বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনগুলো?
নির্দিষ্ট সৃষ্টিশীল ও উৎপাদনীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৈধভাবে ব্যবসা করতে পারলে অধিকাংশ ব্যবসাতেই লাভ করা সম্ভব। সুতরাং বলতে গেলে প্রতিটি ব্যবসাতেই লাভ করা সম্ভব। দরকার লেগে থাকার মন-মানসিকতা এবং সঠিক পরিকল্পনা। তবে বিশেষত কিছু ব্যবসা রয়েছে, যা সিলেকশে আপনি অবশ্যই লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হবেন। চলুন আজ আলোচনা করা যাক বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে।
কসমেটিক্স এর লাভজনক ব্যবসা
৩৫% থেকে ৪০% বা তার বেশি আয় করতে চাইলে কসমেটিক্স ব্যবসা করতে পারেন। কেননা আজকাল মেয়েরা এই কসমেটিক্সের প্রতি প্রচুর আগ্রহী। এই আগ্রহকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করতে পারলে শতভাগ লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হতে পারে এটি।
এক্ষেত্রে কোনো ধরণের অতিরিক্ত ইনভেস্টমেন্টের আশ্রয় নিতে হবে না। আপনার হাতে যদি বর্তমানে ইনভেস্ট করার মতো ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা বা তারও কম অর্থ থাকে তবে এই ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারেন। তবে যাদের ইনভেস্টমেন্ট করার মতো সামর্থ্য নেই তারা একটি কসমেটিক্স দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অর্ডার আসলেই প্রোডাক্ট এনে তা গ্রাহকের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। চাইলে অনলাইনেও এই বিজনেস করা যায়। মেয়েরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করতে পারে।
টাইলস এর লাভজনক ব্যবসা
আজকাল ঘরবাড়ি সব বেশ আধুনিক ধাঁচে তৈরি করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ছে বিভিন্ন ডিজাইন এবং সাইজের টাইলস। বলা চলে বেশ চাহিদা রয়েছে এই প্রোডাক্টের। যার ফলে এই ব্যবসাটি বর্তমানে অনেক লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেহেতু টাইলস এর ব্যবসা করে হাজার হাজার লোক সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে গিয়েছে সেহেতু ভাববেন না এতে অনেক বেশি ইনভেস্টমেন্টের দরকার পড়ে! একেবারে খুব কম ইনভেস্টম্যান্টের সাহায্যে যেকেউ এই ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারে। যেখানে চাহিদা বেশি সেখানে একটু টেকনিক খাটানো এবং কোয়ালিটিফুল প্রোডাক্ট দিতে পারলে ধুমচে সেল হবে। হোক সেটা পাইকারি কিংবা খুচরা। তবে লাভ যে আসবে এটা কিন্তু নিশ্চিত করেই বলা যায়।
কফি-শপের লাভজনক ব্যবসা
অফিসিয়াল মিটিং বা অবসর সময়ে আজকাল কফি না হলে কি চলে নাকি? তার উপর আবার বর্তমানে বাংলাদেশে অর্থ্যাৎ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কফি পানের প্রবণতা বেশ বেড়েছে। সুস্বাস্থ্য এবং নতুন করে এনার্জি পেতে প্রায় সকলেই কফি খেতে পছন্দ করে।
এক্ষেত্রে আপনি যদি অফিস বা পার্কের কাছাকাছি, শপিং মলগুলিতে বা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি একটি কফি-শপ খুলতে পারেন তবে সেল আসবেই। সেই সাথে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে শপে বিভিন্ন ধরণের কফি পাওয়া যায়! ব্ল্যাক-কফি, কোল্ড-কফি, হট-কফি..প্রায় সবধরনের কফির সাথে ২৫০০০-৩০০০০ টাকা নিয়ে প্রতি মাসে ২০০০০-৩০০০০ টাকা লাভ করতে আজই এই ব্যবসাটি শুরু করুন।
কোচিং এর লাভজনক ব্যবসা
অনেকেই হয়তো ভাবছেন কোচিং করে কি আবার লাভজনক ব্যবসা করা যায় নাকি! অবশ্যই যায়। আপনি যদি ভালো পড়াতে পারেন এবং একটি ভালো টিউটর টিম বা ফ্রের্ড সার্কেল থাকে তবে আপনিও এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। বাংলাদেশে আজকাল একজন প্রাইভেট টিউটর রাখাকে অনেক অবিভাবকই ব্যয়বহুল মনে করে।
এক্ষেত্রে তারা কোচিং সেন্টারের শরণাপন্ন হয়। উদভ্যাশ, ফোকাস, রেটিনা, ইউসিসি ইত্যাদির মতো একটি একটি কোচিং সেন্টার তৈরি করতে আপনার বেশ কিছু উপকরণের দরকার পড়বে। নিশ্চিত করতে হবে ভালো সংখ্যক শিক্ষক, ভালো পরিবেশের ক্লাসরুম এবং একটি কার্যকর পরীক্ষা ব্যবস্থা।
সবজি চাষের লাভজন ব্যবসা
বাগান করতে অনেকেই পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে চাইলে আপনি আপনার এই পছন্দকে পুঁজি করেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যা থেকে নিয়মিত একটি লাভ আপনি নিজের খরচের কাজে ইজিলি ব্যবহার করতে পারেন। আমরা কম-বেশি সকলেই জানি বিভিন্ন ধরণের সবজির ব্যাপক চাহিদা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নাগরিকেরই রয়েছে। এই সবজি ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না।
তবে এই ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আপনার পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে না পারলে সবজি পঁচে লস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে যদি আপনি মাটি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সঠিক যত্ন এবং ব্যবস্থাপনার সাথে চাষ প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে না পারেন তবে এই ব্যবসা আপনার জন্য নয়।
ব্লগিং এর লাভজনক ব্যবসা
এবার আসি যারা সবসময় মোবাইল, পিসি, ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকেন তাদের নিয়ে! এসব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের প্রতি নেশাও রয়েছে আবার ব্যবসাও করতে চান, এমন ব্যাক্তিগণের জন্য ব্লগিং এর মতো লাভজনক ব্যবসা ভালো কিছু বয়ে আনবে। বিশেষ করে যারা লেখালেখি করতে পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে।
ইংরেজি জানা মানুষের কাছে তো কাজটি আরো সহজ এবং লাভজনক হবে বলে আমি মনে করি৷ তবে বলে রাখা ভালো এক্ষেত্রে সবার আগে কিছু ব্লগিং সম্পর্কে ধারণা নিয়ে এবং অবশ্যই কিওয়ার্ড নিয়ে গবেষণা করে তবেই কাজে নামতে হবে। প্রচুর লেগে থাকার মন-মানসিকতা যাদের আছে তারা সময় দিতে পারলে এই ব্লগিং হতে মাসে লাখ টাকা আয়ের উৎস।
কোর্স এর লাভজনক ব্যবসা
আমরা মানুষেরা এক-একজন এক এক সেক্টরে পটু। কেউ ছবি আঁকায় বা কেউ লেখালেখিতে কিংবা ফ্রিল্যান্সিংয়ে। আপনি চাইলে নিজের এই দক্ষতাকে পুঁজি করেও লাভজনক ব্যবসা শুরু করতে পারেন। চাহিদা রয়েছে এমন একটি নিজস্ব স্কিল অন্যকে শিখিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যা আপনাকে মান্থলি ভালো পরিমাণ ইনকাম জেনারেট করতে সাহায্য করবে।
তবে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং কোচিং বা ট্রেনিং/কোর্সের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সেই সাথে বিভিন্ন কুকিং কোর্সও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যে যেই সেক্টর ভালোবাসেন এব্য যেই সেক্টরে আপনি সবচেয়ে বেশি দক্ষতার সাথে শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারবেন বলে মনে করছে সেই সেক্টর দিয়েই এই ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারেন।
ফটোগ্রাফি এর লাভজনক ব্যবসা
আপনি কি ছবি তুলতে খুব ভালোবাসেন? ফটোগ্রাফি করা কি আপনার অন্যতম নেশা? এই নেশাকে যদি পুঁজি করে দারুণ একটি লাভজনক ব্যবসা শুরু করা যায় তবে কেমন হয়? হ্যাঁ! সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি করার মন-মানসিকতা এবং দক্ষতা থাকতে হবে।
চাইলে আপনি প্রথম দিকেই একটি ফ্রি ফেসবুক পেজ চালিয়ে আপনার ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন। প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ৫০০০০ টাকা দিয়ে একটি ক্যামেরা কিনতে হবে আপনাকে। চাইলে ভাড়াও নিতে পারেন। তবে এতে সাময়িক লাভ হলেও দিনশেষে খরচের পরিমাণটাই বেশি থাকবে। কাজ ভালো হলে অবশ্যই বিবাহ বা প্রায় প্রতিটি ইভেন্টে আপনার ডাক পড়বেই।
ফুড ডেলিভারির লাভজনক ব্যবসা
আজকাল অনলাইনে ফুড বিজনেস অনেকেই করছে। শ্রম কমাতে অনেকেই খাবার অর্ডার করে নিজেদের সময় বাঁচানোর মতো কাজটি সেরে ফেলছে। বিভিন্ন প্রোগ্রামেও দরকার পড়ছে এই ধরণের ফুড বায়িং সার্ভিসের। আপনি এক্ষেত্রে একজন ডেলিভারি-ম্যান হয়ে কাজ করতে পারেন।
এক্ষেত্রে যারা অনলাইনে ফুড বিজনেস করছে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সেই আপনার কাছে যদি কিছুসংখ্যক বেকার ব্যাক্তি থাকেন। তাদের ডেলিভারি ম্যান হিসেবে ব্যবহার করে খাবার, লাঞ্চ, ডিনার ক্লায়েন্টের বাড়ি, অফিস বা কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়ে ইনকাম জেনারেট করতে পারেন। ২০০০০ টাকা এর কম ইনভেস্ট করে বসে বসেই মাসে আসবে ৩০০০০-৬০০০০ টাকার মতো। যদিও আপনি নিজেও যদি এই কাজ করতে পারেন তবে লাভের পরিমাণটা আরো বাড়বে।
ইতি কথা
আশা করি অবশ্যই আপনাদের উপকারে আসবে এই আর্টিকেলটি। কেননা সবচেয়ে লাভজনক এবং বাছাইকৃত ব্যবসাগুলি আজ আলোচনা করেছি। যদি ভালো লেগে থাকে তবে যেকোনো একটি ব্যবসায় আজই যুক্ত হোন এবং নিজের একটি পরিচয় গড়ে তোলায় মনোযোগ দিন।