকতে না চায় তাহলে সে জান্নাতের যেকোনো হুর কে বেছে নিতে পারবে।

স্বামীর দোষ গোপন করাঃ 

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে অবশ্যই স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর দোষ গোপন করা। বেশিরভাগ নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায় যে, তারা স্বামীর দোষ অন্যের কাছে বলে। কিন্তু এটা একেবারে করা উচিত নয়। কারণ স্বামীর দোষ বলা ইসলামে হারাম এবং কবীরা গুনাহ। এতে করে সংসারে কলহ এবং সুখ-শান্তি চলে যায়।

স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করাঃ 

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজ থেকে ফিরে এসে বলেন, ‘আমি জাহান্নাম কয়েকবার দেখেছি, কিন্তু আজকের মতো ভয়ানক দৃশ্য আর কোনো দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি দেখেছি। সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! কিন্তু কেন? তিনি বললেন, নারীদের  অকৃতজ্ঞতার কারণে। সাহাবীরা বলল তারা কি আল্লাহর অকৃতজ্ঞতা অস্বীকার করে? বললেন, না, তারা স্বামীর অকৃতজ্ঞতা করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। এজন্য স্বামীর প্রতি অবশ্যই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে।

স্বামীকে অযথা সন্দেহ না করাঃ 

অযথা সন্দেহ সংসারে অশান্তি ডেকে আনে। সংসারের শান্তি বজায় রাখতে হলে স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীকে অযথা সন্দেহ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনরা, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো।

 আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তাই স্ত্রীদের উচিত, অযথা স্বামীদের কোনো কাজে সন্দেহ না করা।  আল্লাহ তাআলা উম্মাতদের কে পরস্পরের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার মাধ্যমে সুখী পরিবার গঠনে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন।

স্বামীর বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানোঃ 

প্রত্যেকটি স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানো। তাকে বিপদের সময় কখনই একা রেখে যাওয়া উচিত নয়। স্বামীর বিপদের দিনে স্ত্রীকে পাশে বসে অবশ্যই সান্ত্বনা দিতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস করতে বলতে হবে। কারন একমাত্র আল্লাহ্‌ তায়ালায় পারে বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

স্বামীর জন্য সাজগোজঃ 

স্ত্রীদের কর্তব্য হচ্ছে বাড়িতে স্বামীর জন্য সাজগোজ করে বসে থাকা। স্বামীর জন্য সাজগোজ করলে স্বামী অবশ্যই খুশি হবে। একবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সফর থেকে ফিরে মদিনায় আসার পর বাড়িতে না গিয়ে সাহাবিদের বললেন, তোমরা এখানে থেমে যাও এবং বাড়িতে খবর পাঠাও যেনো তোমাদের স্ত্রীরা নিজেদের তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখতে পারে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীরা রাসুলের সামনে নিজেদেরকে সুন্দরভাবে  উপস্থাপন করতেন।’ (বুখারি)

স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাঃ 

 সংসারে শান্তি বজায় রাখতে স্ত্রীদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। সুখী পারিবারিক জীবনের জন্য স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের প্রতি স্ত্রীর এবং স্ত্রীর আত্মীয়দের প্রতি স্বামীর সুসম্পর্ক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতি ইসলামে খুব বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা সম্পর্কে খুব কড়াকড়ি বলা হয়েছে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সংসারে শান্তির জন্য আমল করাঃ 

সংসারে শান্তি বজায় রাখতে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে হবে। শয়তানের প্ররোচনাই মূলত ঘরের এসব অশান্তি ও কলহ-বিবাদের মূল কারণ। আর শয়তানের ধোঁকা-প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকতে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী আমল ও দোয়ার বিকল্প কিছুই নেই। এজন্য ঘরে ঢুকলে  স্বামীকে সালাম দিতে হবে। কারন সালাম মানে শান্তি। প্রত্যেকটি সংসারে হারাম এবং গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।

ইসলামে একজন স্ত্রীর ভূমিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় কারণ তিনিই শারীরিক ও মানসিকভাবে সংসার চালান। ইসলামে স্ত্রীর কর্তব্য অবহেলিত হলে একটি পরিবারকে একটি পরিবার বলে মনে হয় না। আর পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হলে সেই নির্দিষ্ট পরিবারে কোনো ইসলাম অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে আমল করার এবং দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *