মেয়েদের সাদা স্রাব সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন – সাদা স্রাবের ঘরোয়া সমাধান
সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। মহিলারা প্রায়ই যোনি থেকে ঘন,অতিরিক্ত এবং আঠালো সাদা স্রাব অনুভব করে। সমস্যাটি বেশিরভাগ কিশোরী মেয়েরা সুম্মখীন হয়। সামান্য সাদা স্রাব একটি সমস্যা নয় কিন্তু এটি খুব উদ্বেগের বিষয়। লজ্জার কারণে আমাদের এ বিষয়ে অনেকের জানা- শোনা অল্প। ফলে দেখা যায় অনেকে অসুস্থ হয়ে বাসায় বসে আছেন আবার অনেকে সুস্থ কিন্তু তারাও সাদা স্রাব নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন?
আমি আজকে বলব স্বাভাবিক স্রাব কত প্রকারের হতে পারে। আর তারপর বলব ৫ ধরণের স্রাব যেগুলা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
স্বাভাবিক সাদা স্রাব দইয়ের মত ঘন হতে পারে। তারপর একটু পাতলা হতে পারে, একদম দুধ বা পানির মত পাতলা হতে পারে, আবার ডিমের সাদা অংশের মত ও স্রাব হতে পারে। দিনে ২-৫ মিলি সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক। ৫মিলি হলে কিন্তু সাদা স্রাব অনেকখানি অংশ ভিজে যায়। যার স্রাব এতটুকু যাবে সে ভাবতে পারে তার অতিরিক্ত স্রাব যাচ্ছে কিন্তু এটাও স্বাভাবিক।
অর্থাৎ স্রাব একেকজনের একেক রকম যেতে পারে। একজনের জন্য যা স্বাভাবিক আরেকজনের জন্য তা নাও হতে পারে। আবার একই মানুষের মাসের একেক সময় একেক রকমের স্রাব যায়।আপনার জন্য যতটুকু স্রাব স্বাভাবিক তার থেকে বেশি পরিমান স্রাব যদি হয় তাহলে সেটা কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে? তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
অনেকে আবার মনে করেন সাদা স্রাব বন্ধ করবো কিভাবে? কেউ ভাবে স্রাব যাওয়ার কারনে তার শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, ওজন কমে যাচ্ছে। এগুলো ভুল ধারণা। স্রাব শরীরের কোন ক্ষতি করে না বরং শরীরের জন্য উপকারী।
স্রাবের দুইটি উপকারের কথা বলিঃ
- মাসিকের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশান হতে সুরক্ষা দেয়।
সাদা স্রাব বন্ধ করার কোন প্রয়োজন নাই। বরং সাদা স্রাব থাকা টায় স্বাভাবিক। প্রায় সব মেয়েরই সাদা স্রাব যায়। এতক্ষণ স্বাভাবিক স্রাবের কথা বললাম এখন অস্বাভাবিক স্রাবের কথা বলব।
এখন এমন কিছু স্রাবের নমুনার কথা বলব যেগুলা স্বাভাবিক নয় রোগের লক্ষণ।
- প্রথমে যে স্রাব এর কথা দেখতে সাদা কিন্তু অনেক বেশি ঘন,ভিতরে চাকাচাকা কিংবা গোঁটাগোটা। এমন স্রাবের সময় মাসিকের রাস্তায় বেশ চুলকানি হয়।প্রশাব করার সময়,সহবাস করার সময় ব্যথা হতে পারে, জ্বালাপোড়া হতে পারে। এগুলো একধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশান।
- ধুসর বা ছাই রঙের স্রাব এ স্রাবের খুব দুর্গন্ধ হয় পচা মাছের মত। কিন্তু তাদের সাধারণত ব্যথা থাকে না এবং চুলকানিও থাকে না।
- সবুজ রঙের স্রাব। এ রকম সবুজ রঙের স্রাব গনেরিয়া রোগ হলে দেখা দিতে পারে। এটি হলে অনেকের তলপেটে ব্যথা হয়,কারোকারো প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয়। এ রোগের ব্যাপারে একটু সাবধান কারণ জরায়ুতে ছড়িয়ে বাচ্চা হতে সমস্যা হয়। সময়মত অ্যান্টিবায়োটিক নিলে একদম সেরে যায়। গনেরিয়া রোগে স্রাব সবুজ না হয়ে হলুদ ও হতে পারে।
- হলুদ রঙের স্রাব হলে সাধারণত প্রস্রাব ফেনা ফেনা হয়, প্রস্রাবের রাস্তা চুলকায়।
- লাল স্রাব মাসিকের আগে বা পরে হলে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু যাদের মাসিক বন্ধ থাকে কিংবা মাসের মাঝামাঝি সময় যদি লাল স্রাব দেখা দেয়। তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে কারন এগুলা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
সাদা স্রাবের ঘরোয়া সমাধান
