গ্রাফিক্স ডিজাইন
|

গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করার আগে যা যা জানতে হবে

বর্তমানে অনলাইন রিলেটেড প্রতিটি কাজে দরকার পড়ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের। বিভিন্ন সেলিং রিলেটেড কন্টেন্ট কিংবা বায়ার আকৃষ্ট করবার মতো সেনসিটিভ ডিলে ব্যবহার করা হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন কন্টেন্ট। কেননা এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের সাহায্যে যেকোনো বিষয় যেকাউকে বোঝাতে খুব একটা সময় লাগে না।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি

একেবারে সহজ কথায গ্রাফিক্স ডিজাইনিং হলো ডিজিটাল ডিজাইন বা ডিজিটাল কন্টেন্ট। এই ডিজিটাল কন্টেন্ট সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রসেস মেনে তৈরি করা হয় এবং তা ডিজিটালভাবেই অডিয়েন্সের সামনে প্রেজেন্ট করা হয়।

অফলাইন কার্যক্রমে আমরা সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাই। সরাসরি প্রোডাক্ট ছুঁয়ে দেখার, সার্ভিস উপভোগ করার সুযোগ পাই। কিন্তু অনলাইনে সেই সুযোগ নেই। কেবল চোখে দেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রে সার্ভিস বা প্রোডাক্টকে আরো বিস্তারিত এবং সুন্দরভাবে অডিয়েন্সের সামনে তুলে ধরতে প্রয়োজন পড়ে এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কত প্রকার?

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরটি ২ টি সাব-সেক্টর দ্বারা গঠিত। এর একটি হলো স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স এবং অপরটি হলো মোশন গ্রাফিক্স। চলুন এই ২ ক্যাটাগরির গ্রাফিক্স নিয়ে কিছুটা আলোচনা করে নেওয়া যাক। 

স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স

আমরা অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করলে মোটামুটি বিভিন্ন সেক্টরে টুডি ইমেইজ দেখতে পাই। মূলত এসব ইমেজ নিয়ে কাজ করার প্রসেস হলো স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স। এসব ইমেজ কাগজে প্রিন্ট করা গেলেও অনলাইন স্ক্রিনে নাড়াচাড়া করার কোনো সুযোগ পায় না। বিভিন্ন ধরণের লিফলেট, ম্যাগাজিন ইত্যাদির কাজে এই স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্সের সাহেয্য নেওয়া হয়ে থাকে।

আবার এই স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্সেরও আলাদা প্রকারভেদ রয়েছে। রাষ্টার ইমেইজ, ভেক্টর ইমেইজ, টাইপোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্সকে। যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরে নতুন তারা এই স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ শুরু করে। কেননা এটির প্র্যাকটিস বেশ সহজ এবং চাহিদাও সবসময় থাকে।

মোশান গ্রাফিক্স

মোশন গ্রাফিক্স হল অ্যানিমেশন এবং গ্রাফিক ডিজাইনের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী একটি কাজ। অ্যানিমেটেড পাঠ্য বা গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে তথ্য উপস্থাপনের লক্ষ্যে উদ্দেশ্য মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে।

আপনার যদি ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যারে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে মোশন গ্রাফিক্স শিখতে খুব একটা সময় লাগবে না। কেননা মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে আফটার ইফেক্টস নামে যেই সফটওয়্যারে মোশন গ্রাফিক্স এর কাজ করতে হয় সেি সফটওয়্যারটি কিছুটা ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটরের মতো।

এক্ষেত্রে লেয়ার ও টাইমলাইন বেইজড কিন্তু সেইম। তবে যদি আপনার ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটরে কোন প্রকার আইডিয়া না থাকে, কোনো সমস্যা নেই। কারণ মোশন গ্রাফিক্স এর বেসিক শেখার জন্য ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটরে যতটুকু শেখা সম্ভব সেটি আপনি আপনার প্রয়োজনীয় বা চাহিদাসম্পন্ন কোর্সে পেয়ে যাবেন।

যারা মোশন গ্রাফিক্সের কাজ করে তাদের কাজের প্রাইজিং থাকে হাই। কেননা এতে প্রচুর খাটতে হয়। আপনিও যদি নিজেকে একজন দক্ষ মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন তবে আপনার যেমন কাজের অভাব পড়বে না, তেমনই কাজের প্রাইজিংও থাকবে হাই। 

আশা করি গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের প্রকারভেদ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। চলুন এবার আমরা আমাদের আলোচনার পরবর্তীতে অংশে চলে যাই।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব

এবার চলুন গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখতে হবে সে-সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শেখার শুরুতে আপনাকে স্কেচিং সম্পর্কে জানতে হবে। যারা ড্রয়িং করতে পারেন না তাদের ভয়ের কিছু নেই। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এমন একটি পেশা যেখানে ড্রয়িং না জেনেও ভালোই ডিজাইনিং আয়ত্তে আনা যায়।

ডিজাইন সম্পর্কে বুঝতে পারাটা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শেখার ২য় টিপস। এক্ষেত্রে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি কোন ডিজাইনটি করতে বসেছেন। লোগো ডিজাইনিং, ব্যানার ডিজাইনিং, বিজনেস কার্ড ডিজাইনিং, অ্যানিমেশন ভিডিও ক্রিয়েটিং, কোন সেক্টরের কাজ হাতে নিয়েছেন তা সিলেক্ট করে নিন৷

এই ধাপে এসে আপনাকে অডিয়েন্স সম্পর্কে জানতে হবে। যার উপর নির্ভর করবে পুরো ডিজাইনটি৷ আপনার অডিয়েন্স যদি হয় ধর্মীয় গোষ্ঠী তবে আপনাকে সেই রিলেটেড থিম ডিজাইন করে লোগো বা ব্যানার রেডি করতে হবে। আবার আপনার অডিয়েন্স যদি হয় ব্লাড ডোনারেরা তবে তাদের আকৃষ্ট করার মতো থিম ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে হবে।

ডিজাইন আইডিয়া নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি গুগলসহ বিভিন্ন সেক্টরের সাহায্য নিতে পারেন। তবে কোনোভাবেই ডিজাইন হুবহু চুরি করে বসিয়ে দেওয়া যাবে না।

ডিজাইন করা শেষ হলে ফিনিশিং দিতে ভুলবেন না কিন্তু। কোথায় কি মিসিং রয়েছে তা খুঁজে বের করে ফিলআপ করার চেষ্টা করুন। নতুন কোনো বেটার আইডিয়া মাথায় এলে চটজলদি তা নিয়ে কাজ করুন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে ইউটিউব টিউটরিয়াল ভিডিও। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট বা আর্টিকেলেরও সাহায্য নিতে পারেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং রিলেটেড টুলসগুলি কি কি?

অনলাইন জগতে কোনো কাজকে পূর্ণতায় রূপ দিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে টুলস। গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন লজিকই প্রযোজ্য। চলুন এই পর্যায়ে জেনে নেওয়া যাক গ্রাফিক্স ডিজাইনিং রিলেটেড কিছু গুরুত্বপূর্ণ টুলস, অ্যাপস বা সফটওয়্যার সম্পর্কে।

Illustrator CC’s Puppet Warp tool

ইমেইজ এডিটিং বা ডিজাইনের ক্ষেত্রে এই টুলসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যা ব্যবহার করার মাধ্যমে এতে থাকা পিন নাড়াচাড়া করে কোনো ইমেজের যেকোনো স্থানে চিহ্নিত করে র‍্যাপ, টুইস্ট, ডিসর্টের মতো অপারেশনগুলো করা যায়। আনসিলেক্টেড এড়িয়া ছাড়া সিলেক্টেড এড়িয়াকে এডিট করতে এই টুলসের ব্যবহার বেশ সহজ বিষয়।

Lightwell

গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের সাথে যারা জড়িত তারা ডিজাইনিং করতে করতে একসময় কোডিংয়ের দিকে মনোযোগী হয়ে উঠেন। এক্ষেত্রে এই টুলসটির সাহায্য নিতে পারেন। ডিজাইন করার পাশাপাশি কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও শতভাগ পারফেক্টলি ব্যবহারযোগ্য এই টুলসটি। বেশিরভাগ ডিজাইনার, আর্টিস্ট, ছাত্র ও ক্রিয়েটিভ এজেন্সি এই টুলসি ব্যবহার করে থাকে।

Easle

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করে যারা আয় করতে চান এই অ্যাপসটি তারা ব্যবহার করতে পারেন কাজ খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে। কেননা এই অ্যাপসটিতে বিভিন্ন বায়ারেরা তাদের ডিজাইনিং প্রজেক্ট রিলেটেড জব পোস্ট করে থাকে। যাতে আবেদন করে আপনিও ঘরে বসে ইনকাম জেনারেট করতে পারেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের কাজ পাওয়ার উপায়?

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং পরিচিতি, কাজ করা উপায় এবং প্রয়োজনীয় টুলস সম্পর্কে তো জানা গেলো। এই পর্যায়ে আমাদের জেনে নিতে হবে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং রিলেটেড কাজ পাওয়ার উপায় বা মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে। 

এনভাটো অথর

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে তাদের সার্ভিস সেল করে ইনকাম জেনারেট করে। আপনিও নিজের কাজের একটি কোয়ালিটিফুল পোর্টফোলিও তৈরি করে এখানে কাজ করতে পারেন।

ফাইভার

ফাইভার হলো একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইনিংই নয়! এখানে আপনি ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড বিভিন্ন কাজের বায়ার পেয়ে যাবেন।

আপওয়ার্ক

আপওয়ার্ক হলো মাইলস্টোন বেইজড একটি প্ল্যাটফর্ম। একটি শক্তিশালী পোর্টফোলিও এবং সার্ভিস ডেসক্রিপশন এখানে আপনার বায়ার এনে দিতে পারে।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করে কত টাকা ইনকাম করা যায়?

যারা নিউবি তারা প্রতি মাসে ২০/৩০ হাজার টাকা ইনকাম জেনারেট করতে পারে। আর যারা এডভান্স লেভেলের গ্রাফিক্স ডিজাইনার তারা মাসে ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম জেনারেট করতে পারে।

ইতি কথা

আশা করি গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করার আগে যা যা জানতে হবে তা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। এছাড়াও যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কিংবা সাজেশনের দরকার পড়ে তবে সরাসরি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। আশা করি শতভাগ সাহায্য করতে সক্ষম হবো৷

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *