টেকনোলজি
|

দৈনন্দিন জীবনে টেকনোলজির প্রভাব

আজ আমি আপনাদের সামনে বর্তমান বিশ্বে ঘটতে থাকা কিছু চরম সত্য তুলে ধরতে যাচ্ছি। টেকনোলজির কারনে মানবতা আজ কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এই মুহূর্তে আমাদের বিশ্বে সাতটি প্রবণতা ঘটছে যে আমি মনে করি, সব একসাথে মিশে খুব অদূর ভবিষ্যতে একটি সত্যিকারের ভয়ঙ্কর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে যাচ্ছে।

অলস সময়আর এটার শুরু সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে। বর্তমানে এটা হয়তো বা আমাকে দিয়ে শুরু, প্রতিবার আমি যখন ইনস্টাগ্রাম স্ক্রিন করতে থাকি যখন একান্তই আমার হাতে কোন কাজ থাকেনা, হতে পারে দিনে এটা ২০ মিনিটের মত। কিন্তু আসলেই এই সময়টা আমি প্রডাক্টিভ কোন কাজে ব্যয় করছি না। বেশিরভাগ সময়ই প্রতিটা মানুষ ব্যয় করে আসলে অন্যমানুষটা দেখতে কত ভালো। তাদের সময় কতটা ভালো কাটতেছে তাদের ছুটির দিনগুলো কতটা ভাল কাটাচ্ছে। তারা কত ভাল কন্ঠে গান গাইছে ইত্যাদি দেখে।

প্রকৃতপক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউই তাদের বিব্রতকর সময়গুলো শেয়ার করতে চায় না। প্রকৃতপক্ষে আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে যা দেখেন তার ১০০ টার মধ্যে ৯৯ টি হল একটি হাইলাইটেড রিল। মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে কেবল সেটাই প্রকাশ করে যেটা তাদের সামাজিক বৈধতা দেয় এবং তাদের হাইলি স্ট্যাটাস প্রকাশ করায়।

আর প্রতিটি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এজন্যই ব্যবহার করে যে অন্য মানুষের জীবনের ভালো মুহূর্ত গুলো উপভোগ করতে তারা আনন্দ পায় অথবা ঈর্ষান্বিত হয়।

কিন্তু সারাদিন নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রলিং করার পর আপনি যখন নিজেকে একটু একান্ত সময় দিবেন তখন অনুভব করবেন আসলে সামথিং ইজ মিসিং। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনকে কেবল তখনই ভালোভাবে বর্ণনা করার ক্ষমতা দেয়, যখন আপনি আপনার অবস্থান এবং আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট। এবং অবশ্যই তখন আপনি আপনার পদোন্নতি নিয়ে স্ট্যাটাস দিবেন। 

সূর্যাস্তঅথবা আপনি যদি আপনাকে একজন স্বভাবসুলভ ভ্রমণপিপাসু মনে করেন সেটি প্রকাশ করার জন্য অবশ্যই সমুদ্রসৈকতে শুয়ে থাকবেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে এটা জানাবেন যে, এটি আপনার জীবনের একটি স্বাভাবিক দিন এবং আপনি কতটা দুঃসাহসী তা দেখানোর জন্য কিছু না কিছু লিখবেন। অথবা আপনি পোস্ট করতে পারেন উন্মুক্ত সৌন্দর্যের সূর্যাস্ত নিয়ে যা আপনি পাহাড়ে উঠতে উঠতে দেখতে পেয়েছিলেন। এমনকি এটিকে আরো প্রাণবন্ত দেখানোর জন্য প্রকৃত ছবিটিকে আপনি এডিটও করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে আপনি যেমনটা দেখেননি। আর এটাই হল সোশ্যাল মিডিয়ার আসল সত্য।

আমি আসলে যা বলতে চাচ্ছি। শুধু একবার টিকটক ফিল্টার গুলোর কথা চিন্তা করে দেখুন, এই অ্যাপটি এত সফল হওয়ার কারণ কি? কারণ তারা তাদের ব্যবহারকারীদেরকে এমন একটি সীমাহীন টুলকিট দেয়, যাতে তারা অন্যদের দেখানোর জন্য নিজেদের সবচেয়ে মজাদার এবং হটেস্ট সংস্করণটি তৈরি করতে পারে।

আগামীকালের আবহাওয়া কেমন থাকবে দেখতে চাই সরাসরি

সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিটি মানুষকে এসব ক্ষমতা দিয়েছে যে, তারা তাদের গল্পটি সেভাবেই উপস্থাপন করতে পারে যেভাবে তারা উপস্থাপন করতে চায়। এবং আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার জীবনযাত্রা আক্ষরিকভাবে এমন করে উপস্থাপন করতে চান যা অন্যদের কাছে দুর্দান্ত মনে হয়। এটি আমাদের বাস্তব জীবন সম্পর্কে আমাদের অবিশ্বাস্যভাবে নিরাপত্তাহীন করে তুলছে। এবং আমরা যতটা দেখাচ্ছি প্রকৃতপক্ষে আমরা ততটা খুশি নই। আমাদের অসম্পূর্ণ গল্প কে সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পূর্ণ মাত্রা দিয়ে এমনভাবে প্রকাশ করছি, যাতে অন্য আর একজনের জীবনকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করছে। অথবা অন্যের জীবনের অসম্পূর্ণ গল্পের সাথে নিজের জীবনের তুলনা করছি। আর এটি একটি নিজের চাওয়া পাওয়ার সাথে সীমাহীন নিরব যুদ্ধ যা কখনো শেষ হবার নয় এবং আপনি কখনো জিততে পারবেন না।

ইকো চেম্বার নামক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলা হয়েছে, শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয় অন্যান্য মিডিয়া ব্যবহারকারী সম্পর্কেও চিন্তার বিষয় রয়েছে। একটি অ্যাপ্লিকেশনের উদ্দেশ্য আপনাকে ম্যানুপুলেট করা। এবং আউটপুট হিসেবে এটা প্রদান করা আসলে আপনি আপনার নিজের সাথেও সংযুক্ত নন। আপনার ব্যবহার করা প্রতিটি অ্যাপ এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল সহজ। তারা কিভাবে আপনাকে যতক্ষণ সম্ভব ধরে রাখবে কারণ আপনার কাছ থেকে সবচেয়ে মূল্যবান যেটি সম্পদ তা হল আপনার ডাটা কালেক্ট করা। সেটা আমাজন হোক বা ফেসবুক। আমাজন চাইবে তাদের কাছ থেকে আপনি বেশি বেশি পণ্য কিনে নেন। এবং ফেসবুক চাইবে আপনাকে যত বেশি সম্ভব বিজ্ঞাপন দেখাতে। কেউই এটা চাইবে না যে আপনি এই সময়টাতে গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু চিন্তা করেন।

ই-পাসপোর্ট কি? জেনে নিন পাসপোর্ট করার নিয়ম এর সবকিছু

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *