আরবি ১২ মাসের নাম
|

আরবি ১২ মাসের নাম ও আমল

আমরা সবাই ইংরেজি অথবা বাংলা মাসের নাম  জানি। কিন্তু আরবি ১২ মাসের নাম জানি কি? এরকম খুব  কম মানুষ আছে যারা আরবি মাসের নাম জানেন। আমরা যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী তাদের প্রত্যেকেরই আরবি বারো মাসের নাম এবং আমল সম্পর্কে জানা উচিত। কারন আরবি মাসের নাম ও আমলের তাৎপর্য অনেক। কারন বিভিন্ন  ইবাদতের জন্য আরবি মাসের নাম ও আমলগুলোর প্রয়োজন পড়ে। তাই আমাদের মুসলমান হিসেবে আরবি 12 মাসের নাম ও আমল অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত। তাই আসুন জেনে নিই আরবি মাসের নাম। নিচে আরবি ১২ মাসের নাম বাংলায় দেওয়া হল।

আরবি ১২ মাসের নামঃ

  1. মহররম
  2. সফর
  3. রবিউল আওয়াল
  4. রবিউস সানি
  5. জমাদিউল আওয়াল
  6. জমাদিউস সানি
  7. রজব
  8. শাবান
  9. রমজান
  10. শাওয়াল
  11. জিলকদ
  12. জিলহজ্জ

আরবি ১২ মাসের নাম আমল ও ফজিলত

আরবি মাসের আমল ও ফজিলত জানা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব। তাই আসুন জেনে নিই কোন মাসের কোন আমল ও  ফজিলত। নিচে আরবি মাসের ফজিলত দেওয়া হল।

১। মহররম মাসের আমল

মহররম আরবি বছরের প্রথম মাস। এটি মহান আল্লাহর মাস হিসেবে পরিচিত। মর্যাদার এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার কারণে বিশেষ আমল ও ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি মুহাম্মাদ সাল্লালাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো মহররম। আরবি বছরে যে ৪টি সম্মানিত মাস রয়েছে  মহররম  তারমধ্যে একটি।  

হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত। তাহলো-  ১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো আল্লাহর মাস মহররম।’ (মুসলিম)

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি একবার রাসুল (সা. )-কে বলল,  আমরা রমজানের পর সবচেয়ে বেশি রোজা রাখব কোন মাসে? তিনি বলেন, তোমরা যদি রমজানের পর কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররম মাসে রোজা রাখো। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তওবা ইস্তিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

মহররমের রোজার মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি।ইয়াহুদিদের অনুসরণ যেন না হয় সে জন্য দুইদিন রোজা পালনের কথা বলেছেন বিশ্বনবি। আশুরা উপলক্ষে ইয়াহুদিরা ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো।’ (মুসলিম) 

২। সফর মাসের আমল

আরবি বছরের দ্বিতীয় মাস সফর। আল্লাহর সৃষ্টি প্রতিটি দিন-রাত-মাস-বছরই ফজিলতপূর্ণ। তাই সফর মাসও এর বাইরে নয়। আল্লাহতায়ালার রহমত, বরকত, কল্যাণ পেতে হলে এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত আদায়ের পাশাপাশি গভীর রজনীতে নফল ইবাদতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর  দরবারে কোনো কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন।

চান্দ্রমাসের আমল হলো: ১ তারিখ, ১০ তারিখ, ২০ তারিখ ও ২৯-৩০ তারিখ নফল রোজা।তাই সবার উচিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে নেক আমল করা। আর প্রতি চন্দ্রমাসে নির্দিষ্ট কিছু আমল থাকে। সে আমলগুলো সফর মাসে করা যেতে পারে। যেমন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের তিনটি রোজার প্রতি যত্নশীল হওয়া।প্রতি মাসে ৩টি রোজা পালনের কথা হাদিসে এসেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।’ (বুখারীঃ ১১৫৯, ১৯৭৫)

  এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। রাসুল (সা.) এ দুই দিন বিশেষ রোজা রাখতেন।তাছাড়া চন্দ্র দেখা , দোয়া পাঠ, দান করা ও নফল নামাজ বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল। 

৩। রবিউল আওয়াল মাসের আমল 

 উল আওয়াল আরবি বছরের তৃতীয় মাস। অন্যান্য মাসের থেকে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই মাসেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন। নবিজি (সা.) জন্মগ্রহণের কারণে যেমন এই মাসের ফজিলত বেড়েছে, ঠিক তেমনি ফজিলত বেড়েছে সোমবার দিনেরও।  ‘সোমবারের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, আর এই দিনেই আমাকে রাসুল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে (কিংবা তিনি বলেছেন) এই দিনেই আমার ওপর (প্রথম) ওহী নাজিল করা হয়েছ’ (মুসলিম: ১১৬২, আবু দাউদ: ২৪২৬)।

মহামানবের এই জন্মের দিনটি স্মরনীয় করে রাখার জন্য, তার আদর্শে জীবন গড়ার জন্য মুসলিম বিশ্ব প্রতিবছর ১২ ই রাবিউল আওয়াল ঈদ-ই মিলাদুন্নবী বা সীরাতুন্নবী ইবাদাত বন্দেগির মধ্য দিয়ে পালন করে।এছাড়াও প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের তিনটি রোজা রাখার কথা এসেছে হাদিসে। এর প্রতি যত্নশীল হওয়া যেতে পারে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।’- (বুখারী, ১১৫৯, ১৯৭৫)  এছাড়া প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই দিন বিশেষ রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-  বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। -(সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮)

৪। রবিউস সানি মাসের ফজিলত ও আমল

আরবি বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি হিজরি সনের চতুর্থ মাস হলো রবিউস সানি। কেউ কেউ একে রবিউল আখির মাস বলে থাকেন। এটি রবিউল আউয়াল মাসের জোড়া মাস।রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ আখেরি নবী ও সর্বশেষ রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওফাত দিবসকে ‘ফাতেহায়ে ইয়াজ-দাহুম’ বলা হয়।

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা পালন করতেন। এই আমল তিনি কখনো পরিত্যাগ করেননি। (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)। এই রোজাকে ‘আইয়ামে বিদ’–এর রোজা বলা হয়। কারণ এই সময় পৃথিবী জ্যোৎস্নার শুভ্র আলোয় উদ্ভাসিত থাকে এবং এই রোজার মাধ্যমে বান্দার অন্তর আলোকিত হয়। সপ্তাহে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার প্রায়ই নবীজি (সা.) রোজা রাখতেন। কারণ, এই দুই দিন বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পৌঁছানো হয়। বিশেষত সোমবারে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওহিপ্রাপ্তির শুকরিয়াস্বরূপ তিনি এই আমল করতেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৫)। 

 প্রতিটি মাসের শুরু এবং শেষ বিশেষ দোয়া–কালাম ও নামাজ, রোজা এবং বিশেষ নেক আমলের মাধ্যমে পালন করা নবীজি (সা.)-এর সুন্নাত। আমল দ্বারা সময়কে রঙিন করা ও জীবনকে সাজানো বুদ্ধিমানের কাজ। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো—যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ 

৫।  জমাদিউল আউয়াল মাসের ফজিলত 

আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের পঞ্চম মাস হলো ‘জমাদিউল আউয়াল’। এর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউস সানি’, এটি হিজরি আরবি সনের ষষ্ঠ মাস।এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে নানা বিষয় বর্ণিত আছে। 

নেক আমল ও সৎকর্ম দ্বারা সাধারণ সময়ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আমরা জানি, নতুন বছরে নির্ধারিত দোয়া পড়া হয় এবং নতুন মাসে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া হয়। আসলে জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন দিন, প্রতিটি সময়ই নতুন; তাই নেক আমলের মাধ্যমে সময়কে মূল্যবান করে তুলতে হবে।

আরবি অন্যান্য মাসের মতো এই মাসেরও রয়েছে কিছু তাৎপর্য। এই মাসের আমল হলো নফল নামাজ, নফল রোজা, দান-খয়রাত ইত্যাদি। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ, তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউয়াবিন নামাজ আদায় করা। কাজা রোজা থাকলে পুরা করা, মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা। 