সাদা স্রাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন, যোনিপথ পরিষ্কার না রাখা, অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার কারনে, একাধিক পুষ্টির ঘাটতি হলে সাদা স্রাবের সমস্যা দেখা দেয়। সাদা স্রাবের কিছু ঘরোয়া সমাধান রয়েছে, তা নিচে দেওয়া হল।সাদা স্রাবের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই এই টিপস ফলো করতে পারেন।
১. মেথি
মেথিদানা পানিতে সিদ্ধ করে খেলে সাদা স্রাবের সমস্যা দূর হয়। আধা লিটার পানিতে পরিমানমত মেথি নিয়ে জাল করতে হবে যতক্ষণ না পানি অর্ধেক হয়ে যায়। তারপর ঠাণ্ডা হলে পান করতে হবে।
২. ঢেঁড়স
অনেকের প্রিয় খাবার এবং এটি ভিন্ডি নামে ও পরিচিত। সাদা স্রাবের আরেকটি অন্যতম প্রতিকার হল ঢেঁড়স। কয়েকটি ঢেঁড়স পানিতে সেদ্ধ করে চটকিয়ে খেতে পারেন। অনেকে আবার দইয়ের সাথে মিশিয়ে খায়।
৩. আদা
সাদা স্রাবের অন্যতম একটি ঘরোয়া সমাধান আদা। আদা স্রাবের চিকিৎসায় খুবই ভাল কাজ করে। আপনি শুঁকনো আদার গুঁড়া কিংবা কাঁচা আদা নিতে পারেন। আধা লিটার পানিতে ছোট একটি আদা অথবা ২ চামচ আদার গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন। পানি কমে অর্ধেক হয়ে গেলে জ্বাল বন্ধ করতে হবে। পানি ঠাণ্ডা করে পান করতে হবে। তিন সপ্তাহ নিয়মিত পান করতে হবে।
৪. ভাতের মাড়
সাদা স্রাবের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ভাতের মাড় পান করতে হবে। ভাতের মাড় বের করে ঠাণ্ডা করে পান করতে হবে।ভাতের মাড় পান করলে সাদা স্রাবের সকল সমস্যা সমাধান হবে।
৫. ধনিয়া
ধনিয়া সাদা স্রাব নিরাময়ের জন্য সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া একটি প্রতিকার। পরিমানমত ধনিয়া দানা নিয়ে ১গ্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সকালে উঠে পানিটি ছেঁকে খালি পেটে পান করতে হবে।
৬. পেয়ারা পাতা
সাদা স্রাব এবং চুলকানির একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার পেয়ারা পাতা। আধা লিটার পানিতে কয়েকটা পেয়ারাপাতা দিয়ে সিদ্ধ করুন যতক্ষণ না পানি অর্ধেক হয়ে যায়। ঠাণ্ডা করে পান করতে হবে।দিনে ২ বার পান করা উচিত।
৭. আমলকী
আমলকীতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমলকী কাঁচা, আঁচার কিংবা ক্যান্ডি করে খেতে পারেন। সাদা স্রাবের চিকিৎসায় আমলকী খুবই ভাল কাজ করে।
৮. নারকেল তেল
নারকেল তেল সাদা স্রাবের চিকিৎসায় অতুলনীয়। সাদা স্রাবের সময় চুলকানি হলে যোনিতে অবশ্যই নারকেল তেল লাগাতে হবে। এতে খুব দ্রুত সমস্যা সেরে যাবে।
৯. তুলসী
মানুষ যুগ যুগ ব্যবহার করে আসছে তুলসীর ঔষধি উপকারিতার জন্য। সাদা স্রাবের সমস্যা দূর করতে আপনি তুলসী বেঁটে রস করে মধু যোগ করে খেতে পারেন। তাছাড়া ও তুলসী চা কিংবা দুধের সাথে ও তুলসী দিয়ে ও খেতে পারেন। এই সমস্যা দূর করতে দিনে ২বার খেতে পারেন।
১০. ডালিম
ডালিম একটি বিস্ময়কর প্রাকৃতিক ফল যা শুধু সুস্বাদুই নয় এর স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রচুর রয়েছে। এটি সাদা স্রাব বন্ধ করার জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে বিবেচিত। এটি আপনি চাইলে এমনি অথবা রস করে খেতে পারেন। এমনকি ডালিমের পাতা স্রাব বন্ধ করতে বিস্ময়করভাবে কাজ করে। এটি পেস্ট করে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
অতিরিক্ত সাদা স্রাব দুর্বলতা ও সংক্রমনের কারন হতে পারে। তাই অতিরিক্ত স্রাব বন্ধ করতে অবশ্যই ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া ও সাদা স্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এসব মেনে চলতে হবে।
- প্রতিটি স্বাস্থ্য সমস্যা আপনার খাবারের মধ্যে নিহিত থাকে। তাই অতিরিক্ত ভাজা পোড়া,অতিরিক্ত মশলা,তেল,চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- আপনার যোনি পরিষ্কার এবং শুকনো রাখুন।
- সহবাসের পর যৌনাঙ্গ ধোঁয়া উচিত উভয় সঙ্গীর।
- কটন কাপড়ের প্যানটি ব্যবহার করতে হবে।
- এবং যোনিতে কোন সুগন্ধিযুক্ত সাবান ভিতরে পরিষ্কার করা যাবে না।