সহজে উকুন দূর করার ঘরোয়া উপায়
উকুন হল ক্ষুদ্র পোকা যা মানুষের রক্ত খায়। প্রাপ্তবয়স্ক উকুন দুই থেকে তিন মিলিমিটার লম্বা হয়। সাধারণত উকুন মাথার চুলে হয়। স্ত্রী উকুন একটি আঠালো পদার্থ তৈরি করে যা ডিমকে চুলের গোড়ায় এবং মাথার ত্বক থেকে ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত সংযুক্ত করে।বর্তমানে খুব সহজেই উকুন দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। উকুন হলে মাথায় খুব অসহ্য চুলকানি শুরু হয় যা সহ্য করা খুব কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাই উকুন থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
উকুন তিন ধরনের রয়েছে, যথাঃ
- ডিমঃ সাধারণতঃ ৬ থেকে ৯ দিন পর ডিম ফুটে।
- নিম্ফসঃ ৯ থেকে ১২ দিন পর প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে বিকশিত হয়।
- প্রাপ্তবয়স্ক উকুনঃ তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকে। স্ত্রী উকুন দিনে ৬ থেকে ১০ টি ডিম পাড়ে।
উকুন দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ
নিচে উকুন দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় বা পদ্ধতি দেয়া হল। উকুন দূর করতে হলে অবশ্যই আপনারা এ গুলো ট্রাই করতে পারেন। এতে উকুন থেকে অবশ্যই মুক্তি পাওয়া যাবে।
প্রাকৃতিক উপায়
চুল ভিজিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে উকুন নির্মূল করা সম্ভব। এই উপায়ে উকুন দূর করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এই দুই সপ্তাহে মোট চারবার চুল ভিজিয়ে উকুনের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হয়। মোট চার দিন চুল আঁচড়ানো দিনগুলো হলো,
- প্রথম দিন
- পঞ্চম দিন
- নবম দিন এবং
- ১৩ তম দিন
অর্থাৎ প্রতিবার চুল আঁচড়ানোর মাঝে তিনদিনের গ্যাস থাকবে। উকুন দূর করার জন্য আমরা অনেকেই উকুনের চিরুনি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আঁচড়ানোর কিছুদিন পর আবার দেখা যায় উকুনে মাথা ভরে গেছে। কিন্তু কেন এমন হয়? উকুনের চিরুনি দিয়ে চুল আচরালে বড় উকুনগুলো পড়ে যায়। কিন্তু সেই উকুনগুলোর যে ডিম পাড়ে রেখেছে কিন্তু সেগুলো তো চুলেই থেকে যায়। এই ডিমগুলো ফুটে বের হতে প্রায় সাত দিনের মতো সময় লাগে। আবার বাচ্চাগুলো প্রায় সাত দিনের মধ্যে বড় হয়ে আবার নতুন করে ডিম পাড়া শুরু করে। এভাবে মাথা আবার উকুনে ভরে যায়।
এই চক্রটা ভাঙতে আমরা ১,৫,৯,১৩ এই উপায়ে ব্যবহার করে মোট চারবার ভেজা চুলে মাথা আঁচড়াতে হবে। এতে করে উকুনের ডিম, বাচ্চা উকুন, বড় উকুন একেবারে সব দূর হয়ে যাবে। কি দিয়ে চুল ভিজাবেন? চুলে ভালো করে তেল দিয়ে তারপর আঁচড়াতে পারেন কিংবা পানি দিয়ে চুল আঁচড়াতে পারেন।ভেজা চুলে উকুন কম নড়াচড়া করতে পারে ফলে সহজেই চিরুনি দিয়ে এনে ফেলা যায়। প্রতিবার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর থেকে থেকে উকুন সরিয়ে নিতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে উকুন মারার ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকরী। তাই একটু কষ্ট হলেও এটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এতে দুই সপ্তাহের মধ্যে উকুন দূর করা সম্ভব।
উকুন মারার ঔষধ ব্যবহার
উকুন দূর করার ঔষধ রয়েছে। যেই ওষুধটা আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসিতে গিয়ে নিজে নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। বাজারে কিনতে পারেন বাংলাদেশ Alice অথবা Licnil দাম ১৩০ থেকে ২০০ টাকার মত. যারা ভারত কিংবা আমেরিকা থেকে কিনবেন. ভারত Iver Shine Lotion অথবা Ivera Shampoo আমেরিকা Sklice আপনারা এই নামে ওষুধ টা কিনতে পাবেন।
ব্যবহারবিধিঃ
৬ মাস বয়সী বাচ্চা থেকে সবাই এটা ব্যবহার করতে পারবেন। মাথা শুকনো অবস্থায় প্রথমে এটা মাথার তালুতে ব্যবহার করবেন। তারপর চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে এই ঔষধটি লাগাতে হবে। তারপর ঘড়ি ধরে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ২৪ ঘন্টা পর মাথা শ্যাম্পু করতে পারেন। সাধারণত এই ওষুধ লাগালে সব উকুন মারা যায়। উকুন মারার জন্য এটা খুব নিরাপদ ঔষধ। তবে যারা গর্ভবতী কিংবা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা এই ওষুধ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
এই ওষুধ ব্যবহারে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, খুশকি হওয়া, মাথা জ্বালাপোড়া করা এবং চোখে গেলে চোখ জ্বালা করে সেজন্য চোখে যেন না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা এবংচোখ গেলে চোখ পানিতে ধুয়ে ফেলা।
ভেষজ উপায়
রসুন, আপেল সিডার ভিনেগার, নিমের তেল, অলিভ অয়েল এসব ভেষজ উপায়ে দিয়ে উকুন দূর করা যায় তার শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। তবুও অনেকে বলেন এসব দিয়ে কাজ হয়। তবে এই তিন নম্বর পদ্ধতি বেছে না নিয়ে আপনি এক কিংবা দুই নম্বর পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। এতে আপনার উকুন অবশ্যই দ্রুত দূর হবে।