 মাসের ১ তারিখ, ১০ তারিখ, ২৯ ও ৩০ তারিখে রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিদ’ বা শুভ্র সময়ের বাবা হজরত আদম (আ.)-এর সুন্নত রোজা করা। সপ্তাহে প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার  নফল রোজা রাখা। বিশেষত ‘রজব’ মাসের প্রস্তুতি হিসেবে আরো বেশি নেক আমল এবং অধিক পরিমাণে নফল নামাজ ও নফল রোজা করার কথা রয়েছে।  জিকির-আজকার, দোয়া-কালাম, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার, খতম তিলাওয়াত, সদকা-খয়রাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মাস অতিবাহিত করলে নিশ্চিত এর বরকত, ফজিলত ও কল্যাণ লাভ হবে।

৬। জমাদিউস সানি মাসের আমল

আরবি বর্ষপঞ্জির হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। অন্যান্য মাসের মতো এই মাসেও অধিক পরিমাণে নেক আমল করা বাঞ্ছনীয়। এ মাসে নফল নামাজ ও নফল রোজা আদায় করা, দান–খয়রাত করার ফজিলত অনেক। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউওয়াবিন নামাজ আদায় করা ভালো। এ ছাড়া কাজা রোজা থাকলে তা পুরা করা; মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা।

 মাসের ১, ১০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’–এর সুন্নাত রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত ‘জমাদিউস সানি’ তথা ‘দ্বিতীয় জুমাদা’ মাসে ‘রজব’ মাসের প্রস্তুতি হিসেবে আরও বেশি নেক আমল এবং অধিক পরিমাণে নফল নামাজ ও নফল রোজা করা উচিত। অর্থাৎ ‘যিনি রাতের মূল্য দেন, প্রতি রাতকেই তিনি শবে কদর হিসেবে পান।’ মানে হলো, নেক আমল ও সৎকর্মে সাধারণ সময়ও অসাধারণ হয়ে ওঠে।জিকির–আসকার, দোয়া কালাম, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ তাহলিল, তাওবা ইস্তিগফার, খতম তিলাওয়াত, সদকা খয়রাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মাস অতিবাহিত করলে নিশ্চিত এর বরকত ফজিলত লাভ করা যায়।

অন্যথায় সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পরকালে নেককার মুমিন জান্নাতিগণের কোনো আফসোস থাকবে না; বরং তাদের আফসোস থাকবে শুধু ওই সময়ের জন্য, যে সময়টুকু তারা নেক আমল ছাড়া অতিবাহিত করেছে বা বেহুদা কাটিয়েছে।’(তিরমিজি)।

৭। রজব মাসের আমল

হিজরি বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাস রজব। রজব মাস আল্লাহ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের মধ্যে একটি। রাসুল (সা.) এ মাস সম্পর্কে খুবই গুরুত্ব দিতেন। ফলে রজবের চাঁদ দেখা গেলেই তিনি কিছু বিশেষ আমল শুরু করতেন।

 হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।পবিত্র হাদিস শরিফে রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে।

 হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো—জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭)। 

হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস। শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস। আর রমজান হলো- ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেন, ‘রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস হলো- বৃষ্টির মতো।’ -লাতায়েফুল মাআরেফ: ১৪৩।   হজরত  নবী করিম (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। অধিক নফল রোজা ও ইবাদতে কাটাতেন রজব ও শাবান মাস। তাই আমাদেরও কর্তব্য রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণ করে রজব মাসের হক আদায় করা। বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখা।

৮। শাবান মাসের আমল ও ফজিলত

আরবি অষ্টম মাস- শাবান। এ মাসের পূর্ণ নাম হলো- ‘আশ শাবানুল মুআজজাম তথা মহান শাবান মাস’। সে কারণেই নবিজী মাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসজুড়ে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি ও রোজা পালন করতেন।রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।

  শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি। শব মানে রাত, বারাআত মানে মুক্তি; শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি শবে বরাত নামেই সমধিক পরিচিত। এ রাতে ইবাদত করা ও দিনে রোজা রাখা সুন্নত।প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা সুন্নাত। 

প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের নফল রোজাও রয়েছে। মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রয়েছে নফল রোজা। এ ছাড়া কোনো সময় ও দিন-তারিখ নির্ধারণ ছাড়া যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা যায়, তা করা উচিত।রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় সব রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন। রমজানে পূর্ণ মাস ফরজ রোজা। নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসেই নফল নামাজ, নফল রোজা ও নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন।

৯। রমজান মাসের আমল সমূহ

আরবি বছরের নবম মাস হচ্ছে রমজান। আরবি বারো মাসের মধ্যে রমজান মাস এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী। রমজান মাস রহমত আর বরকতের মাস। এ মাস অন্যসকল মাস থেকে অধিক ফযিলতপূর্ণ কারণ এ মাসে আল্লহপাক পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। এ মাসে একটি নফল ইবাদাত একটি ফরজের সমতুল্য। তাই আমাদের রমজান মাসে বেশি থেকে বেশি আমল করা উচিত। এখন জেনে নিব রমজান মাসের বেশ কয়েকটি আমল সম্পর্কে

 (ক) রমজানের চাঁদ দেখা

রমাদানকে কেন্দ্র করে একজন ইমানদারের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হল শাবান মাসের শেষ তারিখে (২৯ তারিখে) তিনি আকাশে রমজান মাসের চাঁদকে তালাস করবেন। এবং রমাজনের চাঁদ দেখার দোয়া পাঠ করবে।

(খ) রোজা রাখা

রমজানের চাঁদ দেখা গেলে বা রমজান শুরু হয়ে গেলে একজন মুমিনের প্রধান আমল হল গোটা রমজান মাস জুড়ে দিনের বেলা সিয়াম পালন করা অর্থাৎ রোজা রাখা। রোজা সকল মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা আল-বাক্বারাহ, ১৮৩) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রমজান মাসে গোটা মাস ব্যাপী ঈমান ও ইখলাসের সাথে রোজা রাখার নিয়ত করবে এবং রোজা রাখবে আল্লহপাক তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।

(গ) তারাবি নামায

রমজান মাসে এশার সালাতের পর তারাবি সালাত আদায় করা। তারাবি সালাত আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ  যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সাথে তারাবির সালাত অর্থাৎ রাতের নফল সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে এশার ফরয নামাযের পরে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে ঘোষণা, তার পূর্বের সকল অন্যায় ও ভুলত্রুটি মাফ করে দেওয়া হবে।

(ঘ) ইফতার করা

ইফতার করা রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এবং সেই ইফতারটাকে বিলম্বে না করে সূর্য ডুবার সঙ্গে সঙ্গে করে নেওয়া। সাথে কোন রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত অনেক। অর্থাৎ কোন রোজাদারকে ইফাতার করালে রোজাকারীর সাওয়াব এর সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যায়।

(ঙ) সেহরি খাওয়ার ফজিলত

রমজান মাসের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল সেহরি খাওয়া। এবং আমাদের উচিত সেহরি দেরিতে খাওয়া।

(চ) ইফতারের আগে দোয়া করা

ইফতারের আগে দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কারণ ইফতারের আগে দোয়া কবুল হয়। হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার ব্যক্তির দোয়া কখনো বৃথা যাবে না। অবশ্যই তাদের দোয়া আল্লাহর কাছে গৃহিত হবে। (১) রোজাদার ব্যক্তি। (২) ন্যায়পরায়ণ শাসক ও (৩) নির্যাতিত ব্যক্তি”। সুতরাং রোজাদার ব্যক্তি যদি ইফতারের আগমুহূর্তে দোয়া করেন তাহলে আল্লহ তাকে ফিরিয়ে দিবেন না।

(ছ) মিথ্যা বর্জন করা

মিথ্যা বলা মহা পাপ। সকল পাপের মূল হল মিথ্যা। রোজা রেখে যদি কেউ মিথ্যা বলে তাহলে সে শুধুই উপবাস করল অর্থাৎ তার রোজা নষ্ট হয়ে গেল। সহীহ বুখারীতে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ছাড়ল না সে ব্যক্তি রোজা রেখে সিয়াম পালন করে না খেয়ে উপবাস থাকার কোন প্রয়োজন আল্লহর নেই।

(জ) ঝগড়া থেকে বিরত থাকা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো রোযার দিন হবে, সে যেন অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ না করে ও হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ গালাগালি করে অথবা তার সাথে লড়াই ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে যে, আমি রোজাদার। (বুখারী ১৮৯৪, মুসলিম ১১৫১)

(ঝ) অন্য রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো

রমজান মাসের বিশেষ একটি আমল হল অন্য রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানর চেষ্টা করা। এটি খুবই সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে, অন্য রোজাদার ব্যক্তিকে যদি কেউ ইফতার করায় সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি রোজা রেখে যে পরিমান সওয়াব পেয়েছেন তাতো তিনি পেবেনই অতিরিক্ত আরও একটি রোজার সওয়াব আল্লহপাক দান করবেন।

(ঞ) কোরানুল কারিমের আলোচনা করা

রমজান মাসে কোরানুল কারিমের দারস বা আলোচনা বেশি বেশি করা। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাঃ) এর কাছে জিবরাইল (আঃ) রমজান মাসে প্রতিরাতে আসতেন  এবং কোরানুল কারিমের দারস বা ক্লাস দিতেন। আর এই রমজান মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং আমাদের উচিত রমজান মাসে কোরানুল কারিমের আলোচনা বেশি বেশি করা।

(ট) অধিক দান সদকা করা

আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এমনিতেই বেশি বেশি দান সদকা করতেন কিন্তু রমজান মাসে তিনি দানের পরিমান বাড়িয়ে দিতেন। সুতরাং আমাদের উচিত রমজান মাসে অধিকহারে দান সদকা করা।

(ঠ) মেসওয়াক করা

আমির ইবনে রাবিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ রাসুল (সাঃ) কে তিনি রোজা রাখা অবস্থায় এতবেশি মেসওয়াক করতে দেখেছেন যে গুনে শেষ করা যাবে না। সুতরাং রমজান মাসে দিনের বেলায় সিয়াম রাখা অবস্থায় বেশি বেশি মেসোয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। তাছাড়া, হাদিসে বলা হয়েছে মেসওয়াক মুখকে পরিষ্কার করে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।

(ড) ওমরা করা

রমজান মাসের বিশেষ আমল হল সামর্থ্য থাকলে ওমরা করা। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রমজান মাসে ওমরা করল সে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সাথে হজ্জ করার সওয়াব পাবে।

(ঢ) লাইলাতুল ক্বদর এর তালাশ করা

রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর এর তালাশ করা রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা (লাইলাতুল কদর /ক্বদর) অনুসন্ধান কর। (সহীহ বুখারী, ২০১৯)

(ণ) যাকাতুল ফিতর আদায় করা

রমজান মাসের আরও একটি বিশেষ আমল হল যাকাতুল ফিতর আদায় করা। ঈদের নামাযের আগে আগে একজন ইমানদারকে আদায় করতে হয়। ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে পরিবারের কর্তা যিনি তিনি পরিবারের সকলের হয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করবেন।

(ত) ক্ষমা ও জাহান্নম থেকে মুক্তির দোয়া করা

রমজানের শেষ ১০ দিন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,  اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি। অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

(থ) সদাকা দান করা

রমজান মাসে অধিক পরিমানে দান খয়রাত করা। ইসলামে দান-সদকা ও অন্যকে সহযোগিতার গুরুত্ব অনেক বেশি। আর রমজান মাসে দান করার গুরুত্ব আরও বেশি। এ মাসকে দানের মাস বলা হয়, কেননা এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজের সমান সওয়াব। আর একটি ফরজ ইবাদত করলে ৭০টি ফরজের সওয়াব পাওয়া যায়।

১০। শাওয়াল মাসের আমল

শাওয়াল হলো আরবি চান্দ্র বছরের দশম মাস। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) প্রথম মাস; এই মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ। পয়লা শাওয়ালে সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে ঈদের, এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোজা ও রমজানের এবং এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সদকা ও জাকাতের। তাই এই মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উর্বর ও উপযোগী।

শাওয়াল মাসের সুন্নত

মা আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। ছয় রোজা শাওয়াল মাসের বিশেষ সুন্নত। (সহিহ মুসলিম শরিফ)।

  ছয়টি সুন্নত রোজা    এই মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন: যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করল। (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪; আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ-আলবানি)

 শাওয়াল মাসের এ ছয়টি রোজা মূলত সুন্নত। যেহেতু রাসুল (সা.) নিজে তা আমল করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়। কারণ, এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, অতিরিক্ত তথা নফল।

কাজা রোজা ও সুন্নত বা নফল রোজা  রমজান মাসের কাজা রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে সে (রমজানের পরে) অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। তাই যাঁরা সফরের ক্লান্তির কারণে কিংবা অসুস্থ থাকার কারণে রমজানে পূর্ণ রোজা রাখতে পারেননি, তাঁরা সেগুলো রমজানের পর অন্য সময়ে আদায় করে নেবেন।

আর ওই অসুস্থতার মধ্যে মহিলাদের ঋতুমতী হওয়াও শামিল। এ বিষয়ে মা আয়েশা (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর যুগে ঋতুমতী হতাম। তখন আমাদের এই রোজা পরে কাজা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হতো; কিন্তু নামাজ কাজা আদায় করার কথা বলা হতো না। (অর্থাৎ ওই অবস্থায় নামাজ মাফ, কিন্তু রোজা মাফ নয়। তা পরে আদায় করে নিতে হবে)। (বুখারি ও মুসলিম; মিশকাত, হাদিস: ২০৩২)।এই দুই রোজা এক নয়  শাওয়াল মাসে কাজা রোজা আদায় করলে এবং এর সঙ্গে নফলের নিয়ত করলে ফরজ আদায়ের পাশাপাশি নফল রোজা (একের দ্বারা উভয়) পালন হবে না। কারণ, একদিকে এটি যুক্তিযুক্ত নয়, অন্যদিকে বোধগম্যও নয়। সর্বে​াপরি এটি নবী করিম (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আমলও নয়। চান্দ্র মাস হিসেবে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে এক বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। এই হিসাবে রমজান মাসে এক মাসের (৩০ দিনের) রোজা ১০ গুণ হয়ে ৩০০ দিনের সমান হয়।

১১। জিলকদ মাসের আমল 

জিলক্বদ হলো আরবি চান্দ্রবছরের একাদশ মাস। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) দ্বিতীয় মাস এবং জিলহজের (হজের মাস) জোড়া মাস। হারাম বা নিষিদ্ধ চার মাসের তৃতীয় মাস হলো এই মাস। হারাম চার মাস হলো মহররম (১ম মাস), রজব (৭ম মাস), জিলক্বদ (১১তম মাস) ও জিলহজ (১২তম মাস)।

হারাম চার মাসের মধ্যে যে তিনটি মাস একসঙ্গে, তার সূচনা মাস হলো জিলক্বদ মাস। ঈদুল ফিতর (শাওয়াল মাস) ও ঈদুল আজহার (জিলহজ মাস) মাঝামাঝিতে জিলক্বদ মাসের অবস্থান হওয়ায় এই মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।ঈদুল ফিতর বিগত ও ঈদুল আজহা সমাগত, মাঝে এই জিলকদ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কা আমল নেই। বিধায় এটি জিলকদ মাস বা বিশ্রামের মাস।

 এই সময় আরবরা বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত, তাই এই মাস বিশ্রামের মাস। এসব কারণে এ মাসের নাম জিলকদ। (লিসানুল আরব, ইবনে মানযূর)।  জিলকদ মাসে নির্ধারিত ইবাদত না থাকলেও কিছু কিছু নফল ইবাদত করা বাঞ্ছনীয় ও শ্রেয়।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখনই অবসর পাও দাঁড়িয়ে যাও, তোমার রবের ইবাদতে মশগুল হও।’ (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৭-৮)।

যাঁরা হজে যাবেন, তাঁরা হজের প্রশিক্ষণ নেবেন, কোরআন কারিমের সুরা হজ শুদ্ধ করে শিখবেন এবং সুরা হজের বাংলা অনুবাদ ও তাফসির পড়বেন। হজসংক্রান্ত হাদিস, ফিকহ ও বিভিন্ন বই-কিতাব পড়বেন। প্রতি মাসের মতো জিলকদ মাসেও বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যেমন ১ তারিখ, ১০ তারিখ, ২০ তারিখ, ২৯ তারিখ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা পালন করা। চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদের সুন্নাত রোজা, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নাতে নববি রোজা রাখা।

 সলাতুত তাসবিহ নামাজ এবং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ-তাহাজ্জুত, ইশরাক, চাশত বা দুহা, জাওয়াল ও আউওয়াবিন পড়া। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া ও দানখয়রাত করা। জিলহজ মাসের ৯টি সুন্নাত রোজা ও মহররম মাসের ১০টি রোজার প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে কিছু হলেও নফল রোজা রাখা। হজের ও কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়া।

১২। জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত

আরবি বারো মাসের সর্বশেষ মাস জিলহজ। এ মাসটি বছরের চারটি সম্মানিত মাসের একটি। অনেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এ মাস। এ পবিত্র মাসের ১০ তারিখে কুরবানির ঈদ পালনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। 

আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর হজব্রত পালন ও পশু কোরবানি করে থাকে। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুরো পরিবারের নজিরবিহীন কুরবানির ইতিহাস মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তার সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে। হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তার প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এবং মা হাজেরার আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশগুলোকে আল্লাহতায়ালা হজের অংশ হিসাবে গণ্য করেছেন। আর এ হজ ও কুরবানি সম্পন্ন করে থাকি পবিত্র জিলহজ মাসে। যার ফলে ইসলামে জিলহজ মাসের গুরুত্ব অতি ব্যাপক।

এই দশ দিনে অত্যধিক আমলে সালেহ তথা উত্তম আমল করা। কেননা, এ দিনগুলোতে যে আমল করা হয়, তা আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য যেকোনো দিনের আমলের চেয়ে অধিক প্রিয়। জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ ও নফল-রোজা সবই এর অন্তর্ভুক্ত।  আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে বলেন, ‘আল্লাহর নিকট জিলহজের প্রথম দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে অতপর কোন কিছুই নিয়ে ফিরতে পারে নি।’ (বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)

 প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা : জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। এর প্রতিটি রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য। এবং প্রথম ১০ রাতে ইবাদত করা উত্তম। এর প্রতিটি রাত লাইলাতুল কদর সমতুল্য। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়। প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো। আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো।পুরো ৯ দিন রোজা রাখা সম্ভব না হলে যত দিন রোজা রাখা সম্ভব তত দিন রাখা যেতে পারে। আর পুরো ১০ রাতে ইবাদত করা সম্ভব না হলে যত রাতে ইবাদত করা সম্ভব তত রাতে ইবাদত করা যেতে পারে। এতেও সাওয়াব পাওয়া যাবে।   বিশেষত আরাফার দিন রোজা রাখা : আরাফার দিন তথা ৯ জিলহজ রোজা রাখলে দুই বছরের (সগিরা) গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তাই এ দিন রোজা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলঃ

  1. এই দশ দিন নখ ও চুল না কাটা।
  2. জিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা বিশেষ করে আরাফার দিন। 
  3. বেশি বেশি নফল ইবাদাত করা।
  4. আন্তরিকভাবে তওবা করা।
  5. অধিক পরিমানে আল্লাহর যিকর করা।
  6. সামর্থ্য থাকলে হজ্জ বা উমরা করা।
  7. সামর্থ্যবান হলে কুরবানি করা।
  8. তাকবীর পাঠ করা।
  9. সাদাকাহ করা।
  10. যথাসম্ভব গুনাহ থেকে দূরে থাকা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *