গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ

পৃথিবীতে প্রতিটি মহিলার জীবনের সবচাইতে আবেগঘন মুহূর্ত হলো যখন সে জানতে পারে, তিনি মা হতে যাচ্ছেন। তাদের অনুভূতিটা হয়তো প্রকাশ করার মতো না, পাশাপাশি বাবারাও আনন্দিত হন তবে মায়েদের মতো এত বেশি নয়। বেশিরভাগ মহিলার জন্য গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মিসড পিরিওড।

যদিও গর্ভধারণের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না, একেকজনের লক্ষণ একেক রকমের হয়। আমরা অনেকেই ভাবি বা চিন্তায় থাকি যদি মাসিক বা পিরিয়ড সঠিক সময় অনুযায়ী না হয়। তখন অনেকেই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায় যে গর্ভবতী কিনা?
আপনি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাড়িতে বসেই গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করুন। এই পরীক্ষা প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজে জানা যায় যে আপনি গর্ভবতী কিনা। এই পরীক্ষাগুলো প্রস্রাবের এইচসিজি নামে হরমোনের পরীক্ষা করে গর্ভবস্থা নিশ্চিত হতে পারেন। সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য

গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার সর্বোত্তম সময় হল মিস পিরিয়ডের এক সপ্তাহ পর। পরীক্ষা করার পর যদি আপনি গর্ভবতী না হন তবুও যদি আপনার মনে কোন রকম সন্দেহ থাকে। তাহলে অবশ্যই পরবর্তী এক সপ্তাহ পর আবার পরীক্ষা করবেন।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

আপনার গর্ভাবস্থা প্রথম সপ্তাহ আপনার শেষ মাসিক বা পিরিয়ড এর তারিখ এর উপর নির্ভর করে। আপনার শেষ মাসিক গর্ভাবস্থার এক সপ্তাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত, চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থার এক সপ্তাহ পরিমাপ করেন একজন মহিলার শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে। এভাবে গর্ভধারণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।দিন ১ আপনার মাসিকের প্রথম দিন। মাসিক শুরু হওয়ার প্রায় ১৪ দিন পরে ডিম্বাশয় এক ডিম্বাণু বা ডিম বের করে দেই। এই দিনটি ডিমটি যদি ২ ঘণ্টার মধ্যে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয় এবং আপনি গত কয়েক দিন কোন গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার না করে সেক্স করেন। এবং ডিম বের হওয়ার প্রায় ৫ থেকে ৬ দিন পরে নিষিক্ত ডিম গর্ভের মধ্যে ঢুকে যায় একে ইমপ্লান্টেশন বলে। তাহলেই আপনি গর্ভবতী।

জেনে নিনঃ মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের অনেক লক্ষণ রয়েছে। তবে সবার ক্ষেত্রে একই রকমের লক্ষণ দেখা যায় না কারো কারো ক্ষেত্রে ভিন্ন লক্ষণও দেখা দেয়। সেগুলো আসুন আমরা চটজলদি জেনে নিই।

মিসড পিরিওড

মাসিক বা পিরিয়ড না হওয়াই প্রায় প্রাথমিক গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ। পিরিয়ড মিসড হলেই প্রথম সূত্র হতে পারে আপনি গর্ভবতী কিনা? তার জন্য অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে।

বমি বমি ভাব

গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে বমি বমি ভাব হওয়া। গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক মাস অনেকের বমি বমি ভাব হয়। কিন্তু সবারই লক্ষণ দেখা দেয় না। এবং যে কোন সময় হয় এবং কি কারনে হয় তা স্পষ্ট নয়।

রক্তপাত

রক্তপাত হচ্ছে গর্ভাবস্থার আরেকটি চিহ্ন বা লক্ষণ। এটা পিরিয়ডের মত হয়না কারণ এটা হালকা রক্তপাত হয়। এই সময় হালকা রঙের কিছু স্পট বা দাগ দেখা দেয়।অনেক সময়  গোলাপী স্রাব দেখা দেয়। এই হালকা রক্তপাত দুই থেকে একদিনের জন্য অথবা কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থায়ী হতে পারে। এজন্য ব্যথা অনুভব হতে পারে। তবে এই ব্যথা পিরিয়ডের মত হয়না হালকা ব্যথা অনুভব হয়।

ক্রাম্পিং বা খিচুনি

ভ্রূণ জরায়ুর প্রাচীর এর সাথে সংযুক্ত হয় এজন্য মহিলারা হালকা খিঁচুনি অনুভব করতে পারে। ক্রাম্পিং একটি প্রাণ টান বা ঝাকুনি। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এই টান ঝাকুনি দেখা যায়। তবে মহিলাদের পেট পিঠের নিচের অংশ ব্যথা হয়। তবে এগুলো কয়েকদিন ধরে থাকে এবং চলে যায়।

স্তন পরিবর্তন

গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে স্তনের পরিবর্তন। এই সময় স্তনের পরিবর্তন দেখা যায় স্তনের রং পরিবর্তন হয় এবং হরমোন গুলোর জন্য স্তনের আকার বড় হয় এবং অনেকর স্তন অনেক ব্যথা করে। তবে এগুলো সবার ক্ষেত্রে একই রকম হয় না  অনেকর  দেরিতে পরিবর্তন হয়।

ঘন ঘন প্রস্রাব

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অনেক মহিলার ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। কারণ শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ায় এতে কিডনির স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তরল প্রক্রিয়া করে প্রস্রাব তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

শরীর ফোলা ও ব্যথা

গর্ভাবস্থার আরেকটি অন্যতম লক্ষণ হলো শরীর ফোলা ও ব্যথা করা। বেশিরভাগ মহিলার এই সময় শরীর ফুলে যায় এবং শরীরে ব্যথা সৃষ্টি হয়। এর ফলে অনেকেই অস্বস্তি অনুভব করেন।

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি গর্ভাবস্থার লক্ষণ হতে পারে। এই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই বেশি হয়। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই বেশি বেশি পানি খাবেন। এতে আপনার শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যাবে।

ক্লান্তি

গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে শরীরের ক্লান্তি লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এই সময় আপনি অল্প একটু ক্লান্ত হয়ে পড়বেন এবং কোন কিছু না করে ও  হাঁপিয়ে যাবেন।

বিরক্তি বা মেজাজ পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার সময় আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং বিরক্ত লাগে। তখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী আবেগপ্রবন হয়ে পড়ে এবং বিষন্ন লাগে। মেজাজ বদল হওয়া গর্ভাবস্থায় সাধারণ একটি ব্যাপার।

খাবারে লোভ বা ঘৃণা

গর্ভাবস্থার আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে খাবারের প্রতি অনেক লোভ ।আবার অনেক মহিলাদের খাবারে অরুচি বা বিরক্তি প্রকাশ করে।তবে মহিলাদের অনেকের এ অবস্থায় মন অনেক কিছু খেতে চাই যেমন আচার, ঝাল জাতীয় কিছু খাবার, চকলেট এরকম অনেক খাবার। অন্যদিকে, আবার কেউ খাবারের গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

ওজন বৃদ্ধি

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অনেকেরই হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন কারণে গর্ভবতী হলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ এবং মাথা ঘোরা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে উচ্চ রক্তচাপ এবং মাথা ঘোরা শুরু হয়।মহিলাদের এইসময় রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়ে যায় এজন্য মাথা ঘোরাতে পারে।

মাথাব্যথা

গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হলো মাথাব্যথা। মহিলাদের বিভিন্ন সময় মাথা ব্যাথা শুরু হয় এবং তারা অনেক অসুস্থ বোধ করে।

মুখে উজ্জ্বলতা এবং ব্রণ

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের চেহারা অনেক উজ্জ্বল হয়। রক্তের পরিমাণ ও উচ্চ হরমোন মিশ্রণে রক্তকে ধাক্কা দেয় এর ফলে শরীরে তেল গ্রন্থি অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করে। এতে আপনার ত্বক চকচকে হয়।অন্যদিকে অনেকের মুখে ব্রণ ব্রণ হয় এবং কালো কালো দাগ দেখা যায়।

আপনি যদি এসব লক্ষণ দেখতে পারেন আপনার শরীরে তাহলে অবশ্যই বাসায় আপনি গর্ভবতী কিনা তা পরীক্ষা করুন এবং নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। আর গর্ভবতী হলে অবশ্যই সুষম খাদ্য খাবেন। ব্যায়াম করবেন এবং নিজের প্রতি যত্ন নিবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *