শীতকালে ত্বকের যত্ন
|

শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন?

শীতকাল মানেই কাঁপুনি শুরু উহওও। কাঁপুনি যখনই শুরু হয় তখনই পোশাকের পরিবর্তন স্কার্ফ, সোয়েটার আরামদায়ক বলে মনে হয়। আপনি কি জানেন আপনার পোশাকের মতো আপনার ত্বকের যত্নের রুটিন পরিবর্তন হতে পারে? শীত শুরু হলে প্রথমে সেটাতো ত্বকই  বুঝতে পারে কারণ  ত্বক টানটান, খসখসে আর সাদা সাদা হয়ে যায় এর মানে হল ত্বকের রুটিন পরিবর্তন করার সময় এসেছে।  শীতকাল মানেই ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। শীতকালে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায় এবং প্রাণহীন, নির্জীব হয়ে পড়ে। এজন্য অবশ্যই শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

শীতকাল থেকে ত্বককে রক্ষা করতে হলে একটু অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে আর যত্ন না নিলে শীতকালে আবহাওয়ায় আপনার ত্বক ক্ষতিকর, অস্বস্তিকর এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। শীতকালে শুষ্ক ঠান্ডা বাতাস আপনার ত্বককে রুক্ষ থেকে শুরু করে হাত পা ফাটা, ঠোঁট ফাটা এবং মাথায় খুশকি এবং চুলের রুক্ষতা ও রয়েছে কারণ শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায় এবং বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের শুষ্ক ত্বক তাদের তো কথাই নেই কারণ শীতকালে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক ও খসখসে, চুলকানি এবং চর্ম রোগের সমস্যা হয়।আপনার ত্বকের সমস্যা দূর করতে হলে আপনাকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ত্বকের বিভিন্ন রকমের সমস্যা এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখতে শীতকালীন ত্বকের যত্নে আপনার দৈনন্দিন জীবনের কিছু সহজ পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে ত্বককে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।

গরমকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার ১০ টি টিপস জানতে ক্লিক করে পড়ে নিন

 

শীতকালে ত্বকের যত্ন

স্বাস্থ্যকর সুন্দর এবং উজ্জ্বল ত্বকের যত্নে কিছু সেরা টিপস দেয়া হলো। আপনার ত্বককে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এই টিপসগুলো আপনি ফলো করতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

শীতকালে ঠান্ডার কারণে আমরা বেশিরভাগ সময়ই পানি খাওয়ার কথা ভুলে যাই। এজন্য ত্বকের আদ্রতা অনেক কমে যায়। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শীতকালে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক এবং হাইড্রেট হয়ে যায় এজন্য পর্যাপ্ত পানি এবং লেবু চা অথবা আদা চা খেতে পারেন।  এতে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং ত্বক হাইড্রেট থাকবে।



হিউমিডিফায়ার ব্যবহার

শীতের এই শুষ্ক বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে এবং ত্বক অনেকশুষ্ক হয়ে যায়। এজন্য শীতকালে আপনার বাড়িতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করবেন। এতে আপনার ত্বককে আদ্র রাখতে সাহায্য করবে এবং পাশাপাশি গরম করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে হিউমিডিফায়ার এর তাপমাত্রা বেশি রাখা যাবে না তাপমাত্রার স্বাভাবিক রাখতে হবে।তখন আপনার  যা ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ করতে পারে।

 

অতিরিক্ত গরম পানি পরিহার করুন

শীতের দিনে বেশিরভাগ মানুষই প্রশান্তির জন্য গরম পানির ঝর্ণা তে গোসল করে বা গরম পানি ব্যবহার করে।গরম পানি আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কে দ্রুত সরিয়ে ফেলে এতে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়।এজন্য গরম পানিতে গোসল করা যাবে না। প্রতিদিন হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন এতে ত্বকের আর্দ্রতা স্বাভাবিক থাকবে এবং অতিরিক্ত শুষ্ক হবে না।

 

সুগন্ধি মুক্ত মৃদু ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ করুন 

যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক শীতকালে তাদের ত্বকের বেহাল অবস্থা হয়। এজন্য তাদের এ ক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে হবে।শীতকালে সবার জন্য সুগন্ধি মুক্ত মৃদু বা মাইল ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। ক্রিম বেইস ফেসওয়াশ ব্যবহারে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হবেনা। এতে ত্বক অনেক স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল হবে অতিরিক্ত শুষ্ক হবে না এবং উজ্জ্বল।

 

ঘনঘন মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন

গোসল করার সাথে সাথেই আপনি ত্বকে মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। শীতকালে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন সেটি হতে পারে ক্রিম অথবা লোশন।শুধু ত্বকের যত্ন নিলেই হবে না হাত পায়ের ও যত্ন নিতে হবে। শুধু মুখে ক্রিম লাগালে হবেনা হাত পায়ে লোশন ও লাগাতে হবে। মশ্চারাইজার আপনার ত্বকের আদ্রতা লক করতে সাহায্য করে। শীতকালে সবচাইতে প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে মশ্চারাইজার যা আপনার ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সাহায্য করে।

 

সানস্ক্রিম ব্যবহার করুন

সানস্ক্রিম ত্বকের যত্নে খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। অনেকে মনে করে যে শীতের দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা লাগেনা শুধু গরমে ব্যবহার করলে হয়। কিন্তু আমি বলব শীতের দিনে খুবই জরুরী একটি কাজ হচ্ছে মুখে সানস্ক্রিন লাগানো। কারণ শীতকালের রোদ ত্বকের জন্য অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।  শীতকালের রোদ অনেক প্রখর হয়। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের অনেক ক্ষতি করে এজন্য অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।SPF15 থেকেSPF 30 পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে বের হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।

 

অলিভ অয়েল ও নারিকেল তেলের ব্যবহার 

ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ও নারিকেল তেল খুবই উপকারী। শীতকালে আপনার ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এসব তেল আদ্রতা লক করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। আপনারা রাতে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অলিভ অয়েল অথবা নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।

 

গ্লিসারিন ব্যবহার

শীতকালে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গ্লিসারিন সর্বপ্রধান বলে মনে করা হয়। শীতকালে ত্বকের যত্নে গ্লিসারিন ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।গ্লিসারিন ত্বকের শুষ্কতা থেকে শুরু করে ত্বকের সব রকমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। গ্লিসারিন ব্যবহারের মৃতকোষ দূর হয়ে যায় এবং অনেক মসৃণ হয় ।   আপনি সকালে উঠে নিজেই অবাক হবেন ত্বকের উজ্জ্বলতা দেখে।

 

 সিরাম ব্যবহার 

ত্বকের যত্নে সিরাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে ত্বককে রক্ষা করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সিরাম ব্যবহার করতে হবে। আপনি অবশ্যই একটি ভালো মানের সিরাম নির্বাচন করুন। এতে আপনার ত্বকের আদ্রতা স্বাভাবিক থাকবে এবং ত্বক  স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আপনি দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার সিরাম ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সুগন্ধি মুক্ত সিরাম ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন এতে ত্বকের বিভিন্ন রকমের সমস্যা দূর হবে।

 

ঠোঁটের যত্ন 

শীতকালে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে কারণে ভোটের অবস্থা অনেক খারাপ হয়। এজন্য অবশ্যই ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে ঠোঁটে পেট্রেলিয়াম জেলি লাগাতে পারেন।তাছাড়া প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল অথবা নারকেল তেল ঠোঁটের যত্নে খুব উপকারি। ঠোঁট কখনো জিহবা দিয়ে ভেজাবেন না তাহলে ঠোঁট ফাটার সমস্যা আর বেড়ে যাবে। 


ত্বকের যত্নে কিছু ফেসপ্যাক

চালের গুঁড়া ও মধু

শীতকালে স্ক্রাব করা খুব জরুরি তবে বেশি স্ক্রাব করা যাবেনা। তাহলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাবে সপ্তাহে একবার স্ক্রাব করতে পারবেন। স্ক্রাব করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় এবং ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হয়। পরিমাণমতো চালের গুড়া এক চামচ মধু এবং এক চামচ দুধ একসাথে পেস্ট করে মুখে লাগাতে পারেন এবং 20 মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলতে ফেলবেন এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হবে।

 

চন্দন গুড়া ও মধু 

চন্দন গুঁড়া এবং মধু একসাথে পেস্ট করে মুখে লাগাতে পারেন এবং 15 থেকে 20 মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে ত্বক উজ্জ্বল এবং মসৃণ হবে। সপ্তাহে দুইবার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারবেন।

 

কলা মধু ও দুধ

অর্ধেক কলা একটা মধু এবং এক চামচ দুধ একসাথে মিশিয়ে মুখে গলায় এবং ঘাড়ে লাগাতে পারেন 20 থেকে 25 মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে ত্বকের শুষ্ক ভাব অনেক কমে যাবে এবং মুখের দাগ দূর হয় এবং ত্বক অনেক উজ্জ্বল হবে।

 

পাকা পেঁপে ও মধু

পাকা পেঁপে এবং মধু ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।পেঁপে এবং মধু একসাথে পেস্ট করে মুখে লাগাতে পারেন এবং 20 মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন। তারপর নিজেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। সপ্তাহে দুইবার এই প্যাক টি ব্যবহার করতে পারবেন।

 

অ্যালোভেরা জেল ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল

অ্যালোভেরা জেল এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন রাতে ঘুমানোর আগে এটি ব্যবহার করতে পারেন এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে এবং ত্বক অনেক মসৃণ হবে। 




যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক এবং শুষ্কতার ফলে ত্বক ফাটার সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত ফাটার কারণে ত্বক থেকে রক্ত বের হয় তাঁদের জন্য অবশ্যই চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *