ফ্রিল্যান্সিং
|

ফ্রিল্যান্সিং করে – মাসে কিভাবে লাখ টাকা আয় করবেন?

এই চাকরির বাজারে চাকুরি-প্রার্থীর অভাব না থাকলেও প্রয়োজনীয় চাকরির বড়ই অভাব! এক্ষেত্রে কি করবেন? ঘরে বসে আয় করতে পারলেই হয়তো এই সমস্যাটা সহজেই দূর করা যাবে। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম জেনারেট করতে পারেন। আজ আমরা আলোচনা করবো ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে। সেই সাথে জানার চেষ্টা করবো ফ্রিল্যান্সিং করে – কিভাবে মাসে আয় করবেন $10,000- $20,000 USD। চলুন তবে দেরি না করে আজকের আলোচনার মূল অংশে যাওয়া যাক। 

ফ্রিল্যান্সিং কি?

ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করা মানেই হলো ফ্রিল্যান্সিং। এক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করতে পারে এবং সেই সুযোগ রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং করতে সবচেয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং দরকারি রসদ হলো অনলাইনে কাজের দক্ষতা। যা সহজেই আপনি অনলাইনে বিক্রি করে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। 

যদি কেউ ঘরে বসে দেশ-বিদেশে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চান সেক্ষেত্রেও সে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে। এই সেক্টরে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ খুঁজে নিয়ে ইনকাম জেনারেট করতে হয়। তবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে অবশ্যই আপনাকে কাজের দক্ষতা অনুযায়ী আপনার পোর্টফোলিও সাজিয়ে নিতে হবে। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ে কি কি কাজ পাওয়া যায়?

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সররা ১০ কোটি ডলার আয় করে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো এতো টাকা ফ্রিল্যান্সেরা কিভাবে উপার্জন করছে? ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন সেক্টরটির উপর দক্ষতা তাদের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রিল্যান্সিংয়ে কি কি কাজ পাওয়া যায় সে-সম্পর্কে। 

  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
  • ওয়েব ডিজাইনিং
  • গ্রাফিক্স ডিজাইনিং
  • কন্টেন্ট রাইটিং
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
  • সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
  • ই-কমার্স বিজনেস
  • সিপিএ মার্কেটিং
  • ড্রপ-শিপিং 
  • অনলাইন মার্কেটিং
  • অনলাইন বিজনেস
  • অনলাইন কোর্স সেলিং
  • ইউটিউবিং
  • ব্লগিং
  • ফেইসবুক মার্কেটিং
  • লিড জেনারেশন ইত্যাদি

উপরে উল্লিখিত প্রতিটি কাজের চাহিদা বর্তমানে ব্যাপক হারে বেড়েছে। আপনি চাইলে এর যেকোনো একটি সেক্টরে ফোকাস করে নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে নিতে পারেন। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ে কোন কাজের চাহিদা বেশি?

ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রতিটি কাজের চাহিদাই সবসময়ই বেশি। তবে কিছু কিছু কাজের ইনকাম জেনারেট করার সুযোগ যেমন বেশি তেমনই এর চাহিদাও বেশি। আবার এই সেক্টরে এক্সপার্ট হতেও বেশ কিছু সময় লাগতে পারে। মোটামুটি বলা চলে পুরো ব্যাপারটাই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। 

বর্তমানে মূলত গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এবং ওয়েব ডেভলপমেন্ট এবং ডিজাইনিংয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে কাজের মতো কাজ জানলে ইনকাম করা যাবে সবসময়! ওয়েবসাইট তৈরি এবং তার ডিজাইনিং করার যে প্রতিযোগিতা বর্তমানে চলছে তার মূল কারণ হলো প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা ওয়েবসাইট থাকার রেওয়াজ। যা বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও কন্টেন্ট রাইটিংয়ের কাজের পরিমাণও কোনো অংশেই কম নয়। সাইটগুলি সাজাতেও দরকর পড়ে মানসম্মত বিভিন্ন কন্টেন্ট এবং আর্টিকেলের। 

ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কি প্রয়োজন?

ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন মনোবল এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারার মন-মানসিকতা বা মনোবল। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কি প্রয়োজন পড়ে! 

শেখার প্রতি আগ্রহ

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে শেখার বিকল্প কিছুই নেই। যত শিখবেন ততই আপনার স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে কাজের সুযোগ। নিজের কিংবা ক্লায়েন্টের কাজকে শতভাগ কোয়ালিটিফুল করতে গেলে না শিখে অন্য কোনো পথ অবলম্বন করা যাবে না। 

প্রয়োজনীয় ডিভাইস

ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে প্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলি আগেভাগেই নিশ্চিত করতে হবে। নিজস্ব ল্যাপটপ অথবা ডেস্কটপ এবং ইন্টারনেট কানেকশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি মিনিমাম ইংলিশ কমিউনিকেশন ল্যাংগুয়েজের সাথে আপনার অনলাইন প্রেজেন্স (ওয়েবসাইট, সোস্যাল প্রোফাইল) নিশ্চিত করতে হবে। 

সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ

ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগে এবং পরে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মন-মানসিকতা গড়ে তুলুন৷ অনেক গাইডলাইন পাবেন ফ্রিতে, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে একেবারে নিজের উপর ভিত্তি করে। প্রচুর ব্লগ এবং ইউটিউবে ভিডিও রিসার্চ করার পাশাপাশি নিজের মেধা খাটাতে হবে আপনাকে। 

ফ্রিল্যান্সিং কাজ কোথায় পাবো?

ফ্রিল্যান্সিং কাজ আপনি অনলাইনেও কালেক্ট করতে পারেন, আবার চাইলে অফলাইন হতেও ক্লায়েন্ট নিয়ে আসতে পারেন! এটি পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনার দক্ষতার উপর৷ তবে বেশকিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে৷ যেখানে কাজের উপর ভিত্তি করে ভালো ইনকাম জেনারেট করা সম্ভব হয়। চলুন এক নজরে দেখে নিই ফ্রিল্যান্সিং কাজ কোথায় পাবেন বা এর মার্কেটপ্লেসগুল কি কি: 

  • Upwork.
  • Fiverr. 
  • Freelancer. 
  • Guru. 
  • People Per Hour. 
  • Toptal.
  • FlexJobs. 
  • 99designs.

আশা করি উপরের মার্কেটপ্লেসগুলিতে গিগ করতে পারলে কিংবা নিজের স্কিল তুলে ধরতে পারলে আপনার কখনোই কাজের অভাব হবে না। অভাব হবে না ক্লায়েন্টের৷ তবে সঠিকভাবে কাজ না শিখে এখানে প্রবেশ করাটা বোকামি হবে। 

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবো?

এবার আমরা জানবো ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবেন সে বিষয়ে। প্রথমে মাথায় রাখতে হবে, ফ্রিল্যান্সিং করেও উপার্জন করা যায় এবং এই উপার্জন অন্য যেকোনো ১০/১২ টা চাকরির থেকে নেহাত কম নয়! 

মাথায় রাখতে হবে ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি জব সেক্টর এবং একটি জব সেক্টরে অনেক ধরনের কাজ থাকে। যা আমরা উপরের একটি সেগমেন্টে আলোচনা করেছি। সুতরাং মার্কেটপ্লেসে কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট কাজ বেছে নিতে হবে। 

এবার আপনি যে বিষয়টি বেছে নিয়েছেন সেই বিষয়ে কোর্স করার পালা। যা আপনার দক্ষতা তৈরি করতে বা বাড়াতে সাহায্য করবে। যেহেতু প্রতিটি মার্কেটপ্লেস এক একটি প্রতিযোগিতা মূলক জায়গা সেহেতু আপনাকে বেশ ভালোভাবেই কাজ শিখে মাঠে নামতে হবে। 

এবার মার্কেটপ্লেসে আপনাকে আপনার একাউন্ট ওপেন করতে হবে। যা হবে ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড এবং আপনি যে সেক্টরে কাজ করছেন তার উপর ভিত্তি করে। পরবর্তীতে বায়ারের বিভিন্ন জব পোস্টে বিড করতে হবে এবং অর্ডার উদ্দেশ্যে অপেক্ষা করতে হবে। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে কিভাবে মাসে $10,000- $20,000 USD আয় করবো?

চলুন এবার আয়ের ব্যাপারে আসা যাক। জানা যাক ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে কিভাবে মাসে $10,000- $20,000 USD আয় করবেন সে-সম্পর্কে। বেশ কয়েকটি সেক্টর আপনাকে এই পরিমাণ ইনকাম জেনারেট করতে সাহায্য করবে। সেক্টরগুলি হলো:

ওয়েব ডেভলপমেন্ট

ওয়েবসাইটের ডেভেলপমেন্ট করা বর্তমানে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কাজ। যা করে বেশ ভালো পরিমাণ ইনকাম জেনারেট করা সম্ভব। একজন ওয়েব ডেভলাপার চাইলে প্রজেক্ট ভিত্তিক পেমেন্ট নিতে পারে। কিংবা তাতে যদি অনাগ্রহ থাকে তবে সে মান্থলি কিংবা উইকলি নিজের সম্মানী বুঝে নিতে পারে। হাই ডিমান্ডেবল এই সেক্টরটিতে কাজ করে মাসে ১০,০০০$ আয় করতে হলে আপনাকে খুবই রিসার্চ করতে হবে এবং শিখে যেতে হবে। 

ওয়েব ডিজাইনিং

এটিও একটি ওয়েবসাইট রিলেটেড কাজ। ওয়েব ডেভলপমেন্ট করে যে ওয়েবসাইটটিকে তৈরি করা হয়, একজন ওয়েব ডিজাইনার সেই ওয়েবসাইটটিকে সুন্দরভাবে ডিজাইন করে। যার একমাত্র মূখ্য উদ্দেশ্য হলো ভিজিটর! ভিজিটরেরা যেনো সাইটটি ব্যবহারে কোনো রকম অনাগ্রহ প্রকাশ না করে তাই ভেবে একজন ডিজাইনার পুরো ওয়েবসাইট ডিজাইন করেন। এই কাজটি করেও আপনি মাসে ঘরে বসেই $10,000- $20,000 USD আয় করতে পারেন।

কন্টেন্ট রাইটিং 

কন্টেন্ট রাইটিং করেও আপনি মাসে $10,000- $20,000 USD আয় করতে পারেন। কি? অবাক লাগছে? ভাবছেন শুধুমাত্র লেখালেখি করেই এতো টাকা আয় করা যায়? জ্বি যায়! অবশ্যই যায়। কেননা একটি রিসার্চেবল, হাই কোয়ালিটির কন্টেন্টের প্রাইজ সবসময়ই চড়া থাকে! এক্ষেত্রে মাসে যদি আপনি ২/৩ টি করে আর্টিকেল লিখতে পারেন এক্ষেত্রে  $10,000 ডলার ছুঁতে পারাটা খুব একটা কঠিন নয়!

ইতি কথা

আমরা আর্টিকেলটির একেবারেই শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আশা করি ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড এই আর্টিকেলটি এই বিষয়ে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন কিংবা সমস্যা থেকে থাকে তবে নির্দ্বিধায় জানাতে পারেন আমাদের। সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *