ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার | ডেঙ্গু হলে করণীয়
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং ডেঙ্গু হলে করণীয় কি জানতে হবে সকলকে। কেননা ডেঙ্গু জ্বর মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে। আর তাইতো মারাত্মক রোগ গুলোর তালিকায় অন্যতম হিসেবে অবস্থান করছে ডেঙ্গু রোগ।
অনেকেই রয়েছেন যারা জ্বর হলে খুব একটা পাত্তা দেন না। কিন্তু আপনার যদি ডেঙ্গু হয়ে থাকে তাহলে সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিতে হবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং মানতে হবে তাদের নির্দেশনাবলি। নইলে বিপদজনক পর্যায়ে যেতে পারে আপনার সেই ডেঙ্গু নামক আতঙ্কিত রোগটি।
তাই আসুন আজকের আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেই– ডেঙ্গু রোগ কি? ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কি, ডেঙ্গু রোগ হলে করণীয় এবং ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে খুঁটিনাটি।
জেনে নিনঃ সুগার বা ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ডেঙ্গু রোগ কি?
এডিস মশার কামড়ে মানব শরীরে যে রোগটি বাসা বাঁধে তাই হচ্ছে ডেঙ্গু রোগ। মূলত এই মশা কামড় দেওয়ার চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় উক্ত ব্যক্তি। এবার আসুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
প্রত্যেকটি রোগের আলাদা আলাদা লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। যে লক্ষণগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই বুঝে উঠতে পারবেন যে আপনার কোন রোগটি হয়েছে। আলোচনার এ পর্যায়ে মূলত আমরা ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো তুলে ধরব। তাহলে আসুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগে সাধারণত একজন মানুষের শরীরে কোন কোন লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে সে সম্পর্কে।
ডেঙ্গু রোগের সাধারণ উপসর্গ:
- শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ থেকে ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ অতিরিক্ত জ্বর
- তীব্র মাথাব্যথা
- চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব
- প্রচন্ড বমি বা বমি বমি ভাব
- চামড়ায় লালচে দাগ এর আগমন
- ক্ষুধামন্দা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মুখে অরুচি
- পেশী ও গাটে গাটে ব্যথা
- রক্তচাপ কমে যাওয়া
- হৃদস্পন্দনের হার কমে যাওয়া
- ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ফুসকুড়ির আগমন
- গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
- শরীরে অস্বস্তিকর যন্ত্রণার অনুভব।
তো আপনার শরীরের যদি কখনো এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে এখনই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। মনে রাখবেন ডেঙ্গু সাধারণ কোন জ্বর নয়। ডেঙ্গু জ্বর অত্যন্ত বিপদজনক একটি জ্বর, যা একজন মানুষকে মৃত্যুর মুখে পতিত করার ক্ষমতা রাখে।
অতএব সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে মেনে চলতে হবে সঠিক নির্দেশনা। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আর তাই আর্টিকেলের পরবর্তী অংশটুকু স্কিপ না করে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা এ পর্যায়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব– মশা কামড়ানোর কতদিন পর ডেঙ্গু হয়, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত কতদিন থাকে এবং ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী।
ডেঙ্গু জ্বরের বাহক কোন মশা
বিভিন্ন ধরনের মশা রয়েছে, কিন্তু কোন মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরের বাহক কোন মশা? খুবই সাধারণ একটা প্রশ্ন এটি। এই মশাকে প্রতিরোধের জন্য অথবা এই মশা থেকে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য অবশ্যই আমাদের ডেঙ্গু জ্বরের বাহক হিসেবে কোন মশা অবস্থান করছে সেটা জানা জরুরী।
আর তাছাড়াও, সাধারণ জ্ঞানমূলক প্রশ্নের সচরাচর এ প্রশ্নটি এসেই থাকে। আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন অথবা চাকরিপ্রার্থী হয়ে থাকেন তাহলে ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী সঠিক মশার নাম জেনে রাখা জরুরী। মূলত বিভিন্ন ধরনের মশার মধ্যে ডেঙ্গি রোগের বাহক এডিস মশা। ডেঙ্গি বা প্রচলিত ভাষায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস ইজিপ্টাই জাতের মশা। মূলত এই ভাইরাসবাহী মশার কামড়ে ডেঙ্গির/ডেঙ্গুর জীবাণু একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পরে আর তাই আগমন ঘটে নানা সমস্যার, যা আমরা উপসর্গ হিসেবে ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি।
মশা কামড়ানোর কতদিন পর ডেঙ্গু হয়
এডিস মশার কামড়ানোর প্রায় চার থেকে দশ দিন পরে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো মানুষের শরীরে প্রকাশ পায়। মানে আপনার শরীরে যদি ডেঙ্গু রোগের আবির্ভাব ঘটে তাহলে আপনি ৪-১০ দিনের মধ্যে উপলব্ধি করতে পারবেন
অর্থাৎ আপনার শরীরে প্রচন্ড জ্বর আসবে, মাথা ব্যথা বা মাথার যন্ত্রণায় ভুগবেন, চোখ মুখ লাল হয়ে যাবে এবং আপনার শরীরে ফুসকুড়ি জাতীয় নানা সমস্যার আবির্ভাব ঘটবে, জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে অথবা পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা গুলোর সম্মুখীন হতে পারেন।
আর তাই যদি চার থেকে দশ দিন পরবর্তীতে আপনার মাঝে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে ভয় না পেয়ে এবং দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং তাদের নির্দেশনা মোতাবেক ঔষধ সেবন করুন।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেটা কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এ সম্পর্কে জেনে রাখলে অনেকটাই বিপদ এড়িয়ে চলতে পারবেন। কেননা অনেকেই হয়তো জানেন না ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি প্রথম পর্যায়ে খুব বেশি বিপদের মুখে পতিত হন না তবে দ্বিতীয়বার যদি ডেঙ্গু হয় তাহলে সেটা অত্যন্ত ভয়াবহ আকারে ফিরে আসে।
আপনার শরীরে যদি প্রথম অবস্থায় ডেঙ্গু রোগের সূচনা ঘটে তাহলে সেটা দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে অর্থাৎ আপনার শরীরে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো ২-৭ দিন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে ফুটে উঠবে। এরপর যদি পুনরায় সেটা ফিরে আসে তাহলে তা থেকে সরে উঠতে বেশ সময় লাগবে এমনকি সঠিক সময় যদি আপনি চিকিৎসা গ্রহণ না করেন তাহলে রোগের ভয়াবহতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে।
তাই আমরা পরামর্শ দিব– যদি আপনার শরীরে ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে এবং আপনি সেটা প্রথম অবস্থাতেই বুঝতে পারেন তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং তাদের নির্দেশনা মাফিক ওষুধ সেবন করুন এবং তাদের পরামর্শ গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
আর যদি দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর আপনি বুঝতে পারেন তাহলে এক মুহূর্ত দেরি না করে আপনি আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করুন। আশা করা যায় আপনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন। এবার আসুন ডেঙ্গু হলে করণীয় কি এবং ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া কোন চিকিৎসা রয়েছে কিনা পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে এবং কি কি খাবার পরিহার করতে হবে সে সম্পর্কে অল্প বিস্তর জেনে নেওয়া যাক।
ডেঙ্গু হলে করণীয়
ডেঙ্গু রোগ হলে করণীয় হিসেবে আপনাকে বেশ কিছু কাজ করতে হবে কেননা ওষুধ সেবনের পাশাপাশি অবশ্যই যে কোন রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য একজন মানুষের নিজ দায়িত্বে কিছু করণীয় কাজ করার প্রয়োজন পড়ে। এতে করে যে কোন রোগ জীবাণু থেকে নিজেকে দ্রুত সেরে উঠানো সম্ভব হয়।
আর তাই আলোচনার এ পর্যায়ে জেনে নিন আপনি মূলত ডেঙ্গু হলে বাড়িতে কি কি করবেন সেই সাথে আরো জেনে নিন কোন কাজগুলোকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
ডেঙ্গু রোগ হলে করণীয় কাজ
- সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিবেন
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন
- তরল জাতীয় খাবার গুলো অধিক পরিমাণে খাবেন
- জ্বরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সেবন করবেন
- ডেঙ্গু জ্বরের কারণে গা ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করবেন না
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন
- মনমরা হয়ে থাকবেন না অর্থাৎ হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করবেন
- রোগকে জটিল মনে করবেন না
- যেটা খেতে ইচ্ছে করে সেটা খাবেন (তবে এ ক্ষেত্রে কিছু খাবার এভোয়েড করতে হবে যেটা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে আলোচনা করছি)
- কখনোই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন না
- অতিরিক্ত রক্তচাপ কমে গেলে এ পর্যায়ে স্যালাইন নিতে পারেন।
এক কথায় যদি আপনার ডেঙ্গু রোগটি দ্বিতীয় পর্যায়ে হয়ে থাকে এবং সেটা অনেকটাই গুরুতরও পর্যায়ে চলে যায় তাহলে আপনাকে হাসপাতালে শিফট হতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা মাফিক ওষুধ গুলো খেতে হবে এবং তাদের পরামর্শ মানতে হবে।
আর আপনি যদি বাড়িতে থাকেন এবং আপনার ডেঙ্গু রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে থাকে তাহলে বাড়িতে বসে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে কিছু চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন যেটা আমরা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে তুলে ধরছি। পাশাপাশি নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে এবং উদ্বিগ্নতা কমাতে নিজেই নিজের দায়িত্ব নেবেন।
আর যদি আপনার পরিবারের বা আপনার আপনজনের ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে তাহলে চেষ্টা করবেন তাদেরকে ভয় মুক্ত রাখবার এবং হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবার। আশা করা যায় খুব দ্রুত ডেঙ্গু রোগের কবর থেকে পরীক্ষার মিলবে আপনার আমার এবং আমাদের মত সকলের।
ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
ইতিমধ্যে আমরা ডেঙ্গু রোগ হলে করণীয় কি কাজ রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করেছি অর্থাৎ আপনি ঘরে বসে মূলত আপনাকে সুস্থ করার জন্য বা ডেঙ্গু রোগীকে সুস্থ রাখার জন্য যে কাজগুলো করতে পারবেন সেগুলো আপনাকে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য নিজের পয়েন্টগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
✓পানি পান করুন
ডেঙ্গু রোগে রোগীর শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আর তাই ডেঙ্গু রোগ থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে চাইলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পাশাপাশি বলা যায় আরেকটি বেশি পানিই পান করতে হবে। তাই চেষ্টা করুন ডেঙ্গু রোগকে পর্যাপ্ত অধিকাংশ পানি পান করাবার।
✓ শরীরের ব্যক্তিগত যত্ন নিন
অনেকেই রয়েছেন যারা অসুস্থ হয়ে পড়লে সব সময় শুয়ে থাকেন এমনকি নিজের শরীরের একদমই যত্ন নিতে চান না। এটা আপনার শারীরিক দুর্বলতার কারণে হতে পারে অথবা আপনার অভ্যাসও হতে পারে।
তাই সবসময় নিজেকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন এবং শরীরের ব্যক্তিগত যত্ন নিন। আপনার শরীরের যে অংশে মশা কামড়িয়েছে চাইলে সেখানে আপনি সাবান পানি দিয়ে ভালো হবে ধুয়ে ফেলতে পারেন। কেননা কখনো কখনো মশার কামড়ে সেখানে চুলকোতে চুলকাতে ঘা এর সৃষ্টি হয়।
আবার অনেকেই এটা লক্ষ্য করবেন যে যদি মশা কামড়ায় তাহলে সেখানে ঠান্ডা পানির ছিটে দিলে অনেকটাই ব্যথা বা যন্ত্রণা ঠিক হয়ে যায়। তাই এই কাজটা করলে আপনি অনেকটাই স্বস্তি পাবেন। তাছাড়াও নিজের শরীরের ব্যক্তিগত যত্ন নেওয়া যেকোনো রোগ থেকে সেরে ওঠার জন্যই প্রয়োজন।
✓ কাপড় পরিষ্কার রাখুন
আপনি যে কাপড়টি পরিধান করছেন রোগে আক্রান্ত কালীন সময়ে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ওই কাপড়টি পরিষ্কার রাখবেন এবং সেটা সাবান পানি দিয়ে বারবার ধোবার। পরিষ্কার জামা কাপড় পরিধান করলে আপনি পরিষ্কার থাকতে পারবেন এবং অনেকটাই ভালো অনুভব করবেন।
তাছাড়াও ডেঙ্গু রোগ হচ্ছে একটি ভাইরাস বাহিত রোগ যেটা আপনার পরিবারের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই নিজেকে দ্রুত সারিয়ে উঠানোর জন্য নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি নিজের কাপড় গুলো নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে রাখার চেষ্টা করুন।
✓ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান
চেষ্টা করুন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী সময়টুকু সকল প্রকার পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় রাখবার। কেননা আপনি যদি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারগুলো খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি নিজেকে শারীরিকভাবে সাপোর্ট দিতে পারবেন।
আর ডেঙ্গু রোগে যারা আক্রান্ত হয় তাদের শরীরে মূলত পুষ্টির স্তর দ্রুত হারে কমতে থাকে। তাই খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিলে এটা আপনাকে একদমই পেরে বসবে। অতএব চেষ্টা করুন পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় রাখবার এবং সেগুলো পরিমাণ মতো খাবার।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
ইতোমধ্যে আমরা পুষ্টিকর খাবারের কথা উল্লেখ করেছি। তবে কিছু কিছু রোগ হলে হাতেগোনা কিছু খাবার কখনো কখনো এভোয়েড করতে হয়। তাই অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এবং কি কি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এজন্য আলোচনার এ পর্যায়ে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের জন্য ডায়েট বা খাবার তালিকা আমরা সাজেস্ট করব।
জেনে নিন ডেঙ্গু জ্বর হলে আপনি কোন খাবারগুলো বেশি পরিমাণে খাবেন এবং কোন খাবারগুলো একদমই খাবেন না।
ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবার:
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। যেমন:- শাকসবজি বিভিন্ন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল।
- জিংক জাতীয় খাবার অর্থাৎ মটরশুঁটি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবার
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অর্থাৎ লাল মাংস, মুরগির মাংস, টার্কির মাংস, কলিজা, টুনা মাছ, ব্রোকলি, ওটমিল, ডার্ক চকলেট সহ-প্রভৃতি খাবার
- তরল জাতীয় খাবার যেমন- ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ভাতের মার, স্যালাইন, বিভিন্ন ফলের জুস ইত্যাদি ইত্যাদি।
মনে রাখবেন– ডেঙ্গু রোগের তীব্রতাকে প্রায় 90% কমিয়ে ফেলতে সক্ষম তরলজাতীয় খাবারগুলো। তাই এ পর্যায়ে আপনি তরল জাতীয় খাবার গুলো অবশ্যই অবশ্যই বেশি পরিমাণে খাবেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন যেটা আমরা আবারও উল্লেখ করছি।
এবার যেমন ডেঙ্গুজ্বর হলে আপনাকে কোন খাবারগুলো একদমই অভয়েড করতে হবে অর্থাৎ ডেঙ্গু হলে অনুচিত খাবার কোনগুলো!
- ভাজাভুজি
- তৈলাক্ত খাবার
- চর্বি এবং আমিষ জাতীয় খাবার
মূলত চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে বলেছেন সহজে হজম হয় না এমন খাবারগুলো ডেঙ্গু রোগীদের একদমই খাওয়া উচিত নয়। আর আপনি নিশ্চয়ই জানবেন ভাজাভূজি, তৈলাক্ত খাবার এবং চর্বি ও আমিষ জাতীয় খাবার গুলো মানুষের হজম হতে সমস্যা হয়। তাই এ সময় খাদ্য তালিকা থেকে এই খাবারগুলোকে বাদ দিবেন।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত এই প্রশ্নটি অধিক বেশি করে থাকেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা। মানে আপনার ডেঙ্গু হয়েছে এখন ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার কতদিন পরে আপনি গোসল করতে পারবেন! ডেঙ্গু জ্বর পুরোপুরিভাবে সেরে ওঠার পর গোসল করবেন নাকি আগেও গোসল করা যাবে?
আপনার সাধারণ জ্বর হলে যেমন আপনি গোসল করেন ঠিক একইভাবে ডেঙ্গু জ্বর হলেও আপনি গোসল করতে পারবেন। আর এই টিপস আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা যে অতিরিক্ত জ্বর হলে মাথায় পানি ঢালতে হয়। কেননা কখনো কখনো ওষুধেও কাজ করে না।
তাই ডেঙ্গুজ্বর যদি আপনার চরম পর্যায়ে পড়ে যায় তাহলে মাথা ব্যথা দূর করতে এবং জ্বরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য মাথায় পানি ঢালতে পারেন, শরীর গামছা ভিজিয়ে মুছে ফেলতে পারেন এবং চাইলে রোগীকে গোসল করাতেও পারেন।
তবে চেষ্টা করবেন খুব দ্রুত গোসল শেষ করার পর ভেজা কাপড় গুলো পাল্টে ফেলবার। কেননা অনেকক্ষণ যাবত ভেজা কাপড় শরীরে থাকলে পুনরায় জ্বর চলে আসতে পারে। আর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা খুবই খারাপ লক্ষণ। এবার আসুন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস বা পরামর্শ জেনে নেই।
ডেঙ্গু জ্বর কখন হয়
ডেঙ্গুজর সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে অধিক বেশি হয়ে থাকে। মানে গরমের শেষ এবং বর্ষার শুরুতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অধিকার এ বেড়ে যায়। আর এটা যেহেতু এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে এটা বুঝতে বাকি নেই যে মশা সাধারণত বর্ষাকালে ডিম পাড়ে এবং অধিক বেশি বিস্তার লাভ করে। আর তাই ডেঙ্গু রোগ বা ডেঙ্গুজ্বর মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বেশি হয়ে থাকে।
কোন সময় ডেঙ্গু রোগ হয় না বললেই চলে
সাধারণত শীতকালে ডেঙ্গু রোগ একদমই হয় না বললে চলে। কেননা শীতকালে মশার প্রকোপ খুব একটা থাকে না আর তাই গরম এবং বর্ষাকালে ডেঙ্গু রোগীদের শরীরে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং ডেঙ্গু রোগ অধিক বেশি ছড়িয়ে পড়ে।
ডেঙ্গু রোগের তীব্রতা বোঝার উপায় এবং চিকিৎসা করার সঠিক সময়
ডেঙ্গু রোগের তীব্রতা বুঝবেন কিভাবে, আপনার ডেঙ্গু হয়েছে আপনার দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে এখন কথা হচ্ছে আপনি মূলত কোন সময়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন! তাই আলোচনার শেষ পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগের তীব্রতা বোঝার উপায় এবং ডেঙ্গু চিকিৎসা গ্রহণের সঠিক সময় সাজেস্ট করব আপনাদেরকে।
ডেঙ্গু রোগ হলে আপনার মাঝে ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ দেখা দেবে। আর হাতে গোনা যদি তিনটি লক্ষণ আপনার মাঝে প্রকাশ পায় তাহলে দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে আপনি নিকটস্থ কোনো চিকিৎসকের কাছে যাবেন এবং আপনার সমস্যাগুলো বিস্তারিত খুলে বলবেন। সেই লক্ষণগুলো হচ্ছে:-
- অতিরিক্ত জ্বর
- মাথাব্যথা এবং
- শরীরে সোপ সোপ দাগ
কেননা এই তিনটি লক্ষণ ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা। আর তাই এই উপসর্গগুলো আপনার নজরে আসলে আপনি চিকিৎসকের কাছে যাবেন। আর যদি এটা আপনি স্বাভাবিকভাবে নিয়ে থাকেন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আপনার ডেঙ্গু হয়ে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে আপনার মাঝে ভয়ংকর-বিপতচ্ছিন্ন হিসেবে কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পাবে। সেগুলো হলো-
- তীব্র পেটব্যথা,
- দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া,
- কিছু খেতে না পারা,
- নাক ও দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ,
- বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ,
- শ্বাসকষ্ট,
- প্রচণ্ড দুর্বলতা,
- অস্থিরতা কিংবা খিটখিটে ভাব,
- হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন,
- অসংলগ্ন কথাবার্তা,
- জ্বরের তাপমাত্রায় বিশাল তারতম্য ইত্যাদি।
আর এ পর্যায়ে এক মুহূর্ত দেরি না করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এমনকি আপনার কিছুদিনের জন্য হসপিটালে শিফট হওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। আর হ্যাঁ কখন ডাক্তার দেখাবেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলব– যখন আপনার মাঝে সর্বোচ্চ বিপদ চিহ্নগুলো প্রকাশ পাবে যেগুলো আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখ করলাম ঠিক সেই সময় অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, যেহেতু ডেঙ্গু হচ্ছে অত্যন্ত বিপদজনক একটি রোগ এবং এই রোগে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘুরছে তাই অবশ্যই ডেঙ্গুকে সাধারণ রোগ বা সাধারণ জ্বর ভেবে ভূল করবেন না।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং নিজেদের যত্ন নিন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।